লাইভ প্রতিবেদক: সন্ধান মিলেনি নর্থ সাউথের শিক্ষক সিজারের। তার মা পাগল প্রায়। কেউ কোন সন্ধান দিতে পারেননি। তিনি বেঁচে আছেন না মারা গেছেন কেউ জানেন না।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোবাশ্বার হাসান সিজার নিখোঁজ হয়েছেন গত ৭ নভেম্বর। আজ পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। গত এক মাসেও তার কোন হদিছ মিলেনি।
সিজার নিখোঁজের পর থেকে করুণ-কঠিন সময় অতিবাহিত করছেন তার মা-বাবা ও একমাত্র বোন। সিজারের মা পথ চেয়ে আছেন ছেলে বাসায় ফিরবে। ছেলের কক্ষটি প্রতিদিন পরিষ্কার করেন। জামা রোদে শুকাতে দেন।
কিন্তু ছেলে আর ফেরে না। দুই সন্তানের মধ্যে একমাত্র ছেলে সিজারকে ফিরে পেতে মা লিখেছেন একটি খোলা চিঠি। চিঠিটি সিজারের বোন তামান্না তাসনিমের ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছে। সিজারের মা লিখেছেন: ‘বাসার কাছে কোনো গাড়ি স্লো হলে মনে হয় সামনে থামবে।
হাসিমুখে ও গাড়ি থেকে বের হয়ে ওপরের দিকে তাকাবে ভাড়ার জন্য। ও কিসে করে আসবে? উবার নাকি সিএনজিচালিত অটোরিকশা? আমি চিৎকার করে নিচে নেমে যাব। নিমেষে ভুলে যাব আমার অসহনীয় হাঁটুব্যথার কথা। কিন্তু, নাহ! আমার এই স্বপ্ন কিছুতেই পূরণ হচ্ছে না।
একই কাপড়ে রয়েছে ২৮টি দিন। ওর প্যান্ট-শার্ট আয়রন করিয়ে রেখেছি। ও ঠাণ্ডা একেবারেই সহ্য করতে পারে না। তাই ওর কাপড়গুলো রোদে দিয়ে রেখেছি। প্রতিদিনই ওর ঘরের আসবাব, বিছানা সব ঝেড়ে মুছে পরিষ্কার করে রাখছি।
নিমগাছ বাসায় থাকা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। ওর ব্যালকনির নিচে লাগানো নিমগাছটা বড় হয়ে ছাদ স্পর্শ করছে। কিন্তু ওই গাছের বাতাস এখন আর ওর গায়ে লাগছে না। ওর অনুপস্থিতিতে আমরা সবাই ম্রিয়মাণ। আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সবাই খোঁজ রাখছে।
অতিথিপরায়ণ ও বন্ধুবৎসল এই আমার এখন আর কারও ফোন ধরতে ইচ্ছা করে না। কারও সঙ্গে কথা বলতেও ইচ্ছা করে না। একই কথা কতবার বলব?
নাহ! ওর কোনো খবর নেই। সিজুর (সিজার) আনন্দের দিন হতো যখন আরিয়ানা ঘণ্টা খানেকের জন্য আমাদের বাসায় আসত। ওর সঙ্গে বাড়ির ইট-কাঠগুলোও যেন হেসে উঠত। ও আমাদের পোষা কোয়েল পাখিগুলোকে খাবার ছিটিয়ে দিয়ে খিলখিল করে হেসে উঠত। তামান্নার পোষা বিড়ালটাকে বাগে আনতে না পেরে বিরক্ত হতো। লোশনের সঙ্গে পাউডার তৈরি করে আমাদের খেতে দিত। মিছি মিছি সেটা খেয়ে আরিয়ানাকে খুশি করতে হতো। ওর অবুঝ দুষ্টুমিতে আমাদের বাসায় বয়ে যেত উৎসবের আমেজ আর সে সময় আমার সিজুকে মনে হতো পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ।
জানি না, কেউ ওকে নিয়ে গেছে কি না। যদি কেউ ওকে নিয়ে থাকেন, তাহলে বলব- বিশ্বাস করেন, ও কখনো কারও উপকার ছাড়া অপকারের চিন্তা করতে পারত না। আমি মা বলে বলছি না। ও নিখোঁজ হওয়ার পর এত মানুষের আকুলতা সেটাই প্রমাণ করে।
যদি কেউ আসলেও ওকে আটকে থাকেন, তাদের বলছি, আমি অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে দোয়া করি, যেন আল্লাহ আপনাদের মায়েদের আপনাদের নিজ বুকে টেনে নেওয়ার অফুরান তৌফিক দান করেন।
ইদানীং আমার ভয় হয়। আমাদের এই গলিতে যেন মৃত্যুর মিছিল হানা দিয়েছে। ঈদুল আজহার আগের দিন না–ফেরার দেশে চলে গেলেন আমাদের পাশের প্রতিবেশী। প্রায় দিন দশেক আগে চিরবিদায় নিলেন আমার বাম পাশের বাড়িওয়ালী। তবে এবার কি আমাদের পালা?
ইনশাআল্লাহ ও হয়তো ফিরে আসবে। কিন্তু ও এসে কি আমাদের দুজনকে (বাবা-মা) দেখতে পাবে? আমি আমার চোখ মোছা বন্ধ করে দিয়েছি। চোখ মুছলেও তো পানি মুছে না, ঝরতেই থাকে। শুধু লোকজনের সামনে চোখ মুছে এসে কথা বলি। কথাতো একটাই-নাহ! কোনো খবর নেই।
ওর বাবা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, আমি বৃথা অশ্রু সংবরণ করার চেষ্টা করি, মেয়েটা বিষণœ মুখে আশপাশে ঘোরে। কেউ কি আছেন যে পারেন একটা হতাশাগ্রস্ত পরিবারকে আশার আলো দেখাতে? কেউ কি পারেন ওকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিতে? ফিরিয়ে দিন না আমার ছেলেটাকে, আমার কোলে। আল্লাহর অশেষ রহমত থাকবে আপনার ওপর।
- ইতি মোবাশ্বারের আম্মু’।
ঢাকা, ০৫ ডিসেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এআই
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: