Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | সোমবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৪, ১৬ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com
এঘটনায় প্রক্টর জড়িত, নিন্দা

যে কারণে ঢাবি অধ্যাপকের ব্যক্তিগত নথি তল্লাশি

প্রকাশিত: ২২ অক্টোবার ২০২২, ০৬:২৭

যে কারণে ঢাবি অধ্যাপকের ব্যক্তিগত নথি তল্লাশি

ঢাবি লাইভ: এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত অধ্যাপক একেএম গোলাম রব্বানীর পদত্যাগ চাওয়ায় আন্তর্জাতিক বিভাগের এক অধ্যাপকের ব্যক্তিগত নথি তলবের অভিযোগ উঠেছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ওই অধ্যাপকের নাম তানজীমউদ্দিন খান। তার ব্যক্তিগত নথি তল্লাশির ঘটনা ঘটেছে। এনিয়ে তোলপাড় চলছে ক্যাম্পাসজুড়ে। স্বাভাবিক ভাবে এধরনের ঘটনা ঘটে না। আর ওই ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত আছেন ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী। তার নির্দেশে ওই শিক্ষকের ব্যক্তিগত নথিপত্র তল্লাশী করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান। আরো জানাগেছে ওই ঘটনায় একই দিন সন্ধ্যায় তার স্থায়ী ঠিকানায় পুলিশ দিয়ে খোঁজ নেওয়া হয়েছে।

এদিকে গেল বুধবার (১৯ অক্টোবর) উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছেন। লিখিত ওই অভিযোগে ড. তানজিমউদ্দিন খান লিখেন, গত ১৭ অক্টোবর ২০২২ উপাচার্যকে শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি দিয়ে আসি সাড়ে ১২টা-১টা নাগাদ।

বিকাল সাড়ে তিনটা নাগাদ প্রক্টর অফিস থেকে দুজন কর্মচারী আমার বিভাগের অফিসে যায়। তারা প্রক্টরের কথা জানিয়ে আমাদের বিভাগের অফিস কর্মকর্তার কাছে স্থায়ী ঠিকানা এবং বর্তমান ঠিকানাসহ ব্যক্তিগত কিছু তথ্যের খোঁজ করে। যদিও গতকাল (১৮ অক্টোবর ২০২২) আমাদের অফিস কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, প্রক্টর অফিসে দুইজন আমার “পারসোনাল ফাইল” এর খোঁজ করেছিল!

ওই লিখিত অভিযোগে আরও বলেন, আমার যাবতীয় তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে সুরক্ষিত থাকার কথা! কোনো তথ্য দরকার হলে রেজিস্ট্রার অফিসই যথেষ্ট নয় কি? কোন ক্ষমতাবলে প্রক্টর একজন শিক্ষকের ব্যক্তিগত তথ্যের খোঁজ এভাবে নিতে চায়?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩ এর অধ্যাদেশ, যা প্রক্টর অফিসের ওয়েবসাইটে বর্ণিত আছে, সেই অনুযায়ী, শিক্ষকদের ক্ষেত্রে প্রক্টরের এ রকম কোনো অধিকার কিংবা এখতিয়ার নেই!

কোনো তথ্যের প্রয়োজন হলে আমার সঙ্গে সহজেই সরাসরি বা রেজিস্ট্রার অফিসে যোগযোগ করা যেত। কিন্তু অত্যন্ত অশিক্ষকসুলভ এবং অন্য কোনো দুরভিসন্ধি নিয়ে এ রকম অগ্রহণযোগ্য কাজটি করা হলো প্রক্টর অফিস থেকে! ঘটনা এখানেই থেমে থাকলেও হতো! ঘটনার দিনই রাত পৌনে সাতটায় আমার স্থায়ী ঠিকানায় একজন পুলিশের এসআই গিয়ে উপস্থিত হয়!

তিনি জানান, ‘ভেরিফিকেশন’ এর জন্য এসেছেন। আমি খবর পেয়ে ফোনে কথা বললে, তিনি জানান, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের একটা তালিকা করা হচ্ছে! ড. তানজিমউদ্দিন খান ওই লিখিত নিন্দাতে প্রক্টরের বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ এনেছেন। প্রথমত প্রক্টর এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে শিক্ষকের তথ্যের জন্য কর্মচারী পাঠিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা ভঙ্গ এবং তৃতীয়ত, মানসিক হয়রানি করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান বলেন, ‘প্রক্টরের এমন কর্মকাণ্ড একজন শিক্ষক হিসেবে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতির সঙ্গে যায় না। তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো গবেষণা-প্রকাশনা মেলা হচ্ছে। এটি খুবই ভালো একটি উদ্যোগ। কিন্তু আমি এতে অংশ নেব না। সেখান থেকে আমি আমার সব কাগজপত্র নিয়ে এসেছি।

প্রক্টরের এমন আচরণের জন্য এ মেলায় আমার কোনো কিছু আমি রাখব না। যেখানে আমার বাক স্বাধীনতা নেই, চিন্তার স্বাধীনতা নেই সেখানে আমার প্রকাশনা রাখার প্রশ্ন উঠে না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘তিনি (তানজীমউদ্দিন খান) কী বলছেন, সেটা তার বিষয়। এখন তিনি যা দাবি করছেন, তা আমার মতে অবান্তর, অপ্রাসঙ্গিক এবং অতিরঞ্জিত। আমাকে না জানিয়ে আমার অফিসের কর্মকর্তা শুধু তার (তানজীম) বাবার নাম জানতে বিভাগে গিয়েছে, বিষয়টি আমার জানা ছিল না।’

বাড়িতে পুলিশ পাঠানোর অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রক্টর বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবগত নয়। তিনি বিষয়টি অতিরঞ্জিত করছেন।’ উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিরোধী মতের শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের ধারাবাহিক হামলা-মামলা এবং তাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সোমবার (১৭ অক্টোবর) উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানকে স্মারকলিপি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।

শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক গীতি আরা নাসরিন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক সামিনা লুৎফা ও অর্থনীতির শিক্ষক রুশাদ ফরিদী।

তিনি বলেন, এটা সবধরনের নৈতিকতা ও আইনবিরোধী। এটা তিনি করতে পারেন না। আর এইঘটনার নিন্দা জানিয়েছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট। বলে এই ধরনের কাজ কেবল আওয়ামী সমর্থকরাই করতে পারে। শুক্রবার এক বিবৃতিতে এই নিন্দা জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি রাজিব কান্তি রায় ও সাধারণ সম্পাদক সুহাইল আহমেদ শুভ।

বিবৃতিতে তারা বলেন, গত ১৭ অক্টোবর প্রক্টর অফিসের দুজন কর্মচারী অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খানের বিভাগীয় অফিসে গিয়ে ব্যক্তিগত ফাইল তল্লাশি করেছেন। এই ঘটনা অনভিপ্রেত, বেআইনি ও এখতিয়ার বহির্ভূত।

জানাগেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা প্রদানে ব্যর্থ প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিসহ চার দফা দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি উপাচার্য বরাবর প্রদান করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।

ভিন্ন রাজনৈতিক দর্শন ধারণ করার কারণে একজন শিক্ষককে এ ধরনের হেনস্তার ঘটনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক চরিত্রের জন্য অশনি সংকেত। এটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়, সারাদেশে স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের অব্যাহত দমন, পীড়ন, জবরদস্তির একটা উদাহরণমাত্র।

তারা আরও বলেন, ক্যাম্পাসে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ কর্তৃক ভিন্ন দল-মতের উপর যে দমন, পীড়ন, সন্ত্রাসের ঘটনাগুলো ঘটছে তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ তো নেয়ই না বরং এই অন্যায়ের প্রতিবাদকারী শিক্ষকরাই হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। পাশাপাশি নেতারা অবিলম্বে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন। বলেছেন এই ঘটনা যারাই করেছে তারা বিশ্ববিদ্যালয়েন শত্রু। এরা বন্ধু হতে পারে না।

ঢাকা, ২১ অক্টোবর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএসসি


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ