Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ২রা মে ২০২৪, ১৯শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

আম্ফান: কয়রা পানির তলে, ঝুঁকিতে ১৮৮৩ অন্তঃসত্ত্বা নারী

প্রকাশিত: ৯ জুন ২০২০, ০০:১৬

মো: ইকবাল হোসেন, খুলনা (কয়রা): দেশের দক্ষিণাঞ্চল খুলনার কয়রা উপজেলা ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে নোনা পানিতে ১ হাজার ৮৮৩ জন অন্তঃসত্ত্বা নারী ও প্রায় ২০ হাজার শিশু তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন। প্রয়োজনীয় খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসার অভাবে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে অতি মানবেতর জীবন যাপন করছে এসকল গর্ভবতী মা ও শিশুরা। স্বাস্থ্য বিভাগের বলছে, মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সেবা, নিয়মিত পরীক্ষা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ সহ টিকা দেয়ার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের সেবা কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

কয়রার উত্তর বেদকাশীর হাজতখালী এলাকার ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা রাবেয়া খাতুন ভুগছেন রক্ত শূন্যতায়। নাই মাথা গোঁজার ঠাই, প্রয়োজনীয় খাদ্য ও ঔষধ সামগ্রী। রাবেয়া বলেন, ‘নোনা পানিতে ঘরবাড়ি হারিয়ে বেড়িবাঁধের ওপর খুপরি ঘরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে আছি। কোনো রকমে দিনে একবেলা খেয়ে বেঁচে রয়েছি, অনাগত সন্তানের জন্য। ডাক্তার রক্ত নিতে বললেও রক্ত সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না।

ঘরবাড়ি হারিয়ে দিশেহারা ১নং কয়রা পায়রাতলা আইট বাসিন্দা সুফিয়া খাতুন বলেন, ২০০৯ সালের আইলায় ক্ষতের দাগ শুকাতে না শুকাতে আম্পান বেঁচে থাকার শেষ আশ্রয়টুকুও কেড়ে নিলো। ছেলে-মেয়ে নিয়ে অতিকষ্টে নোনা পানিতে বেঁচে আছি।

কয়রার বাস্তব চিত্র

 

কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সুদীপ বালা ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, এ উপজেলায় ১ হাজার ৮৮৩ জন গর্ভবতী মা এবং শূণ্য (০) থেকে ৫ বছর বয়সী প্রায় ২০ হাজার শিশু রয়েছে। কাদা পানি উপেক্ষা করে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা সহ সেবা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করছে স্বাস্থ্যকর্মীরা।

এদিকে নদীর রিংবাঁধ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে গত ২ জুন থেকে আবারও প্লাবিত হয়েছে সদর উপজেলা। নোনা পানিতে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, রিংবাঁধ পুন:মেরামত ও সংস্থার না করায় বাঁধগুলো ভেঙে আবারো কয়রাবাসী নোনা পানিতে ডুবে গেছে।

কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, উপজেলা সদর এখন পানিতে থই থই করছে। খাবার সংকট আর লবণ পানির চাপ সামলাতে মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। বাঁধ আটকে দিয়ে স্বস্তি পাওয়া মানুষগুলো জোয়ারের পানিতে তলিয়ে, চরম উদ্বিগ্নতায় দিন কাটাচ্ছে। সাধারণ জনগণের স্বেচ্ছাশ্রম বিফলে গেলো বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, স্থানীয়রা পানি আটকাতে যথাসম্ভব চেষ্টা করছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ একটু সহযোগিতা করলে এ বাঁধ টেকানো সম্ভব ছিল। কিন্তু তাদের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের উদাসীনতার কারণে তা সম্ভব হয়নি।

কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, জনগণ বেঁচে থাকার তাগিদে নিজ উদ্যোগে কয়রার বাঁধ নির্মাণ করে। কিন্তু সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। পাউবো কর্মকর্তাদের অনুরোধ করেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। তারা গুরুত্ব না দেয়ায় বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকছে এলাকায়।’

তিনি আরো বলেন, ‘একদিকে মানুষ খাবারের কষ্ট পাচ্ছে। অন্যদিকে নোনা পানির কারণে দিনকে দিন ভোগান্তি বাড়ছেই। গরিব সাধারণ মানুষ কতদিন এভাবে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করতে পারে?’

কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিমুল কুমার সাহা ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, টেকসই বাঁধ নির্মাণের জন্য ঊধ্বর্তন কতৃপক্ষকে জানিয়েছি। মানুষের ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদনও পাঠানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, নোনা পানির দূর্যোগকালীন মুহূর্তে শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

কয়রা-পাইকগাছা ৬ আসনের এমপি আলহাজ্ব আখতারুজ্জামান বাবু ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, কয়রায় নোনা পানিতে ডুবন্ত মানুষের নোনা পানির অভিশাপ মুক্ত করতে আমি নিরলসভাবে কাজ করছি। আশা করি, আগামী অক্টোবরের মধ্যে কয়রায় স্থায়ী টেকসই বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

উল্লেখ্য, আম্পানে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে কয়রা উপজেলার প্রায় ৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ৫০ কোটি টাকারও বেশি সাদা ও চিংড়ি মাছ নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষ। এ অবস্থায় স্বেচ্ছাশ্রমে গত দুই সপ্তাহ ধরে বেড়িবাঁধ মেরামত করলেও গত বুধবার রাতে কয়েকটি বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যায় সদর উপজেলা।

ঢাকা, ০৮ জুন (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমজেড


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ