শোবিজ লাইভ: তাজিন আহমেদ। একটি নাম। একটি প্রতিভা। কিন্তু অকালেই ঝড়ে গেল। রেখে গেল হাজারো স্মৃতি। হাজারও কষ্ট আর বেদনার গল্প। আর ফিরবেন না। আর কখনও কোন বিষয়ে ফিচার লিখবেন। জনতার ভালবাসা, পরিবারের টান আর মায়া-মমতা সবই যেন আজ স্মৃতি।
সবসময় হাসি মাখা এই মেয়েটিকে আগে আমি চিনতাম। তার মা দিলারা জলি আন্টি। আমার বাবা আর জলি আন্টি একই অফিসে কাজ করতেন। অনেক আদর করতেন আমাকে। তারপর কেটে গিয়েছে অনেক বছর।’ তাজিন আহমেদকে স্মরণ করে কথাগুলো ফেসবুকে আজ লিখেছেন নাট্যনির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী।
তাজিন আহমেদের প্রশংসা করে তিনি আরো লিখেছেন, ‘তারপর বিয়ের পর আরণ্যক-এর কারণে এবং ভোরের কাগজের জন্য তাঁর লেখার ফ্যান হয়ে গেলাম আমি। তাঁর ভদ্র মার্জিত ব্যবহার, আর মুখে সবসময় মিষ্টি হাসি মুগ্ধ করত আমাকে। ২০০১ সালে আমার প্রচারিত প্রথম নির্মাণ আমার লেখা নাটক ‘এক জীবনে’র প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করলেন তিনি।
তাঁর অভিনয় দেখে চোখে জল এসেছিল। সেই থেকে সখ্যতা। আমার অজস্র নাটক আর সিরিয়ালে অভিনয় করেছেন এই মিষ্টি মেয়েটি। তাঁর অনেক গুণ। লেখা, আবৃত্তি, অভিনয়, উপস্থাপনা।’
তাজিনকে নিয়ে কয়েকটি স্মৃতিচারণা করে চয়নিকা চৌধুরী বলেন, “একবার আমাকে একটি স্ক্রিপ্ট দিয়ে বললেন, ‘চয়ন আপু,আমার দেখা তুমি বেস্ট ডিরেক্টর। আমার একটা স্ক্রিপ্ট ডিরেকশন দিবে তুমি? আমি খুব খুশি হবো।
মনে আছে নাটকটির নাম ছিল ‘দুই হৃদয়’। অভিনয় করেছিলেন তারিন আর শোয়েব। তারিনের সেই আবেগময় দারুণ অভিনয় চোখ ভিজিয়েছিল। দারুণ স্ক্রিপ্ট ছিল।লিখতো খুবই ভালো। তারপর তাঁর সাথে ৭১ টিভিতে অনেক টক শোতে বসা হয়েছে। স্পেশাল কোনো শো হলেই আমাকে খুঁজত।
দেখা হলেই অনেক আড্ডা গল্প। ফোনে কথা হতো দুই-তিনদিন পরপর। এইবার নারী দিবসের একটি কাজে তাকে আমি একটি সিন-এ কাস্ট করেছিলাম। কী যে খুশি হলো!! সেজে-গুজে এলো। বিজরী, দীপা আমি সেলিম ভাই সব্বাই আড্ডায় মেতে উঠেছিলাম। সেটাই শেষ আড্ডা।”
চয়নিকা চৌধুরীর শেষ কথা হয়েছিল গত ১৫ মে। এ বিষয়ে চয়নিকা চৌধুরী ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, সেদিন আমার শুটিং ছিল না। আগের রাতে বলল, চয়ন আপু, উত্তরা এলে এসো।
কথা আছে। কফি খাব আমরা। ১৬-১৭ শুটিং থাকাতে বললাম, ২০ তারিখের পর আমরা বসব। সেটাই শেষ কথা। আহারে! কী কথা ছিল যা বলতে চেয়েছিল! আর শোনা হবে না কখনো? চয়ন আপু বলে মিষ্টি হাসি দিয়ে জড়িয়ে আর ছবি তুলবে না কেউ। কেউ বলবে না,চয়ন আপু, বুকে এত কষ্ট কেন?’
তাজিনকে ঘিরে চয়নিকা আরো বলেন, ‘তাজিন,বিকেল থেকে রাত আজ তোমার সাথেই ছিলাম। কত্ত সুখ দুখের কথা মনে পড়ে গেল! আমি যত না ভালোবাসতাম তার চেয়েও তুমি আমাকে অনেক বেশি.. সত্যিকারের ভালোবাসতে..।
অনেক অভিমানী ছিলে তুমি! বিশাল বিশাল টেক্সট করতে। উত্তর না দিলে কষ্ট পেতে, রেগে যেতে। সব মনে পড়ে যাচ্ছে। কত্ত কী!! সত্যি জীবনটা অনেক ছোট। এক জীবনে এত কষ্ট পেলে তুমি! কিছুই করতে পারিনি তোমার জন্য। ক্ষমা করে দিও। আমি সত্যি লজ্জিত।
অনেক কিছু করা উচিত ছিল। পারিনি। পরপারে সুখে থেক তাজিন। ওইখানেই তুমি অনেক ভালো থাকবে! অনেক দিন শান্তিতে ঘুমাতে পারনি।
আজ তুমি পরম শান্তিতে ঘুমাও..।
তুমি কি দেখতে পাচ্ছ কত্ত মানুষ, তোমার কত কলিগ এসেছে তোমাকে দেখতে! সবাই তোমাকে কত ভালোবাসে! অনেক প্রার্থনা। অনেক ভালোবাসা। চোখ ভিজে যাচ্ছে জলে! আন্টির জন্য চিন্তা হচ্ছে। অনেক অনেক প্রার্থনা।
জানি, পিতার কাঁধে পুত্রের লাশ!! আহ!! কী কষ্ট!! আমার লেখা এক জীবনে নাটকের মতো বলতেই হয়..এক জীবনে এত কষ্ট কেন বলো তো!!’
জানাগেছে মঙ্গলবার বিকেলে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন অভিনেত্রী তাজিন আহমেদ। তাঁর জানাজা আজ বুধবার বাদ জোহর গুলশান আজাদ মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে তাঁকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়। এমনটিই জানিয়েছেন অভিনয়শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিম।
ছোটপর্দার এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ছিলেন তাজিন আহমেদ। অভিনয়ের পাশাপাশি উপস্থাপনা করেও জনপ্রিয়তা পান তিনি। নাট্যজগতে কাজের শুরুর দিকে তিনি আরণ্যক নাট্যদলের মাধ্যমে মঞ্চনাটকে অভিনয় করেন। পরে টেলিভিশন নাটক করে খ্যাতি অর্জন করেন।
তবে গত কয়েক বছর টেলিভিশন নাটকে অনিয়মিত ছিলেন তাজিন। কিছুদিন আগে মঞ্চে আরণ্যকের ‘ময়ূর সিংহাসন’ নাটকে অভিনয় করেন তাজিন।
ভিডিও:
আরেকটি ভিডিও:
ঢাকা, ২৩ মে (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএসসি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: