Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | সোমবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৪, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

‘পায়েল নেই তাই কোরবানী দেইনি, শোকে কেটেছে ঈদ’

প্রকাশিত: ২৬ আগষ্ট ২০১৮, ০২:১৭

মৃদুল ব্যানার্জি, চট্রগ্রাম : ‘আর কদিন বাদেই বাড়ি আসছি মা। অপেক্ষা করো বাড়ি এলে কোরবানীর গরু কিনবে।’ শেষবার যখন বাড়ি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন এভাবেই মাকে কথাগুলো বলেছিলেন পায়েল। কোরবানীর ঈদ চলে গেছে, কিন্তু তাদের গরু কেনা হয়নি। কারণ সবাই আছে, নেই শুধু পায়েল। আদরের এই ছেলেটি ছাড়াই তাদের ঈদ করতে হয়েছে। তাই কোরবানী কেনা হয়নি। খাওয়া হয়নি কোন গোশত। নিরানন্দে কেটেছে ঈদ।

নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্র পায়েলের মা কোহিনূর বেগম ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, ‘ঢাকা যাওয়ার আগের দিন আমাকে কোরবানীর গরুর জন্য বাজেট কত জিজ্ঞেস করেছিল পায়েল। বলেছিল সে এলে যাতে কেনা হয় গরু। সেভাবেই প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু তার আগেই সবকিছু্ই যেন তছনছ হয়ে গেছে। ভেঙ্গে গেছে পরিবারের রঙিন স্বপ্ন।

ঈদের তিনদিন আগে চলে আসবে বলেছিল পায়েল। কিন্তু আমার ছেলে তো আর এলো না। আমি এখন কারে নিয়ে ঈদ করব। কার জন্য গরু কিনব। এসব বলে কোহিনূর বেগম যখন বিলাপ করছিলেন তখন পাশে ছিলেন পায়েলের বাবা গোলাম মোস্তফা। তিনি বলেন, ‘পায়েল না থাকায় আমাদের কারোই এবার ঈদ নেই। আমরা কোনো গরু কিনিনি। বাসায় রান্নাও করা হয়নি কোনো মাংস।’

পায়েলের স্মৃতিগুলো দেখছেন বাবা-মা

পায়েলদের বাড়ির নাম ‘সোমা মঞ্জিল’। চট্টগ্রামের হালিশহর আই ব্লক আবাসিক এলাকার ১৩ নম্বর লেইনের একেবারে শেষের বাড়ি এটি। এ বাড়িরই চতুর্থ তলায় সপরিবার থাকতেন সাইদুর রহমান পায়েল। ঢাকায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ পঞ্চম সেমিস্টারে পড়তেন তিনি। পড়াশোনার সুবাদে ঢাকা থাকলেও এ বাড়িতেই ঈদ করার কথা ছিল তার।

গত মাসে ঢাকা যাওয়ার আগে মা কোহিনূর বেগমকে পায়েল বলেছিলেন তিনি এলে যাতে কেনা হয় কোরবানীর গরু। কিন্তু চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে হানিফ পরিবহনের চালক, হেলপার ও সুপারভাইজারের নির্মমতায় গত ২২ জুলাই প্রাণ হারান পায়েল। এ মাসে ঈদও হলো সেই ২২ তারিখে।

পুত্রকে হারানোর এক মাস পূর্ণ হওয়ার দিন ঈদ হওয়ায় পায়েলের পরিবারে এই দিনটি এসেছে শোকের বার্তা নিয়ে। ছেলের শোকে এবার আর গরুই কেনা হয়নি পায়েলদের। ঈদের দিন তাদের ঘরে রান্না হয়নি কোনো মাংসও।

ঘাতক..জনি

 

চট্টগ্রাম শহরের বাসায় ছোট্ট একটি কক্ষ আছে পায়েলের। সেই কক্ষে আছে একটি ওয়ারড্রপ। তিন তাকের এ ওয়ারড্রপের প্রতিটিতেই কাপড় রাখতেন তিনি। একেবারে শেষের ড্রয়ারটিতে রাখতেন প্যান্ট ও শার্ট।

এক মাস আগে হানিফ পরিবহনের চালক, হেলপার ও সুপারভাইজার নির্মমভাবে পায়েলকে খুন করলেও বাসার সেই ওয়ারড্রপে এখনো থরে থরে সাজানো আছে তার জামা কাপড়। তার পড়ার টেবিলে গোছানো আছে বইও। পায়েলের মা কোহিনূর বেগম ও বাবা গোলাম মাওলার শোক বাড়াচ্ছে এসব কাপড় ও বই। মা-বাবার সঙ্গে থাকা ছবিও কষ্ট বাড়াচ্ছে তাদের। স্বজনরা এগুলোর মাঝে খুঁজছেন পায়েলকে।

পায়েলের বড় ভাই গোলাম মোস্তফা পলাশ ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, ‘পায়েলের ইচ্ছে ছিল অস্ট্রেলিয়া থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নেবে সে। কিন্তু তার সেই ইচ্ছে আর পূরণ হলো না।’

পায়েলের বড় মামা গোলাম সোহরাওয়ার্দী বিপ্লব ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, ‘তিন আসামির দুজন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। কিন্তু হত্যার এক মাস পরেও কেন অভিযোগপত্র হয়নি চাঞ্চল্যকর এ মামলার?’ এমন প্রশ্ন তার।

পায়েলের সেজ মামা গোলাম রাসেল চৌধুরী ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, ‘প্রত্যেক ঈদে চট্টগ্রামে আসলে আত্মীয়-স্বজন সবার সাথে দেখা করতো পায়েল। এবার সে না থাকায় আমাদের মনে কোনো ঈদ ছিল না।’

এখন কেবল স্মৃতি...

ছোট মামা ফাহাদ চৌধুরী দিপু ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ‘পায়েলের খুনিদের দ্রুতবিচার আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি চাই আমরা। শিগগির এ মামলার চার্জশিট না হলে ফের আন্দোলনে যাব আমরা। কষ্ট ভুলতে প্রধানমন্ত্রীরও সাক্ষাৎ চাই আমরা।’

উল্লেখ্য, গত ২১ জুলাই হানিফ পরিবহনের একটি বাসে করে রাতে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যাচ্ছিলেন পায়েল। ২২ জুলাই ভোরে প্রস্রাব করার কথা বলে গাড়ি থেকে নামেন তিনি। এরপর আবার গাড়িতে উঠতে গেলে দরজার সঙ্গে ধাক্কা লেগে আহত হন তিনি।

এরপর ‘দায় এড়াতে’ আহত পায়েলের মুখ থেতলে দেয় হানিফ পরিবহনের সুপারভাইজার জনি, চালক জামাল হোসেন ও তার সহকারী ফয়সাল হোসেন। পায়েলকে হত্যা করে লাশ ফেলে দেয়া হয় নদীতে। যে গাড়িতে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যাচ্ছিলেন পায়েল সেই গাড়িরই স্টাফরা কোনো কারণ ছাড়াই এমন নির্মমভাবে খুন করে তাকে। পরে তার লাশ উদ্ধার করা হলে চাঞ্চল্যকর ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা প্রকাশ পায়। কিন্তু সেই বিচারের বাণী নিরবে কাঁদছে।

 

ঢাকা, ২৫ আগস্ট (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এজেড


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ