Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শুক্রবার, ১৭ই মে ২০২৪, ৩রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

ইবির শিক্ষার্থীরা কেন বেছে নিচ্ছে আত্মহননের পথ!

প্রকাশিত: ১৩ আগষ্ট ২০১৮, ০৫:২৩

রায়হান মাহবুব, ইবি: দিন দিন বেড়েই চলেছে আত্নহত্যার প্রবণতা। নানা কারণে এই অনাহুত পথে পা রাখছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। কখনও সামান্য কিছু ঘটনায় তারা আবেগ প্রবণ হয়ে পড়ছে। রেগে ও ক্ষোভে কখনও বা বিশেষ আকর্ষণে তারা আত্নহননের সড়কে জীবন বিলিয়ে দিচ্ছে। গত কিছুদিন ধরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীদের মাঝে এই ঝোক ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে তারা প্রেম ও বিরহের জালে জড়িয়ে নিজেরাই আবেগ ত্বাড়িত হয়ে এই ভয়ঙ্কর পথ বেচে নিচ্ছে।  
 
ইবিতে দিন দিন বেড়েই চলেছে শিক্ষার্থীদের আত্মহননের ঘটনা। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ( ৯ আগস্ট) দুই শিক্ষার্থীর আত্মহননের মধ্যদিয়ে গত দুই বছরে চার শিক্ষার্থী চলে গেল না ফেরার দেশে। পারিবারিক ও সামাজিক অসচেতনতা, পারিবারিক অশান্তি, মানসিক বিষন্নতা, একাকিত্বতা, নৈতিকতার অভাব ও প্রেমজনিত কারণে এমন ঘটনা ঘটছে বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
 
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (৯ আগস্ট) মাত্র দুই ঘন্টার ব্যবধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী মুমতাহেনা আফরোজ গলায় ফাঁস দিয়ে এবং তার সহপাঠী রোকনুজ্জামান ট্রেনের নিচে লাফ দিয়ে পাড়ি জমায় অচিনপুরে। 
 
জানা যায়, রোকনুজ্জামান ও মুমতাহেনার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। হেনার পরিবার তাকে বিয়ে দেয়ার জন্য চাপ দেয়। তাদের প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি পরিবারকে জানালে তারা মেনে নিতে রাজি হয়নি। এছাড়াও তাদের আত্মহত্যার কয়েকদিন আগ থেকে দুজনের মধ্যে মনমালিন্য চলছিল বলে জানা যায়। 
 
 
ফলে ঐ দিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় ঝিনাইদহ শহরের ঝিনুক টাওয়ারের পঞ্চম তলার একটি কক্ষে ফ্যানের সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে হেনা। এরপর মাত্র দুই ঘন্টার ব্যবধানে রাত সাড়ে আটটায় প্রেমিকার আত্মহত্যার খবর শুনে প্রেমিক রোকনুজ্জামান কুষ্টিয়া শহরের মতি মিয়া রেল গেটে ট্রেনের নিচে লাফ দিলে কাটা পড়ে মারা যায়। রোকনুজ্জামান প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে স্নাতক সম্মান শেষ করেছেন। হেনাও প্রথম শ্রেণীতে সম্মান শেষ করেন। 
 
চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিকাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সাইমুজ্জামান খান সাইম ক্যাম্পাসের পার্শবর্তী এক মেসে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। জানা যায়, প্রেমিকার প্রতি অভিমান করে চিরকুট লিখে সে আত্মহত্যার মতো দু:সাহসিক ঘটনা ঘটায়।
 
২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন ও রাষ্ট্রনীতি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান আতিক কুষ্টিয়া শহরের কাস্টম মোড় এলাকার এক মেসে ফ্যানের সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। জানা  যায়, আত্মহত্যার আগে তিনি তার অসুস্থতার কথা চিরকুটে লিখে সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার পথে পাড়ি জমান।
 
এদিকে কয়েক মাস যেতে না যেতেই একেক শিক্ষার্থী ও সহপাঠীদের অকাল মৃত্যুতে বর্তমানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। গত বৃহস্পতিবার  দুই মেধাবী শিক্ষার্থীর অকাল মৃত্যুতে যৌথভাবে পাঠানো এক শোকবার্তায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী, প্রো ভিসি অধ্যাপক ড. শাহিনুর রহমান  ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সেলিম তোহা গভীর শোক  প্রকাশ করেন। তারা শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। 
 
আইন ও শরিয়াহ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. রেবা মন্ডল ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, আমাদের দেশে আত্মহত্যা একটি অপরাধ। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০১০ (সংশোধিত) অনুযায়ী, আত্মহত্যায় প্রচারণাকারীকেও কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। 
 
তিনি বলেন, আত্মহত্যার প্রবনতা কমাতে হলে প্রয়োজন পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা। মানসিক সমস্যাজনিত কারনেও এমন দূর্ঘটনা ঘটে। আমাদের রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেলসহ বিভিন্ন সভা-সেমিনারের মাধ্যমে এ ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে তবেই না আত্মহত্যার প্রবনতা কমানো সম্ভব।
 
 
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. শাহিনুর রহমান বলেন, আমরা ইতোমধ্যে কাউন্সিলিং সেন্টার খুলেছি। যেটা ছাত্র উপদেষ্টা দেখভাল করছেন। এই সেন্টারে  কয়েকজন মনোবিজ্ঞানী থাকবেন। শিক্ষার্থীরা তাদের যেকোন সমস্যার কথা তাদের কাছে তুলে ধরবেন। তারা এ ব্যাপারে পরামর্শ দিবেন। 
 
বিভাগের শিক্ষকদেরও পাঠদানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের উৎসাহদানে বিভিন্ন মোটিভেশনাল বক্তব্যদানের  ব্যাপারেও কথা বলেন তিনি।
 
শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার ব্যাপারে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর আব্দুল হাকিম ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, আজকাল অনেক শিক্ষার্থী নীতি নৈতিকতার ধার ধারেনা। আধুনিকতা ও অবাধ মেলামেশার প্রতি তাদের ঝোক বেশী। ফলে তাদের আসক্তি বেড়ে যাচ্ছে অস্বাভাবিক ভাবে।
 
তিনি আরও বলেন, তারা ক্রমেই হয়ে উঠছে আবেগপ্রবণ ও সেচ্ছাচারী। মন মানসিকতার সমন্বয়হীনতার ফলে একধরণের অনৈতিক ও অস্বাভাবিক আবেগপ্রবণ তাদের মাঝে কাজ করে। ফলে প্রেম ও ভালবাসায় বাধা পেলেই রেগে যায়। সহজেই নিজের অবস্থান ভুলে গিয়ে সিদ্ধান্ত নেয় আত্মহত্যার মতো প্রাণঘাতী পথ। 
 
বর্তমান অশ্লীল সভ্যতা ও আকাশ সংস্কৃতির অস্বাভাবিক প্রভাবের ফলে শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রেম বিরহ ও আত্মহত্যার প্রতি আসক্তি বাড়ছে। তাদেরকে সুস্থ,স্বাভাবিক ও নৈতিক জীবন যাপনের প্রতি আগ্রহী করে গড়ে তুলতে হবে নিজস্ব পরিবারের বলয় থেকে। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাউন্সিলিং, পরিবারের তত্ত্বাবধান ও নজরদারিও বাড়তে হবে।
 
 
 
 
ঢাকা, ১২ আগস্ট (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমআই

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ