ঢাবি লাইভ: ছাত্রলীগ না করে বামপন্থী সংগঠন করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক শিক্ষার্থীকে মধ্যরাতে ৩ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ ও হেনস্তা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি রাতেই ওই শিক্ষার্থীর মা-বাবাকে ফোন করে তাদের ছেলেকে নিয়ে যাওয়ার হুমকিও দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম সামির সাদিক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ফেডারেশনের আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য। তিনি মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ২২৩ নম্বর কক্ষে থাকেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) হল প্রাধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অপরদিকে অভিযুক্ত ২ ছাত্রলীগ নেতা হলেন- মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আহমদুল্লাহ আশরাফ এবং পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক রেজভী হাসান (দুজনই ভুক্তভোগীর রুমমেট)। জানা গেছে, তারা দুজনেই হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আজহারুল ইসলাম মামুনের অনুসারী বলে।
লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সামির জানান, সোমবার রাত ১ টায় আহমদুল্লাহ আশরাফ ও রেজভী হাসান আমার কক্ষে প্রবেশ করে। এসময় আমার বইপত্র, ফোন সার্চ করা শুরু করে এবং আমার কাছে গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক প্রস্তাব, ছাত্র ফেডারেশনের গঠনতন্ত্রসহ অন্যান্য বই পেয়ে তারা সারারাত ধরে মানসিক টর্চার করেন। এসময় মারধরের হুমকী দেয়। এমনকি তারা আমার বাবা-মাকে ফোন দিয়ে আমাকে নিয়ে যেতে বলে। অন্যথায় তারা আমাকে মেরে হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকী দেয়।
অভিযোগে আরও বলেন, এর ফলে আমার বাবা-মাও সারারাত দুশ্চিন্তায় ছিলেন। পরে তারা আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে সকালে ঢাকায় এসেছেন। তারা আমার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। আমি নিজেও আমার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। আমি অবিলম্বে প্রশাসনের কাছে কাছে, আমাকে এবং আমার বাবা-মাকে যে মানসিক নির্যাতন করেছে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই এবং হলে আমার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানাই।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত আহমদুল্লাহ আশরাফকে কল দিলে তিনি আরেক ছাত্রলীগের নেতার কাছে ফোন ধরিয়ে দেন। ফোন নিয়ে তিনি জানান, সামিরের কাছে বিদ্রোহী বই পাওয়া গেছে এবং। ও খারাপ কিছুরে সাথে সম্পৃক্ত আছে বলে আমাদের সন্দেহ হয়েছে।
তার কারণে যদি বাকি শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হয়, তাহলে হলে থাকতে পারবে না।
হলে রাখা বা নামিয়ে দেওয়ার অনুমোদন তার আছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, না, এ অধিকার আমাদের নেই, আমরা এ অথরিটি না।
ঘটনা সম্পর্কে জানতে আরেক অভিযুক্ত রিজভীর সাথে যোগাযোগ করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে হল ছাত্রলীগের সভাপতি আজহারুল ইসলাম মামুন জানান, যে দুইজনের নামে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে তারা দুইজনই তার রুমমেট। এখানে হল ছাত্রলীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাকে কেউ নির্যাতন করেনি, হল থেকে বেরও করেনি। বাবা-মাকে ডেকে আনার যে অভিযোগ সেটাও মিথ্যা। তার কাছে ইসলামি বই এবং বাম সংগঠনের বই দেখে শুধুমাত্র জানতে চেয়েছে এটুকুই।
এ প্রসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন জানান, অভিযোগ পাওয়ার আগেই আমি বিষয়টার সমাধান করে দিয়েছি। সামিরের সাথে আমার কথা হয়েছে। তার বাবার সাথেও কথা হয়েছে। কেউ কোনো সমস্যা করবে না। বর্তমানে সামির হলে আছে, হলেই থাকবে।
ঢাকা, ২৬ অক্টোবর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমজেড
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: