শোবিজ লাইভ: শুধু উপহারটা খুব দামি বলে নয়, যিনি উপহারটা দিতে চেয়েছেন, তিনিও মানুষ হিসেবে মূল্যবান। এ কারণে তাঁর দেওয়া উপহার নিতে অপারগতার কথা জানিয়ে বেশ হইচই ফেলে দিয়েছেন দীপা কর্মকার। এ নিয়ে অহেতুক একটা বিতর্কও তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন গত অলিম্পিকে বেশ আলোচনায় আসা ভারতের এই জিমন্যাস্ট।
ভারতের প্রথম মহিলা জিমন্যাস্ট হিসেবে অলিম্পিকের চূড়ান্ত পর্বে গেছেন বলে শুরু থেকেই আলোচনায় ছিলেন দীপা। এবারের অলিম্পিকে একের পর এক ইভেন্ট থেকে ভারত যখন হতাশার খবর পাচ্ছিল, ঠিক তখনই জিমন্যাস্টিকসের মতো একটি ইভেন্টে ভারতকে একটুর জন্য পদক এনে দিতে পারেননি দীপা। খুবই সামান্য ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে হন চতুর্থ। তবে এটিকেও তাঁর জন্য অনেক বড় অর্জন হিসেবে দেখা হচ্ছিল। খোদ শচীন টেন্ডুলকার অভিনন্দন জানিয়েছেন।
শুধু তা-ই নয়, ভারতের পদকজয়ী বাকি অলিম্পিয়ানের পাশাপাশি দীপাকেও টেন্ডুলকার বিএমডব্লু গাড়ি উপহার দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দীপা গাড়িটি নিতে পারবেন না জানিয়ে দিয়ে সম্প্রতি বেশ শোরগোল ফেলে দেন। কিছু কিছু সংবাদমাধ্যমে তাঁকে নিয়ে নেতিবাচক খবরও বেরোয়। তবে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলার অভয়নগরে নিজের বাড়িতে বসে মিডিয়ার ওপরও পাল্টা ক্ষোভ জানালেন দীপা ও তাঁর বাবা। তাঁদের অভিযোগ, অযথা জল ঘোলা হচ্ছে। এতটাই চটেছেন দীপার বাবা দুলাল কর্মকার, বলেছেন, আর কথা নয় মিডিয়ার সঙ্গে।
ভারতেরই হায়দরাবাদ ব্যাডমিন্টন সংস্থার তরফে সম্প্রতি দীপা কর্মকারসহ চারজন ক্রীড়াবিদকে বিএমডব্লিউ গাড়ির চাবি তুলে দেন টেন্ডুলকার। দীপাকে বলা হয়, বাড়ির নিকটবর্তী বিএমডব্লিউ শোরুম থেকে গাড়ির ডেলিভারি বুঝে নিতে। কিন্তু আগরতলায় এ ধরনের বিলাসবহুল গাড়ির শোরুম কিংবা সার্ভিস সেন্টারই নেই। ধারে–কাছেও পাওয়া যাবে না কোনো মেকানিক। গাড়ি নষ্ট হলে এ আরেক বিপদ।
দীপার বাবা প্রথম আলোকে জানান, এই ধরনের গাড়ির ড্রাইভারও আগরতলায় পাওয়া সম্ভব নয়। খোঁজ করেও দেখেছেন। সেই সঙ্গে আগরতলাসহ গোটা রাজ্যে ‘এত বড় গাড়ি’ চালানোর মতো রাস্তা নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি। দীপা প্রথম আলোকে বলেন, ‘গাড়িটা পেয়ে তো ভালোই লেগেছিল। কিন্তু এত বড় গাড়ি রাখব কোথায়! তাই সবদিক ভেবেই আমরা বলি, গাড়ির বদলে নগদ অর্থ দিলে নিজেরা এখান থেকে অন্য গাড়ি কিনতে পারি। স্যারও (দ্রোণাচার্য কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দী) একই মত দেন।’
কিন্তু দীপার এই চাওয়াটাই ভারতীয় মিডিয়ায় তোলপাড় ফেলে দেয়। বেশির ভাগ মিডিয়াতেই বলা হয়, ‘শচীনের দেওয়া গাড়ি প্রত্যাখ্যান করেছে দীপা!’ এমনকি, রাজ্যের রাস্তাঘাটের করুণ দশার ছবি দীপা তুলে ধরেছে বলেও কটাক্ষ করা হয়। এটাই মানতে পারছেন না দীপা ও তাঁর পরিবার। দীপার বাবা, প্রাক্তন ভারোত্তোলক দুলাল কর্মকার আজ বলেছেন, ‘আমি যা বলিনি তাই আমার মুখে বসানো হচ্ছে। আমরা এই উপহার নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছি, এমন নয়। শুধু বলেছি, গরিব মানুষ, এত বড় গাড়ি রাখব কোথায়! আর তিলকে তাল করছে কিছু মিডিয়া! আমি আর মিডিয়ার সঙ্গে কথাই বলব না!’
মিডিয়ার ভূমিকায় আঘাত পেয়েছেন দীপার মা গৌরী কর্মকারও। তিনি বলেন, ‘আমরা তো সাধারণ মানুষ। আমাদের নামে উল্টোপাল্টা লিখলে তো কষ্ট হয়ই!’ দীপা অবশ্য এসব বিতর্ক গায়ে মাখছেন না। বলেন, ‘অনুশীলনই আমার একমাত্র কাজ। তবে এই ধরনের বিতর্ক না হলেই ভালো হতো।’
ঢাকা, ১৩ অক্টোবর, (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)// আইএইচ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: