Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | রবিবার, ২৮শে এপ্রিল ২০২৪, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

বার্লিনে বাংলাদেশের রামপাল ও বিকল্প জ্বালানী বিষয়ক সম্মেলন

প্রকাশিত: ২১ আগষ্ট ২০১৭, ০২:৫৪

 

লাইভ প্রতিবেদক, বার্লিন থেকে: বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে বাগেরহাটের রামপালে কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ কার্যক্রম চলছে। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য এক অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হবে। সিডর, আইলার মত প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও দুর্যোগ মোকাবেলায় সুন্দরবন বাংলাদেশের দক্ষিণের উপকূলীয় অঞ্চলের একমাত্র রক্ষাকবচ এবং সেই সাথে লাখো বনজীবি  মানুষের জীবিকার উৎস হিসেবে ভূমিকা রাখে । রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের ফলে সুন্দরবনের পাশাপাশি মানুষের জীবন ও জীবিকা সংকটাপন্ন হয়ে পড়বে। 

তাই শুধু দেশেই নয় বরং ইউরোপসহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা  বাংলাদেশী পেশাজীবি, ছাত্র-শিক্ষক, গবেষক, সাংবাদিক, পরিবেশবিদ এবং বিশেষজ্ঞরা ব্যাপক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন এবং রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র না করার পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে নানাভাবে উদ্যোগী হয়েছেন। বৈজ্ঞানিক তথ্য সম্বলিত বিশ্লেষনের পাশাপাশি সভা-সমাবেশের মাধ্যমে এই তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রক্রিয়া বন্ধের দাবি দেশে-বিদেশে দিন দিন আরো জোরালো হচ্ছে। 

ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানো এবং জীবাশ্ম জ্বালানীর নেতিবাচক দিকগুলো বিবেচনা করে ইতোমধ্যে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ নির্বিশেষে  জীবাশ্ম জ্বালানী নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনা থেকে সরে এসে পরিবেশবান্ধব এবং সাশ্রয়ী নবায়নযোগ্য জ্বালানীকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান উপায় হিসেবে বিবেচনা করছে। রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন বাঁচাবার দাবী ও বিকল্প জ্বালানী বিষয়ক সম্ভাব্য  নীতি খুঁজে দেখার দাবী করেছেন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ইউরোপীয় নেটওয়ার্ক। 

গত ১৯ ও ২০ আগষ্ট বার্লিন শহরের গনতান্ত্রিক ও মানবধিকার কেন্দ্রে আয়োজিত দুদিন ব্যাপী একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে জার্মানির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও পরিবেশ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন ও বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা অংশগ্রহন করেন। সম্মেলনের শেষ দিন রবিবার রামপাল  বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল ঘোষনা করে সুন্দরবন বাঁচাতে বার্লিন ঘোষনাপত্র প্রকাশ করা হয়। 

বার্লিনে রামপাল বিষয়ক দুইদিন ব্যাপী সম্মেলনে বাংলাদেশে রামপাল প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব ও বাংলাদেশে বিকল্প জ্বালানীর সম্ভ্যবতা নিয়ে চারটি সেশনে সর্বমোট আটটি প্রবন্ধ পাঠ করেন আন্তর্জাতিক ও বাংলাদেশী বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞগন।এছাড়া সম্মেলনে অংশগ্রহনকারী জার্মানিরা সহ ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, হল্যান্ড, নরওয়ে ও জার্মানিতে বসবাসরত ছাত্র ছাত্রী গবেষক ও পেশাজিবীরা এই বিষয়ে তাদের মতামত প্রকাশ করেন। 

সম্মেলনে বক্তারা  সুন্দরবনকে শুধু বাংলাদেশের নয়, তা বিশ্ব জলবৈচিত্র্যর সম্পদ বলে অভিহিত করেন এবং তা রক্ষা করতে সবাইকে সোচ্চার হবার আহবান জানান।বিশ্ব জলবায়ূ পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে তার প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেন অধ্যাপক ভীলফ্রেড এন্ডলিশার। বাংলাদেশে বিকল্প জ্বালানীর বিশাল সুযোগ আছে বলে মনে করেন অধ্যাপক হার্টমুট বেরভোল্ফ। আনু মোহম্মদ বাংলাদেশের তৈল গ্যাস নিয়ে বিগত সময় গুলিতে বিভিন্ন সরকারের গাফিলতির কারনে দেশীয় জ্বালানী ও পরিবেশ সম্পদের ক্ষতির বর্ণনা দেন।বাংলাদেশে বিকল্প জ্বালানী বিষয়ক বিশেষজ্ঞ  মাহবুব সুমন, বাংলাদেশে বিকল্প জ্বালানীর প্রয়োগ ও সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন বার্লিনে রামপাল ও বিকল্প জ্বালানী বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের বার্লিন ঘোষনাপত্রের সাথে পরিবেশ, প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য বিষয়ক সংগঠন গ্রীনপিস,ফেন্ডস অব দ্যা আর্থ. ৩৫০.অর্গ, ওয়াল্ড ওয়িল্ড ফাউন্ডেশন,উইমেন এনগেজ ফর দ্য কমন ফিউচার, ব্যাঙ্কট্রাক সহ সারা বিশ্বের প্রায় একশত সংগঠন সংহতি প্রকাশ করেছেন। 

বার্লিন ঘোষনাপত্রে সুন্দরবনের অনিতদূরে রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প স্হাপনের কারনে অদূর ভবিষ্যতে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভে সম্ভাব্য ক্ষতি, ভারত ও চীন বা এশিয়া ও ইউরোপের অনান্য দেশের উধাহরন গ্রহন করে পরিবেশ বান্ধব জ্বালানীর জন্য সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহন সহ বাংলাদেশের পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক প্রকল্প সমূহ বন্ধের আহবান জানানো হয়েছে।  

সম্মেলনের শুরুতে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ইউরোপীয় নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে সৈয়দ বাবুল ও মোস্তফা ফারুক শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন বাংলাদেশে চলমান রামপাল ও বিকল্প জ্বালানী বিষয় নিয়ে যে আলোচনা ও আন্দোলন চলেছে তার ব্যাপকতা  ছড়িয়ে দিতে এবং সংহতি প্রকাশের লক্ষ্যেই এই ইউরোপীয় সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। 

সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে "রামপালে  বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সুন্দরবনে পরিবেশগত প্রভাব" শীর্ষক আলোচনাতে প্রবন্ধ পাঠ করেন, গ্রীনপিসের মিসেস কেসটিন ডোরেনব্রুক, বার্লিন বয়েথ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা গুডরুন কামাস এবং পরিবেশ বিষয়ক সাংবাদিক ক্যাথারিনা ফীঙ্কে। এই অধিবেশনটি পরিচালনা করেন পটসডাম জার্মান জীওসাইন্স গবেষনা কেন্দ্রের গবেষক ড. অনিমেষ গাইন। 

সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে "কয়লা নির্ভর জ্বালানী নীতি, জলবায়ুতে তার প্রভাব এবং সবুজ জ্বালানী নীতিতে রূপান্তর " বিষয়ক অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন বার্লিন  হুমবল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভীলফ্রেড এন্ডলিশার, কোলন প্রযুক্তি কলা ও বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হার্টমুট বেরভোল্ফ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মোহম্মদ এবং জার্মান পরিবেশ ফোরামের এলিজাবেথ স্টাউড।অধিবেশনটি পরিচালনা করেন বার্লিন  হুমবল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রানীবিজ্ঞান বিষয়ক গবেষক ওয়াহেদ চৌধুরী। 

সম্মেলনের দ্বিতীয়দিনে "বাংলাদেশর জন্য সবুজ জ্বালানীর সম্ভবনা ও সম্ভ্যবতা" শীর্ষক তৃতীয় অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন হ্যানোভারের লাইবনিজ ফলিত ভূ-পদার্থবিদ্যা ইনস্টিটিউটের গবেষক ড.মোহম্মদ আজিজুর রহমান ও বাংলাদেশে বিকল্প জ্বালানী বিষয়ক বিশেষজ্ঞ  মাহবুব সুমন। এই পর্বের অধিবেশনটি পরিচালনা করেন বার্লিন প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক তানজিয়া ইসলাম। 

সম্মেলনের চতুর্থ অধিবেশনে "সুন্দরবন অন্চলে রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল ও বাংলদেশে বিকল্প জ্বালানীর সম্ভ্যবতা নিয়ে আন্দোলন ও সংহতি প্রকাশের লক্ষ্যে ভবিষ্যত কর্মসুচী নিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা এাক্টিভিষ্টদর মধ্য মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। পর্বটি পরিচালনা করেন ড্রেসডেন হেল্মহোলজ গবেষনা কেন্দ্রের গবেষক দেবাশীষ সরকার। 

বার্লিন শহরের গনতান্ত্রিক ও মানবধিকার কেন্দ্রে আয়োজিত দুদিন ব্যাপী বার্লিনে রামপাল ও বিকল্প জ্বালানী বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন চলাকালীন সু্ন্দরবনের আলোকচিত্রের প্রদর্শনী করেন ফটো সাংবাদিক ডেভিড ওয়েন। সন্ধ্যয় সুন্দরবন ও তার পরিবেশ বিষয়ক ডকুমেন্টারী চলচিত্র ও সাংস্কৃতিক প্রদর্শিত হয়। 

সম্মেলনের মাধ্যমে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের পরিবেশ বান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনের অভিজ্ঞতা, বিশ্বব্যাপী নবায়নযোগ্য জ্বালানীর বহুল প্রসার ইত্যাদি সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ এবং অংশগ্রহণকারীদের মতামত বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে বাস্তবসম্মত বিকল্প জ্বালানী পরিকল্পনা গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সর্বোপরি বিশ্ব মতামতকে সুন্দরবনের পক্ষে আরও সংহত  করে সুন্দরবন রক্ষার দাবিকে আরও জোরালো করা সম্ভব হবে।

 

ঢাকা, ২০ আগস্ট (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমএইচ


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ