মৃদুল ব্যানার্জি, ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি: মার্কিন নির্বাচনী হাওয়া বাংলাদেশেও। চলছে টান টান উত্তেজনা। নির্ঘুম মানুষ কেবল হ্যায় হিলারি, হ্যায় হিলারি বলে জিকির তুলেছেন। বলছেন, হিলারীর জয় আসছে। কেউ কেউ মান্নাত করছেন খাশি, মুরগি ও টাকা পয়সা। পরিবারের সকলেই এখন টিভি পর্দার সামনে হামলে পড়ছেন।
এ ঘটনা যশারের বারোবাজারের ঋষিপল্লীর। এলাকার ‘হিলারি পাড়ার’ বাসিন্দারা টিভিতে তাদের প্রিয় মানুষটির নির্বাচনী খবর দেখে আনন্দে আত্মহারা। তাদের প্রত্যাশা হিলারি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হবেন। তাকে কাছে পাবে। চিড়া-মুড়ি ভেজে খাওয়াতে পারবে। যেমন হয়েছিল ২০ বছর আগে। তৎকালীন মার্কিন ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটন মেয়ে চেলসিকে নিয়ে এসেছিলেন এই গাঁয়ে। বসেছিলেন মাটির ঘরে। শেফালী, রমা আর পাচিদের হাত ধরে নেচেছিলেন বাঁশের তৈরী মাচার ওপর।
সেদিনের সেসব স্মৃতি রোমন্থন করে আজো আবেগে আপ্লুত হন এই পাড়ার নারী পুরুষ। তারা স্বপ্ন দেখছেন তাদের প্রিয় সেই মানুষটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে আবার তাদের মাঝে আসবেন। তারা তাকে সাধ্যমতো আপ্যায়ন করাবেন। আজ মঙ্গলবার দুপুরের ঋষিপাড়ায় গিয়ে বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেল তাদের মনের কথা। তারা বললেন, যখনই টিভির খবরে তারা হিলারির ছবি দেখতে পান তখনই তারা হাত তালি দিয়ে আনন্দে চিৎকার করেন। মুরব্বিরা মনে মনে দোয়া প্রার্থনা করছেন যেন হিলারি জিতে যান। তাহলে হয়তো আবারও তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে। ১৯৯৫ সালের ৩রা এপ্রিল হিলারি ক্লিনটন তাদের গ্রামে এসেছিলেন। অনেকে হিলারির সঙ্গে তোলা ছবি যতœ করে ঘরের দেওয়ালে ঝুলিয়ে রেখেছেন।
নিজের বাড়িতে বসে নারকেলের পাতা থেকে শলাকা বের করছিলেন শেফালী দাস (৫০)। দু’রুমের সেমি পাকা বাড়ির উঠোনে বসে কাজ করছিলেন তিনি। বাইরে থেকে ডাক দিলে তিনি ভেতরে যেতে বলেন। পরিচয় শুনে বসতে এগিয়ে দেন প্লাস্টিকের টুল।
শেফালী দাস থাকেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মহিষাহাটি ঋষী পল্লী এলাকায়। যে এলাকার নাম প্রায় ২০ বছর আগে ‘হিলারি আদর্শপাড়া’ হিসেবে পরিচিতি পায়। লোকজনের মুখে তখন উচ্চারিত হতো হিলারি পাড়া!
শেফালী দাসের বাবার বাড়ি যশোর সদরের চুড়ামনকাঠি এলাকায়। তার মায়ের বান্ধবীর ছেলে গোবিন্দ দাস (৫৭)। গোবিন্দ দাস তার স্বামী। পেশায় চর্মকার।
শেফালী বললেন, বছর ২০ আগে তাদের এখানে এসেছিলেন হিলারি ক্লিনটন। সঙ্গে ছিলেন গ্রামীণ ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, হিলারি আসার আগেই এসেছিলেন ড. ইউনূস। বাড়ির পাশে খোলা জায়গায় ক্যাম্প করা হয়েছিল। সেখানে তৈরী বাঁশের মঞ্চে এ পাড়ার মানুষ হিলারিকে বরণ করতে নানা আয়োজন করেছিল। হিলারিকে শেফালী আর রমা মুড়ি ভেজে খাইয়েছিলেন। হিলারি তাদের হাত ধরে নেচেছিলেন। সেই হিলারি এবার নির্বাচন করছে। এ খবর তারা কয়েকদিন আগে জানতে পেরেছেন। টিভিতে খবর শুনেছেন। তারা চান হিলারি নির্বাচনে জিতুক।
মহিষাহাটি ঋষিপাড়ায় যার জমিতে হিলারিকে বরণ করতে মঞ্চ তৈরী হয়েছিল তিনি নীলকান্ত দাস (৮৫)। তিনি বাঁশের চটা তৈরি করছিলেন ঝুঁড়ি বোনার জন্যে। হিলারির প্রসঙ্গ উঠতেই তিনি ক্যাম্পাসলাইভকে বললেন, উনি তো আমাদের গাঁয়ে এসেছিলেন। নির্বাচনে যদি উনি জেতেন তবে আমাদের ভালো লাগবে। হয়তো আরো একবার আমাদের গাঁয়ে আসবেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে বললেন, নির্বাচন হচ্ছে মার্কিন মুল্লুকে। আমাদের দোয়া কি সেখানে পৌঁছাবে। তার পরও আমরা চাই উনি জিতুন। তাহলে আমরা খুশি হবো।
এই ঋষী পল্লীতে এখন প্রায় ১২০টি পরিবার থাকে। তাদের প্রায় সকলেই পৈত্রিক পেশা চর্মকার। সেই হিসেবে তারা কাজ করেন। অনেকে ক্ষেত-খামারে। এই এলাকার দু’একজন বিভিন্ন এনজিওর কাছ থেকে ঋণের পাশাপাশি সুদে টাকা নিয়ে তারা খারাপ অবস্থায় আছে। আবার ঋণ নিয়ে সেই টাকা কাজে লাগিয়ে অনেকেই বাড়িঘর বা জমি কিনে ভাল আছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৫ সালের ৩ এপ্রিল কালীগঞ্জ উপজেলার মহিষাহাটি ঋষি পল্লীতে গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ কার্যক্রম দেখতে আসেন আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের স্ত্রী ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটন। তারপর থেকেই ওই এলাকার নামকরণ করা হয় হিলারি আদর্শপাড়া। সময়ের আবর্তে এক সময়ের হিলারি পাড়া এখন আবার ঋষী পল্লী নামেই পরিচিত।
তাদের আবেগ আর অনুভুতিতে কেবলই হিলারি।
ঢাকা, ৮, নভেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এএম
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: