Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | রবিবার, ১২ই মে ২০২৪, ২৯শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

রাবি প্রফেসরের ছেলে: ‘যে কথা বলা হয়নি’

প্রকাশিত: ২৮ সেপ্টেম্বার ২০১৬, ১০:২৭


রাবি লাইভ: আয়মান সোয়াদ আহমেদ। শান্ত। ভদ্র। লাজুকও বটে। কিন্তু মায়ের আত্মহত্যার পর নিরবতা তাকে আরও গ্রাস করে। সোয়াদের মা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর আকতার জাহান জলি। ১৭দিন আগে তিনি অভিমান করে আত্মহত্যা করেছেন। তার একমাত্র ছেলে ১৭দিনেও মুখ খুলেনি।

এবার মুখ খুলতে শুরু করেছে সোয়াদ। বলেছে আমার বাবা আমার মাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। সুইসাইড নোটে মায়ের বলে যাওয়া কথার সত্যতা নিশ্চিত করে নিজের গলায় ছুরি ধরা এবং তার মা জলিকেও মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল তার বাবা তানভীর আহমদের এমন কথা জানিয়েছে সোয়াদ। ফেসবুক আইডিতে সোয়াদ তার ষ্ট্যাটাসে এমন তথ্যই দিয়েছে। এতে নতুন করে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে বলে রাজশাহী বিশ্বদ্যিালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন।

সোমবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার দেওয়া এক পোস্টে তার পিতা তানভীর আহমদ তার গলায় ছুরি ধরেছিল বলে জানান দেয়। ‘আত্মহত্যার’আগে লেখা যাওয়া সুইসাইড নোটে বিষয়টি উল্লেখ করেছিলেন শিক্ষিকা জলি। ঢাকায় নানা বাড়িতে অবস্থান করা সোয়াদ ঘটনার পর থেকে চুপ ছিল।

আয়মান সোয়াদ তবে তার ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় যারা এতদিন তানভীর আহমদের পক্ষ নিয়েছিলেন, তারাও ঘটনার জন্য তানভীরকে দায়ী এবং ঘৃনা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। ফলে দায় এড়ানোর সুযোগ নেই জলির সাবেক স্বামী অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর তানভীর আহমদের।

ফেসবুকে ষ্ট্যাটাসে সোয়াদ লিখেছে, ‘অনেক দিন ধরেই আমার কাছে ‘গলায় ছুরি ধরার ঘটনাটা জানতে চাওয়া হচ্ছে। আজকে বলেই দেই, কী ঘটেছিল ওই দিন।’

‘আম্মা আর আমি বাইরে যেতে চাইছিলাম, আমার এক বান্ধবীর বাসায়। সারাদিন প্ল্যানিং করার পর আমি আব্বার কাছে অনুমতি চাইতে গেছিলাম। অনুমতি চাওয়ার সময় আব্বা বলে- তোমার আম্মাকে বলো ওর মতো চলে যেতে। আমি তোমাকে দিয়ে আসবো। আমি বললাম- আজব তো। আমি আর মা এক জিনিস প্লান করছি, তুমি কেন ইন্টারফেয়ার করতেছো? আব্বা বলল- বাপ হিসেবে আমার এ অধিকার আছে।’

নবম শ্রেণি পড়ুয়া সোয়াদ আরও লেখে, ‘আমি তখন বলি, কিন্তু আম্মার সঙ্গে প্লানটা নষ্ট করার অধিকারও তোমার নাই। আব্বা বলে, মেইন থিং ইজ.. (মূল বিষয় হলো) তোমাকে ওই মহিলার সঙ্গে যেতে দিব না। গেলে আমার সঙ্গে যাবা, নাহলে নাই। আমি বলি- কী এমন করছে যে এত ক্ষতিকর মনে করো আম্মাকে? হ্যা? আব্বা কিছু না বলে নিজের ঘরে চয়ে যায়। পরে বাধ্য হয়ে আম্মাকে ফোন দিয়ে বলি- আমি যেতে পারব না আজকে। মা বলে- আমি বুঝছি কি হয়েছে। চিন্তা করিস না বাবা। আর কয়েকটা দিন।’

‘পরে সন্ধ্যা বেলায় আব্বাকে বলি- প্লানটা নষ্ট করার জন্য ধন্যবাদ। তখনি আব্বা বলে উঠে- তুই কি ঝগড়া লাগাইতে চাস? তোর আম্মার মতো হয়েছিস। আমি বলি- আমার আম্মার নামে এই সব কথা বলবা না, খবরদার! আব্বা বলে- তোর মায়ের সঙ্গে কথা বন্ধ কর, এই কথাগুলোও বন্ধ হয়ে যবে। আমি বলি- বন্ধ করব না! আব্বা তখনি রান্নাঘরে গিয়ে একটা বড় চাকু নিয়ে এসে আমার গলায় ধরে বলে- কী বললি? শুনতে পাইনি। বললাম (অল্প শুরে)- বন্ধ করবো না। মেরে ফেলতে চাইলে মারো। আম্মাকে তো আমার সামনে মারার চেষ্টা করেছো। সিউরলি এটাও পারবে। তখন আব্বা চাকুটা ছুঁড়ে মাটিতে ফেলে দিলো এবং কিছু না বলে চলে যায় ঘরে…।’

এদিকে প্ররোচনাকারীকে খুঁজে বের করে শাস্তির দাবি জানিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার ১৭ দিন পেরিয়ে গেলেও তদন্তে অগ্রগতি নেই। পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে- মামলাটি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। তবে কার্যত কোনো তদন্তে কোনো উন্নতি এখনও দৃশ্যমান হয়নি বলে জানাচ্ছেন পুলিশ কর্মকতারা। সহকর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদের কথা পুলিশ জানালেও বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এখনও সেভাবে কোনো সহকর্মীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইনি পুলিশ। ফলে শিক্ষিকা জলির পরিবার, সহকর্মী ও শিক্ষার্থী ক্ষুব্ধ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মতিহার থানার এসআই ব্রজ গোপাল বলেন, মামলাটি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। আমি তদন্তে থাকলেও একজন সহকারী কমিশনার এবং একজন উপ-কমিশনার পদ মর্যাদার কর্মকর্তা সার্বিক খোঁজ খবর নিচ্ছেন।

বে সার্বিক বিষয়ে জানতে নগরীর মতিহার জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) একরামুল হক ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, ভিসেরা নমুনার পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ওই প্রতিবেদন হাতে না আসা পর্যন্ত সেভাবে তদন্তে এগোনো যাচ্ছে না।

সংশ্লিস্ট সূত্রে জানাগেছে, সোয়াদের দেওয়া পোস্টের নিচে কমেন্টে বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর সেলিম রেজা নিউটন গত ২২ সেপ্টেম্বরে বিভাগের একাডেমিক সভায় তানভীরের পক্ষ নেওয়ায় নিজে লজ্জিত বলে উল্লেখ করেন। সোয়াদকে সান্ত্বনা দিয়ে তিনি তানভীর আহমদের প্রতি ঘৃনা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একইসঙ্গে তাকে ফেসবুকে আনফ্রেন্ড করার কথা উল্লেখ করেন। এছাড়া আরও বেশ কয়েকজন সোয়াদকে সত্য প্রকাশের জন্য বাহবা এবং সহানুভূতি জানিয়ে মন্তব্য করেছেন। একইসঙ্গে তারা তানভীরের দিকে তীর্যক মন্তব্য ছুড়েন।

তবে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে সহযোগী অধ্যাপক তানভীর আহমদের সঙ্গে মোবাইলফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে শিক্ষিকা জলির মৃত্যুর দিন রাতে ফেসবুকে ছেলের গলায় ছুরি ধরার বিষয়ে লেখেন তিনি, যে ছেলেকে এতদিন ধরে একা আদর যত্ন দিয়ে বড় করলাম, তার ব্যাপারে আমাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হলো।

পরদিন ফেসবুকে আবারও একটি পোস্ট দেন তানভীর আহমদ। সেখানে তিনি তাদের প্রায় চার বছর আগে বিচ্ছেদ এবং যোগাযোগ না থাকার কথা উল্লেখ করেন। একইসঙ্গে তার সাবেক স্ত্রী আকতার জাহান জলি বিভাগের জুনিয়র এক সহকর্মীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন বলে দাবি করেন। তবে ফেসবুকে ওই পোস্ট দেওয়ার পর তীব্র সমালোচনার মুখে পরদিন তা মুছে দেন।

গত ৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনে নিজ কক্ষ থেকে আকতার জাহান জলির লাশ উদ্ধার করা হয়। সেসময় ওই কক্ষে জলির নিজ হাতে লেখা সুইসাইড নোট পাওয়া যায়। তাতে লেখা ছিল, ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। শারীরিক, মানসিক চাপের কারণে আত্মহত্যা করলাম। সোয়াদকে (সন্তান) যেন ওর বাবা (তানভীর আহমেদ) কোনোভাবেই নিজের হেফাজতে নিতে না পারে।

যে বাবা সন্তানের গলায় ছুরি ধরতে পারে, সে যেকোনো সময় সন্তানকে মেরে ফেলতে বা মরতে বাধ্য করতে পারে।’ঘটনার পরদিন ময়নাতদন্তের পর আকতার জাহানের ছোট ভাই কামরুল হাসান রতন আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে নগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

 

ঢাকা, ২৭ সেপ্টেম্বর, (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এএম


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ