ঢাবি লাইভ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি, বিক্ষোভ মিছিল ও মশাল মিছিল করেছে সাধারণ শিক্ষার্থী, ছাত্র অধিকার পরিষদ ও ছাত্র ইউনিয়নসহ ছোটখাট ছাত্রসংগঠন গুলো। তারা স্বতন্ত্রভাবে বিক্ষোভ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রুবিনা আক্তার নামে এক নারীকে ধাক্কা দিয়ে দেড় কিলোমিটার টেনে নিয়ে যায় এক প্রাইভেটকার চালক।
পরে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। সেই গাড়ির চালক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই সাবেক শিক্ষক। ক্যাম্পাসের ভেতরে এমন মর্মান্তিক ঘটনায় শিক্ষার্থীরা নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এ নিয়ে সকল শিক্ষক, সাধারণ শিক্ষার্থী, ছাত্র অধিকার পরিষদ ও ছাত্র ইউনিয়ন স্বতন্ত্রভাবে শঙ্কিত।
সংশ্লিস্টরা জানান, শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীরা। আগে বিভিন্ন প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠন টিএসসিসহ বিভিন্ন এলাকায় মশাল মিছিল করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন ছাত্র অধিকার পরিষদ ঢাবি শাখা।
পরে সবাই উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থানরত নারী শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে সংহতি জানান। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে শামসুন নাহার হল সংসদের সাবেক ভিপি শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি, শিক্ষার্থী মনিরা শারমিন, আরমানুল হক, আরিফুল ইসলাম, আশরেফা খাতুন, দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী, সাকিবুর রনি, আবদুল্লাহ আল নোমান, গোলাম আজম, মোহাম্মদ রামিম খান, আদনান আজিজ চৌধুরী, রাজিব কান্তি দাস, আহামেদউল্যাহ সিয়াম উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন বলে সংশ্লিস্টরা জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে আফরোজ ইমি বলেন, ক্যাম্পাসে যে ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে, কোনো সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে তা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। সড়ক দুর্ঘটনা, চুরি, ছিনতাই, নারী নিপীড়ন এগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অহরহ হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশাসন তেমন কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
তারা বলেন, এটা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে চলতে দেয়া যায় না। এটা কাম্যও নয়। এভাবে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিয়ে দিনের পর দিন চলতে পারে না। আমাদের বহুদিনের দাবি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগত যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ, কিন্তু প্রশাসন কখনোই এই বিষয়ে কোনো ভ্রুক্ষেপ করেনি। একে তো তারা আমাদের শিক্ষার সুস্থ পরিবেশ দিতে পারে না।
অন্যদিকে আমাদের নিরাপত্তা দিতে পারে না তারা, শুধু পারে শিক্ষক হয়ে যাওয়ার পর নিজেরা বাংলো নিয়ে রাজনীতি করতে। এই ধরনের প্রশাসন ও ভিসি এবং শিক্ষক আমরা চাই না। আমরা চাই শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরের রাস্তা সিটি কর্পোরেশন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আওতায় আনা, ক্যাম্পাসের প্রত্যেক প্রবেশমুখে চেকপোস্ট বসানো ও ক্যাম্পাসে অনিয়ন্ত্রিত যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ ও অভ্যন্তরীণ যানবাহনের ক্ষেত্রে চলনসীমা নির্ধারণসহ বিভিন্ন দাবি জানান তারা।
এদিকে ছাত্র অধিকার পরিষদ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার এবং নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় রাজু ভাস্কর্যে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। তারপর নিয়ে শেষে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তারা সংহতি জ্ঞাপন করেন।
ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবকের বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
তিনি আরো বলেন, এভাবে চারদিকে যানজট, পাগল, ভবঘুরের আড্ডাখানা করে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় বানানো সম্ভব? আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানাবো- প্রশাসন যেন একটি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত ক্যাম্পাস উপহার দিতে বদ্ধপরিকর হয়।’
অন্যদিকে ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে মশাল মিছিল করা হয়। এ সময় ক্যাম্পাসে ব্যক্তিগত গাড়ির অবাধ চলাচল বন্ধ ও গতিসীমা নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। তারা জানিয়েছেন এটা অচিরেই করতে হবে। নইলে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
এই নির্মম ঘটনার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. একেএম গোলাম রব্বানী জানান, আমাদের ক্যাম্পাস চারপাশে খোলা থাকে। ফলে যে কেউ নির্বিঘ্নে প্রবেশ করতে পারে। একান্ত কাজ না থাকলে কেউ যেন ক্যাম্পাসে না আসে। আমরা সবার সহযোগিতা চাই। আমরাও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা চাই।
এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। ক্যাম্পাস নিরাপদ করার জন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় সেটা নিয়ে আমরা ভাবছি। আমাদের শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন করছে তা যৌক্তিক, তাদের দাবি আমলে নিয়ে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব।
গাড়িচাপায় এভাবে একজন নারীর মৃত্যুকে অমানবিক ও মর্মান্তিক। এর আগে সন্ধ্যায় রমনা জোনের ডিসি মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ‘খুবই অমানবিক ও মর্মান্তিক একটি ঘটনা ঘটেছে। চালক সুস্থ হলে আমরা তাকে জিজ্ঞেস করব, কেন তিনি এমন করেছেন। তিনি এখনও চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন। আমরা এখনও তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি।
একটি ফোন নম্বর পেয়েছিলাম তার স্ত্রীর। কিন্তু কল দিলে রিং হয়, কল ধরেনি, পরে মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় মামলা করা হবে।’ আমরা আইনগত সব ধরনের ব্যবস্থা করতে চাই। কোন ছাড় দেয়া হবে না।
ঢাকা, ০২ ডিসেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএল
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: