Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ২রা মে ২০২৪, ১৯শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

জোনভিত্তিক লকডাউন যেভাবে চলবে

প্রকাশিত: ৯ জুন ২০২০, ০৪:৫২

আজহার মাহমুদ: জোনভিত্তিক লকডাউন। ধারণাটি খুবই নতুন। সারা দুনিয়ায় দেশ ভিত্তিক ও এলাকা ভিত্তিক চলছে লকডাউন। কিন্তু এবারই প্রথম দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলবে জোনভিত্তিক লকডাউন। তবে আশা করা যাচ্ছে এর ভিন্নতা আর গাইডলাইন পালন করতে পারলে মানুষ হবে উপকৃত। ছড়াবেনা এই মরণঘাতি ভাইরাসের ছোবল। এর ভয়াল ছোবলে লাখ লাখ বনি আদম আজ দুনিয়ায় বেঁচে নেই। এর থাবায় আক্রান্ত হয়েছে পৌনে এক কোটি মানুষ। এর ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে প্রাথমিক ভাবে রাজধানী ঢাকাকে কোভিড-১৯ এর মাত্রা বিবেচনায় ৩টি জোনে ভাগ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন জেলাতেও চলবে এই কার্যক্রম। এই ৩টি জোন হলো রেড, ইয়েলো ও গ্রীনজোন। অর্থাৎ জোন ভিত্তিক চলবে এই লকডাউন।

তবে প্রশ্ন থেকেই যায় এর আগেও ছিলো বিভিন্ন জেলায় লকডাউন। কিন্ত জনগণ তেমন কোন সুফল পায়নি। ছিল না কোন গাইডলাইন। যে কারণে যে যার মতো চলাফেরা করতো। জানা গেছে বিভিন্ন দেশের লকডাউন থেকে বিভিন্ন তথ্য নিয়ে এবার বাংলাদেশে ব্যতিক্রমি লকডাউন ঘোষণা করতে যাচ্ছে সরকার।তবে এই অবস্থায় কি করণীয়, কি বর্জনীয় এ নিয়ে রয়েছে নানান বিতর্ক।

তবে এখন চলবে নতুন ও এক ভিন্ন মাত্রা। সংশ্লিস্ট এলাকায় যান চলাচল বন্ধ থাকবে। জানা গেছে রাতে চলবে মালবাহী যান। একই ভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জন্য ব্যবস্থা করা হচ্ছে হোম ডেলিভারি। কোথাও ভ্যানে করে কাঁচাবাজার করার সুযোগ। সেই রেড জোনের অফিস-আদালত বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও সাধারণত বন্ধ থাকবে। খুব প্রয়োজনে চললেও তা হবে খুবই নিয়ন্ত্রিতভাবে। অন্যদিকে করোনাভাইরাসের পরীক্ষার জন্য থাকবে প্রয়োজনীয়সংখ্যক নমুনা সংগ্রহ বুথ। থাকবে চিকিৎসার নানান ধরনের ব্যবস্থা।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম গাইডলাইন তৈরির বিষয়ে বলেন, এখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এলাকা চিহ্নিত করে দেওয়া হলেই লকডাউন বাস্তবায়িত করা হবে। আমরা সব ধরনের বিষয় নিয়ে কাজ করছি। জনগনের উন্নয়নে সব কিছুই করছে সরকার। এদিকে জানা গেছে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধিসহ স্থানীয় লোকজনকে সম্পৃক্ত করে কমিটি গঠনের মাধ্যমে লকডাউন চলবে। রেড, ইয়েলো ও গ্রীন জোন কীভাবে চলবে, তা ঠিক করা হয়েছে সরকারী সেই গাইডলাইনে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় সূত্র জানায় রেড, ইয়েলো ও গ্রীন জোন ভাগ করে সোমবার রাত অথবা মঙ্গলবার থেকে রাজধানীতে শুরু হতে যাচ্ছে জোনভিত্তিক লকডাউন। এই নতুন নিয়মের প্রথম বারের মতো স্থান পাচ্ছে উত্তর সিটি করপোরেশনের এ্কটি বিশেষ এলাকা। এই এলাকায় সংক্রামন খুবই বেশী। এলাকাটি হলো পূর্ব রাজা বাজার। এই এলাকাকে এখন রেড জোন ঘোষণা করে শুরু হচ্ছে লকডাউন।

সচেতনতায় ভিন্ন মাত্রা:

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মিডিয়া সেলের প্রধান ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান জানান, রেড, ইয়েলো ও গ্রীন এই তিন ধরনের জোন চিহ্নিতকরণের কাজটি বিশেষজ্ঞরা করছেন। তারা এনিয়ে দেশ বিদেশের বিভিন্ন আইডিয়া কাজে লাগাচ্ছেন। তাদের গাইডলাইনের পরেই সরকার তা কার্যকর করবে।

জানা গেছে মরণঘাতি করোনা আক্রান্ত রেড জোনে কেউ গেলে বা করোনা পজেটিভ রোগীর কাছে গেলে মোবাইলে ‘পুশ অ্যালার্ম’ স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু করতে যাচ্ছে সরকার। রেড বা ইয়েলো জোন বিষয়ে রেডিও, টেলিভিশন, অনলাইন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মসজিদ থেকেও সতর্কীকরণ বার্তা ও বিভিন্ন নির্দেশনা প্রচারের ব্যবস্থা থাকছে।

নিয়ম-কানুন:

সরকার মানুষের নানান সমস্যা নিয়েও ভাবছে। তাদের কি কি সমস্যা হতে পারে সে দিকেও রয়েছে নজর। একারণে রেড জোন এলাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর সরবরাহের জন্যে থাকবে হোম ডেলিভারি। রেড ও ইয়েলো জোনে বন্ধ থাকবে নামী-দামী শপিং সেন্টার। কিন্ত ইয়েলো ও গ্রীন জোনে মুদি ও ফার্মেসী চালুর ব্যবস্থাও থাকবে। তবে রেড জোনে বাস ও সাধারণ পরিবহন চলাচল করবে না। তবে রাতে মালবাহী যান চলবে বলেও ওই গাইডলাইনে বলা হয়েছে।

এদিকে ইয়োলো জোনে গাইডলাইন অনুযায়ী গণপরিবহন চলতে পারবে। একজন করে যাত্রী নিয়ে রিকশা ও অটোরিকশাও চলতে পারবে বলে জানাগেছে। মালবাহী যানও চলবে। আর গ্রীন এলাকায় তো অনেকটা স্বাভাবিক থাকবে। এছাড়া রেড জোনে ধর্মীয় ইবাদত খানায় সাধারণের প্রবেশে থাকবে নিষেধ। অন্যদিকে ইয়েলো ও গ্রান জোনে দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করা যাবে ও ইবাদাত করা যাবে।

গাইড লাইনে আরো থাকবে রেড ও ইয়েলো জোনে অবাধ যাতায়াত বন্ধের জন্য সড়ক ও গলির মুখ বন্ধ করে দেয়া হবে। তাছাড়া এই সংক্রামন থেকে বাঁচতে পাড়া, মহল্লা ও চায়ের দোকানসহ আড্ডাস্থল বন্ধ থাকবে। গাইডলাইনে বলা হয়েছে লকডাউন এলাকায় বস্তি বা খুবই গরীব থাকলে দুই সপ্তাহের খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এই দায়িত্ব নিবে সংশ্লিস্ট কমিটি।

যেভাবে চলবে জোনের লোকজন:

সরকারের ওই গাইডলাইনে বলা হয়েছে, মেয়রের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা কমিটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিহ্নিত করা এলাকাভিত্তিক জোন থেকে অগ্রাধিকার ও পারিপার্শ্বিক সক্ষমতা বিবেচনা করে জোন বাছাই করবে। ওয়ার্ড কাউন্সিলারের নেতৃত্বে করা কমিটি লকডাউন বাস্তবায়ন করবে বলেও জানা গেছে।

সংশ্লিস্ট একাধিক সূত্রে জানাগেছে সরকারের এটুআই প্রকল্পের তথ্য বিচার-বিশ্লেষণ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রেড, ইয়েলো ও গ্রীন জোন চিহ্নিত করছে। রেড জোনে মানুষের চলাচল নিষিদ্ধ থাকবে। আর ইয়েলো জোনে অফিস, কারখানা, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ-শিল্পে ৫০ শতাংশ কর্মী দিয়ে চালু রাখতে বলা হবে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয়, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানাকে জানাতে হবে। তবে এসব জোনে সকল ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হবে।

ভ্রাম্যমাণ আদালত চালু:

এই আদালতের খুবই প্রয়োজন। কারণ মানুষ আইন মানতে চায় না। তাই কয়েকজনের শাস্তি হলে অনেকেই সতর্ক হয়ে যাবে। রেড ও ইয়োলে জোনে কোভিড-১৯ এ পজেটিভ ব্যক্তিদের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কঠোর ভূমিকা পালন করবে। পুলিশের টহলও অব্যাহত থাকবে। গাইডলাইন ও আইন অমান্যকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রেড ও ইয়েলো জোনে থাকবে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এছাড়া প্রয়োজনে লকডাউন এলাকায় করোনা রোগীদের সরকারআইসোলেশনের ব্যবস্থা করবে। যাতে টেলিফোনের মাধ্যমেও চিকিৎসা পরামর্শ পেতে পারেন, সে জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রতিটি রেড ও ইয়েলো জোনে একটি চিকিৎসক ‘পুল’ প্রস্তুত রাখবে। জানাগেছে চিকিৎসক পুলে মনোবিজ্ঞানী রাখার চেষ্টা চলবে। সরকারী এসব গাইডলাইন বাস্তবায়নের সকল পর্যায়ের জনগনকে অনুরোধ জানানো হবে।
লকডাউন এলাকায় কোন রোগী মারা গেলে ‘আল মারকাজুল ইসলাম, আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম বা এই ধরনের কাজে নিয়োজিত সংস্থার মাধ্যমে দাফন বা সৎকার করা হবে। যে যার ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে।

ঢাকা, ০৮ জুন (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এআইটি


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ