Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | রবিবার, ২৮শে এপ্রিল ২০২৪, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

সংকট-সাফল্যের সমন্বয়ে আঠারোতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ২০ অক্টোবার ২০২২, ২১:৩৫

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

রিদুয়ান ইসলাম, জবি: একটি পাঠশালা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে ওঠা শুধু দুঃসাধ্যই নয়, অবিশ্বাস্যও বটে। ঠিক এমনই এক ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী আজকের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। ইতিহাস, ঐতিহ্য ও গৌরবের ১৮তম বর্ষে এসে পৌঁছেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। ২০০৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদ অধিবেশনে 'জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫' উত্থাপিত হয় এবং একই বছরেরই ২০ অক্টোবর সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে জগন্নাথ কলেজকে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ২০ অক্টোবরকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালন করে আসছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নতুন হলেও প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে সুদীর্ঘ দেড়শ বছরেরও পুরনো ইতিহাস। বাংলদেশের ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ৬ দফা ও ১১ দফার আন্দোলন এবং উনসত্তরের গণঅভ্যুথান ও মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি আন্দোলনের ইতিহাসে জগন্নাথের অবদান কখনো অস্বীকার করার মতো নয়। পাকিস্তান আমলে সরকার বিরোধী আন্দোলন করায় প্রতিষ্ঠানটিকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ করে দেয় তৎকালীন সরকার।

এই প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৮৫৮ সালে আরমানিটোলায় ব্রাহ্ম সমাজের নিজস্ব প্রাঙ্গণে চালু করা হয় একটি অবৈতনিক স্কুল। আর্থিক সংকটের কারণে ১৮৭২ সালে মালিকানা পরিবর্তন করে ব্রাহ্ম স্কুলের ভার তুলে দেওয়া হয়েছিল বালিয়াদির জমিদার কিশোরীলাল রায় চৌধুরীর হাতে। পরবর্তী সময়ে ১৮৮৪ সালে এটি দ্বিতীয় শ্রেণির কলেজ এবং ১৯০৮ সালে প্রথম শ্রেণির কলেজের মর্যাদা লাভ করে। এইসময় এটিই ছিলো ঢাকার উচ্চ শিক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। পুরনো ঢাকার নারী শিক্ষায় বাধা দূর করতে ১৯৪২ সালে সহশিক্ষা চালু করা হয়। ১৯৪৮ সালে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৯৬৩ সালে অধ্যক্ষ সাইদুর রহমান পুনরায় সহশিক্ষা চালু করেন। ২০০৫ সালে মহান জাতীয় সংসদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫ পাশের মাধ্যমে এটি একটি পরিপূর্ণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তরিত হয়।

শুধু বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে জবির পরিমাপ করা যাবে না। জবিকে জ্ঞানের সূর্য বলা যায়। যা ১৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কেবল জ্ঞানের আলো দিয়েই যাচ্ছে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, দেশকে উজাড় করে দিলেও বলার মতো দেশ জবিকে কিছুই দেয়নি। জবিকে এখনো অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের লজ্জা বহন করতে হয়। অবকাঠামোগত সমস্যা ও বাজেট বৈষম্যের শিকার বিশ্ববিদ্যালয়টি। শিক্ষার্থীর জন্য নেই পর্যাপ্ত পরিবহন ও ক্যান্টিন সুবিধা। তবে খুশির বিষয় এই যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক। যার মাধ্যমে কেরানীগঞ্জে প্রায় ২০০ একর জায়গার উপর নির্মিত হচ্ছে আধুনিক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

শত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। একটি আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নিজেদের জানান দিতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে জবির শিক্ষার্থী ও শিক্ষার্থীরা। শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টির সকল বিভাগে সেমিস্টার পদ্ধতি চালু রয়েছে। অনেক আগেই ইউজিসির প্রতিবেদনে এ-গ্রেড ভুক্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা লাভ করেছে এই প্রতিষ্ঠানটি। বিসিএস সহ সকল প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সামর্থ্য অর্জন করেছে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ভর্তি পরীক্ষাতে গোপন বার-কোড পদ্ধতি চালু করার মাধমে জালিয়াতি রোধে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের একমাত্র অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো। এই অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তকমা গুচিয়ে ক্যাম্পাসের বিপরীত পাশে বাংলাবাজার সংলগ্ন ছাত্রীদের জন্য ‘বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল’ নামে ১৬ তলাবিশিষ্ট হলে ১২০০ ছাত্রীর আসন ব্যবস্থা করা হয়েছে। আবাসন ও যানবাহন সমস্যায় জর্জরিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মনোবল, সাহস ও পরিশ্রমী মানসিকতা অবাক করে অন্যসব বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের। ব্যয়বহুল ঢাকা শহরের মেস-বাসা-বাড়িতে কষ্টে দিন পার করা সত্ত্বেও তারা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে সর্বদা মাতিয়ে রাখে।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সেবা খাতের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলো পরিবহন। পাঁচ বছর আগেও পরিবহনের জন্য সীমিতসংখ্যক যানবাহন ছিল; বর্তমানে ৫৬টি যানবাহন পরিবহন পুলে বিদ্যমান রয়েছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের অধিকতর পরিবহন সুবিধা দেওয়ার জন্য বিআরটিসি থেকে ভাড়া করা বাসের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য নতুন ক্রয়কৃত ১০টি বাস বিভিন্ন রুটে চালু করার বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ক্যান্টিনটি সংস্কার করে আধুনিক ক্যাফেটিরিয়ায় রূপান্তর করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনের কাজে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ৮৯৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা জমা দেওয়া হয়েছে। ওই প্রকল্পের কাজ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সমন্বয়ে দ্রুত সম্পন্ন করার চেষ্টা চলছে; যাতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন কার্যক্রম এগিয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত সব সমস্যার সমাধান নতুন ক্যাম্পাসে গিয়েই সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।

ঢাকা, ২০ অক্টোবর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমজেড


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ