Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | বুধবার, ১৫ই মে ২০২৪, ১লা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার গল্প

প্রকাশিত: ১ অক্টোবার ২০১৭, ২০:০০

দিনাজপুর লাইভ : মোহাম্মদ আলীর বাড়ি দিনাজপুর জেলার কাহারোলে। ১নং ডাবোর ইউনিয়নের ডহচী গ্রামের মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে তিনি। ভিটেমাটি না থাকায় বড় হয়েছেন আশ্রয়ণ প্রকল্পে থেকে। সেখানেও তিনি মেধার স্ফূরণ ঘটিয়েছেন। দিনমজুরি করেও ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছেন তিনি।

স্বপ্ন সফল হলেও তার চোখেমুখে এখনও হতাশার ছাপ। ঢাবিতে চান্স পেলেও তিনি সেখানে ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। অর্থের অভাবে তার উচ্চশিক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বাবা নেই। মাকে নিয়েই সংসার তাদের।

জানা গেছে, মোহাম্মদ আলী ডহচী গ্রামের মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে। বাড়ীর ভিটেমাটি না থাকায় আশ্রয় নেন কাহারোল উপজেলার ডহচী মধুহারী আশ্রয়ন প্রকল্পে। ৩য় শ্রেণীতে লেখাপড়ার সময় বাবা চলে যান না ফেরার দেশে। তখন মা মসলিমা বেগম বড় বোন রওশন আরা বেগম ও মোহাম্মদ আলীকে নিয়ে সংসার চালাতে বিপাকে পড়েন। মা মসলিমা বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসারের হাল ধরেন। এভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ করেন মোহাম্মদ আলী।

পরে স্থানীয় জয়নন্দ এসসি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন তিনি। বিবাহ যোগ্য বড় বোনকে দেওয়ার জন্য মা টেনশনে পড়ে যান। তাই ৭ম শ্রেণি থেকে মায়ের সঙ্গে দিনমজুরের কাজ শুরু করেন মোহাম্মদ আলী।

সপ্তাহে দুই দিন স্কুলে যেতেন আর নিয়মিত পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতেন। অবশেয়ে মা-ছেলের উপার্জিত টাকায় ৫ বছর আগে বোন রওশন আরার বিয়ে দেওয়া হয়। মায়ের দুশ্চিন্তা তখন কিছুটা কমে আসে।

এর মধ্যে ২০১৫ সালে এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে ৪.৯৪ জিপিএ পয়েন্ট নিয়ে উত্তীণ হন মোহাম্মদ আলী। পরে এলাকায় জয়নন্দ ডিগ্রি কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হন তিনি। এর পাশাপাশি চলে দিনমজুরের কাজ।

মোহাম্মদ আলী জানান, সারাদিন মাঠে ক্ষেত খামারে কাজ করে রাত জেগে পড়াশোনা করতেন তিনি। ইচ্ছে ছিল ভাল করে পড়াশোনা করলেই একমাত্র জীবন সংগ্রামের পরিবর্তন হতে পারে। ২০১৭ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় ৪.৮৩ জিপিএ পয়েন্ট নিয়ে উত্তীর্ন হন তিনি। তার অনেক বন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কোচিং করার জন্য ঢাকা শহরে পাড়ি জমায়।

তারও ইচ্ছে ছিল, কিন্তু উপায় ছিল না। হঠাৎ একদিন মনে হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা করতে পারলে তার জীবনে পরিবর্তন আসতে পারে। কিন্তু সাধ থাকলেও সাধ্য নেই। সেই স্বপ্ন নিয়ে এলাকার এক ভাইয়ের কাছে পরামর্শ নেন। ফরম কেনার টাকাও ছিল না। স্থানীয় জাহাঙ্গীর ভাই তাকে ৫শ’ টাকা দিয়েছিল। ওই টাকা দিয়ে ফরম পূরণ করে পাঠিয়েছিলাম। এরপর রাত জেগে কোচিং ছাড়াই প্রস্তুত নেয়া শুরু করেন তিনি।

এরপর স্থানীয় এক শিক্ষকসহ কিছু লোকের সহায়তায় এবং বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া স্থানীয় কিছু ছাত্রের সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটে পরীক্ষায় অংশ নেন মোহাম্মদ আলী। ‘খ’ ইউনিটের অধীনে তার মেধাক্রম ৬৬৮ সিরিয়াল। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেও এখন চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন মোহাম্মদ আলী ও তার মা মসলিমা বেগম। ভর্তির টাকা কোথা থেকে আসবে জানেন না মোহাম্মদ আলী। তবুও তিনি স্বপ্ন দেখছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মেধার স্ফূরণ ঘটিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। এ জন্য বিত্তবান ও হৃদয়বানদের সহযোগিতা কামনা করেছেন দরিদ্র মেধাবী ছাত্র মোহাম্মদ আলী।


ঢাকা, ০১ অক্টোবর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//সিএস


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ