Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | রবিবার, ১৯শে মে ২০২৪, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

উত্তাল মহাসাগরে মিথিলার অভিজ্ঞতা

প্রকাশিত: ১৩ সেপ্টেম্বার ২০২২, ০৩:১৮

উত্তাল মহাসাগরে মিথিলার অভিজ্ঞতা

শোভিজ লাইভ: অভিনেত্রী রাফিয়াত রশিদ মিথিলা। শুধু অভিনেত্রী নন একজন সমাজকর্মীও তিনি। ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান হিসেবে কাজ করছেন। অফিসের কাজে গিয়েছেন উগান্ডায়। মহাসাগরে হয়েছে এক ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা।

সেখানে বিভিন্ন রকম কাজ শেষে পৌঁছান পশ্চিম আফ্রিকার সিয়েরা লিওনে। তবে বিপদে পড়েন ফেরার পথে। ভারতের কলকাতায় ফেরার জন্য বিমান ধরবেন। তখনই বিপত্তি। শুরু হয় প্রবল ঝড়-বৃষ্টি। সিয়েরা লিওনের রাজধানী ফ্রিটাউনের ভৌগলিক অবস্থান আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে। ঝড়ের মুখে কীভাবে বিপদে পড়তে হয়েছিল, সেই অভিজ্ঞতাই নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে শেয়ার করেছেন মিথিলা।

অভিনেত্রীর ফেসবুক পোষ্টে লেখেন, `আমি সাধারণত আমার অফিসিয়াল ট্রিপ থেকে সুন্দর ছবিগুলোই শেয়ার করি। আর তাই দেখে অনেকেই আহা-উহু করতে করতে বলে 'ইশশ আমারও যদি এরকম একটা জব থাকতো...আপনি কত ঘুরে বেড়ান...আহা'। এই সুন্দর ছবির পেছনের অভিজ্ঞতাটা তাদের জন্য শেয়ার করছি। গত দুই সপ্তাহ আমি উগান্ডায় বিভিন্ন রকম ট্রেনিং, ওয়ার্কশপ, ফিল্ড ভিজিট শেষ করে উগান্ডা থেকে ওয়েস্ট আফ্রিকার সিয়েরা লিওনে আসি এখানকার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে একটা আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট বিষয়ক কর্মশালার আয়োজন করতে। আমার কর্মশালা গতকাল শেষ হয় এবং গতকাল রাতেই আমার সিয়েরা লিওন থেকে কোলকাতায় যাবার ফ্লাইট ছিল। আয়রাকে যেহেতু বাড়িতে রেখে এসেছি, কাজের বাইরে আর একদিনও আমার থাকতে ইচ্ছা করেনা বাইরে।

তো যাই হোক, কালকে বিকালবেলা থেকেই প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টি। সিয়েরা লিওনের রাজধানি, ফ্রি টাউন, আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে। এবং সিয়েরা লিওনের এয়ারপোর্টটা ফ্রি টাউন থেকে দূরে একটা বিচ্ছিন্ন যায়গায় অবস্থিত, যার নাম 'লুংগি'। ফ্রি টাউন থেকে ১ ঘন্টা একটা ছোট ফেরিতে আটলান্টিক পার হয়ে লুংগি এয়ারপোর্টে যেতে হয়। ঝড় বৃষ্টির কারনে আমি একটু বেশিই চিন্তিত ছিলাম কারন আমার সমুদ্র যেমন ভালো লাগে, তেমনি উত্তাল সমুদ্র ভয়ও লাগে৷ আমার ফেরি, যেটাকে 'sea coach' বলা হয়, সেটার টাইম ছিলো রাত ২ টায়। আমি সন্ধ্যা থেকে আশায় ছিলাম যে আবহাওয়া রাতে হয়তো ভালো হবে। কিন্তু যত রাত বাড়ছে ততই ঝড়ও প্রকট আকার ধারন করছে। শেষ পর্যন্ত ভয়ে ভয়ে রাত ১টায় sea coach টার্মিনালে গেলাম। লোকজন খুবই কম। আমার ফ্লাইট ছিল ভোর ৫:৩০টায় সিয়েরা লিওন থেকে মরক্কোর কাসাব্লানকায়। সেখান থেকে দুবাই হয়ে কোলকাতায় ফেরার কথা। যাহোক তার আগে তো সমুদ্রটা পাড়ি দিতে হবে।
রাত ২ টায় যখন sea coach এ উঠে বসলাম তখন বোট ভিষণভাবে দুলছিলো। তারপর মাঝ সমুদ্রে যাওয়ার পর দুলুনির সাথে সাথে মাথাটাও ঘুরতে শুরু করলো। বিশাল বিশাল পানির ঝাপ্টা আসছিলো। মনে মনে বিভিন্ন ধরনের দোয়া পড়তে পড়তে ঘড়িতে সময় যেন এগোচ্ছিলই না! শেষ পর্যন্ত ১ ঘন্টা কে ১ জীবন ভাবার আগ মুহুর্তে ফেরি ওপাড়ে পৌছালো। ফেরি থেকে নেমে টার্মিনাল অব্দি বৃষ্টির মধ্যে দৌড়ে যেতে যেতেই ভেজা কাক হয়ে গেলাম। তারপর একটা বাস এ চড়ে লুংগি এয়ারপোর্টে পৌঁছাতে বাজলো ভোর ৪টা। তারপর ইমিগ্রেশনের বহু কসরত শেষ করে প্লেন এ উঠতে গিয়ে আরেকটু ভিজলাম কারন বাসে করে রানওয়ের কাছাকাছি গিয়ে প্লেন এ উঠার সময় অবশ্যই কোন ছাতার ব্যবস্থা ছিলনা।
যাক ওই ঝড়ের মধ্যে সমুদ্রে ডুবে না গিয়ে প্লেন পর্যন্ত যে যেতে পেরেছি সেটাই চৌদ্দ গুষ্টির ভাগ্য মনে হচ্ছিল!

আমার ফ্লাইট টা ছিল 'এয়ার মারোক' যেটা লাইবেরিয়ার রাজধানি 'মনরোভিয়া' হয়ে কাসাব্লানকা যাবে। এই বিষয়টা আফ্রিকায় খুব কমন যে একটা প্লেন লোকাল বাসের মত মাঝখানে দু-একটা যায়গায় থেমে যাত্রি তুলবে আর নামাবে। এই সময়ে বাকি যাত্রিদের কিন্তু প্লেন থেকে নামতে হবেনা। প্লেনেই বসে থাকবে। তো মন্রোভিয়াতে ঘন্টা খানেক থামা সহ সব মিলিয়ে ৮ ঘন্টার মত জার্নি করে দুপুর ২ টায় কাসাব্লাংকায় পৌছানোর পর আরেক বিপদ হল। আমার কাসাব্লাংকা থেকে দুবাই এর ফ্লাইটটা আমি মিস করলাম। এবার পরের ফ্লাইট আছে পরের দিন, আর এদিকে কাসাব্লাংকায় এয়ারপোর্টে কোন হোটেল নেই, আর বাইরে ভিসা ছাড়া বের হওয়া যাবেনা (অন আরাইভাল ভিসা বাংলাদেশিরা পাবেনা)। তো আমি আমার অফিসে যোগাযোগ করে টার্কিশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইট বুক করালাম যেটা বিকালে ছাড়বে কিন্তু ঢাকায় যাবে। শেষ পর্যন্ত টার্কিশে চড়ে রাত ১ টায় ইস্তানবুল পৌঁছানোর পর দেখলাম আমার ইস্তানবুল থেকে ঢাকায় যাবার ফ্লাইট টাও সাড়ে ৫ ঘন্টা ডিলেইড!
তো আপাতত আমি ইস্তানবুল এয়ারপোর্টে ঘুম চোখে এই রচনাটি লিখছি। আচ্ছা এর মধ্যে আমার লাগেজ টা যে কোন ফ্লাইটে কোথায় চলে গেছে সেটা কিন্তু আমি এখনো জানিনা, জানার চেষ্টা করারও শক্তি নেই।

এই গল্পটা তাদের জন্য লিখলাম যারা শুধু সুন্দর ছবিগুলোই দেখে, তার পেছনের কঠিন সময়ের গল্পগুলো জানেনা। এইযে গত তিন সপ্তাহ ধরে, মেয়েকে বাড়িতে রেখে, হাজার হাজার মাইল বিভিন্ন দেশে, শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে, জার্নি করে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সাথে কাজ করা, সেটা নিতান্তই জীবিকার তাগিদে; আমোদ ফুর্তির জন্যে না। সবসময় সুন্দর ছবি আর ভালো কথাগুলো শেয়ার করি কারন আমি যা কিছু ভালো, আর পজিটিভ সেটাই ভাগ করে নিতে চাই। একজন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন কর্মি হিসেবে আমার কাজ এবং বিভিন্ন দেশে ব্র‍্যাক এর কন্ট্রিবিউশান নিয়ে আমি ভীষণ গর্ববোধ করি। তাই পেছনের কঠিন সময়গুলোকেও অভিজ্ঞতা হিসেবেই দেখি।
যাইহোক, আরও কম হলেও ১২ ঘন্টার মত জার্নি বাকি আছে। সবমিলিয়ে কত ঘন্টা হোলো সেটা হিসাব করার মানষিক অবস্থা আপাতত নাই। আমি দোয়া প্রার্থী।’

শুধু লম্বা পোস্টই নয়, সঙ্গে সেখানকার বেশ কয়েক টুকরো ছবি ও ভিডিও শেয়ার করেছেন এই সমাজকর্মী।

ঢাকা, ১২ সেপ্টেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//জেডআই


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ