ঢাবি লাইভ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ‘জেন্ডার সমতা ও সমনাগরিকত্ব প্রতিষ্ঠায় গণতান্ত্রিক ও ইহজাগতিক মূল্যবোধ’ বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (৯ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের আর. সি মজুমদার মিলনায়তনে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস)-এর উদ্যোগে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
উক্ত সেমিনারে সভাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের (বিএনপিএস) নির্বাহী পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট নারীনেত্রী রোকেয়া কবীর। সেমিনারে আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. এ. আই মাহবুব উদ্দীন আহমেদ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন এবং শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. তৌহিদুল ইসলাম।
শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস ডিপার্টমেন্টের সহযোগী অধ্যাপক আবু হাসনাত মো. কিশোয়ার হোসেন। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন পপুলেশন সায়েন্সেস ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী মনিরুজ্জামন মাজেদ এবং জান্নাতুন নূর তুলি। সেমিনারটির সঞ্চালনা করেন বিএনপিএস-এর পরিচালক শাহনাজ বেগম সুমী।
সভাপ্রধানের বক্তব্যে রোকেয়া কবীর বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে মুক্তিযুদ্ধে নারী-পুরুষসহ সকল জনগোষ্ঠীর সমান অংশগ্রহণে। মুক্তিযুদ্ধকালে গঠিত মুজিবনগর সরকারের স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মূলনীতি ছিল সমতা, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার। সংবিধান রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের সমান মর্যাদা দিয়েছে এবং ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, লিঙ্গ বা জন্মস্থানের কারণে রাষ্ট্র কারো প্রতি কোনো বৈষম্য করবে না বলে অঙ্গীকার করেছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পরেও এখনো ঐতিহ্যগতভাবে সম্প্রীতিপূর্ণ এই দেশটিতে ধর্মের ভিত্তিতে মানুষে-মানুষে বিভাজন সৃষ্টি করে বিদ্যমান পুরুষতান্ত্রিক বৈষম্যমূলক ব্যবস্থাকে আরো জোরদার করা হচ্ছে। ধর্মকে সুকৌশলে রাজনীতিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য অসহিষ্ণুতা ও সহিংসতার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টি ও জনমত গড়ে তোলা খুবই জরুরি। যুবসমাজ এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
অধ্যাপক ড. এ. আই মাহবুব উদ্দীন আহমেদ বলেন, ছোটবেলা থেকেই পরিবার ও সমাজে পিতৃতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা ও সামাজিকীকরণের মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠার ফলে আমাদের মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ তৈরি হয়নি। এ কারণে জনগণের অংশগ্রহণমূলক প্রতিনিধিত্ব মেনে নেওয়ার মানসিকতা সমাজে তৈরি হয়নি। সমাজের বিদ্যমান এসব বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গির মূল কারণগুলো খুঁজে বের করা জরুরি। সেই কারণগুলোর মূল উৎপাটনে তরুণ সমাজকেই কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।
অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন বলেন, নারী-পুরুষের বিদ্যমান বৈষম্য তো আছেই। এছাড়াও ট্রান্সজেন্ডার জনগোষ্ঠীও নানান ধরনের বৈষম্যের শিকার। এ সকল বৈষম্য নিরসনে রাষ্ট্রকে উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি জনগণকেও দায়িত্ব নিতে হবে।
সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. তৌহিদুল ইসলাম, বর্তমান সময়ে তরুণ সমাজের মধ্যে সম্প্রীতি ও সহিষ্ণুতার ব্যাপক অভাব লক্ষণীয়। বৈচিত্র্য এবং বহুত্ববাদকে গ্রহণ করার প্রবণতাও কম। এ কারণে সমাজে বিভিন্ন ধরনের দ্বন্দ্ব ও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। যে কোনো ধরনের উড়ো কথা শোনা মাত্র তা নিয়ে ঝাঁপিয়ে না পড়ে আমাদের প্রশ্ন করা শিখতে হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর দায়িত্ব হলো সংখ্যাল্পদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য চেষ্টা করা। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী ও তরুণ সমাজের ভূমিকা রাখতে হবে।
সেমিনারটির শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্যে পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবু হাসনাত মো. কিশোয়ার হোসেন বলেন, নারীর প্রতি বৈষম্য নতুন নয়। অতীতকাল থেকে তা চলে আসছে তবে বর্তমানে নারীর প্রতি বৈষম্য ও সহিংসতার ধরণ পাল্টেছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এসডিজি) নারীর প্রতি বৈষম্য নিরসনের জন্য সুনির্দিষ্ট টার্গেট রয়েছে। বাংলাদেশ আগের চাইতে এ ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়েছে তবে এখনো আমরা কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারিনি। বেগম রোকেয়ার ‘সুলতানার স্বপ্ন’ পূরণ করতে চাইলে কন্যাদের জাগ্রত হতে হবে। তবে কন্যাদের নয়, বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে দেশের সব নাগরিককে ভূমিকা রাখতে হবে।
ঢাকা, ০৯ মে (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমজেড
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: