Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | সোমবার, ৬ই মে ২০২৪, ২৩শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com
সলিমুল্লাহ হলে ছাত্র নির্যাতনের দায়ে...

বহিষ্কৃতদের পদে আনলো ঢাবি ছাত্রলীগ

প্রকাশিত: ১৬ অক্টোবার ২০২২, ০৬:১৩

বহিষ্কৃতদের পদে আনলো ঢাবি ছাত্রলীগ

ঢাবি লাইভ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত থাকার ঘটনায় বহিষ্কৃত নেতাদের ফের ছাত্রলীগের পদে পদায়ন করা হয়েছে। শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হল শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে এসব নেতাদের পদায়ন করা হয়। এছাড়াও হলের গেস্টরুমে শিক্ষার্থী নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত এবং মামলার আসমিও পেয়েছেন পদ।

জানা যায়, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র ওমর ফারুক দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী এহসান রফিকের কাছ থেকে ক্যালকুলেটর ধার নেন। এরপর এহসান রফিক বেশ কয়েকবার ওমর ফারুকের কাছে ক্যালকুলেটর ফেরত চান। কিন্তু ওমর ফারুক ক্যালকুলেটর পরে দেবেন বলে এহসান রফিককে বারবার ফিরিয়ে দিতেন। এভাবে চলতে চলতে ২০১৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ওমর ফারুকের কাছে ক্যালকুলেটর চান এহসান। এ সময় ওমর ফারুক তাকে মারধর করেন।

এরপর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আরিফের মাধ্যমে এহসানকে টিভি রুমে ডেকে নেওয়া হয়। এসময় টিভিরুমে উপস্থিত ছিলেন হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তানিম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আনিম ইরতিজা শোভন ও আবু তাহের। সেখানে তারা এহসানকে শিবির অপবাদ দিয়ে মোবাইলফোন কেড়ে নিয়ে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট চেক করেন। কিন্তু তারা ফেসবুকে কিছুই না পেয়ে জোরপূর্বক শিবির স্বীকারোক্তি আদায়ে এহসানকে বেদম মারধর করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ সময় তারা মৌখিকভাবে এহসানকে হল থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়ে বের করে দেন।

অভিযোগ রয়েছে, ঢাবি ছাত্রলীগের হল শাখার সহ-সম্পাদক ওমর ফারুক ও রুহুল আমিন, সদস্য সামিউল ইসলাম সামী, আহসান উল্লাহ, উপ-সম্পাদক মেহেদী হাসান হিমেলের নেতৃত্বে এহসানকে আরেকদফায় রড- লাঠিসোটা দিয়ে বেদম মারধর করা হয়। মারধরের এক পর্যায়ে এহসান জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। অবস্থা বেগতিক দেখে আরিফ রাত সাড়ে তিনটায় এহসানকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে নিয়ে এসে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তাহসান আহমেদের কক্ষে নিয়ে আসা হয়। এ ঘটনার তথ্য না প্রকাশের জন্য এহসানকে প্রথমে প্রলোভন ও পরে হুমকি দিয়ে আটকে রাখা হয়। পরদিন সকালে এহসানের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে আবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে চিকিৎসা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে এনে একই কক্ষে আটকে রাখা হয়। পরে দুপুর আড়াইটার দিকে হল থেকে পালিয়ে যান এহসান।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর এহসান লিখিত অভিযোগ দেন। এহসান রফিকের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় এসএম হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ওমর ফারুককে (মার্কেটিং বিভাগ) স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়। এছাড়া দুই বছরের জন্য বহিষ্কার হন- শাখা ছাত্রলীগের সদস্য সামিউল ইসলাম সামি (সমাজবিজ্ঞান বিভাগ) ও সদস্য আহসান উল্লাহ (দর্শন বিভাগ), সহ-সম্পাদক রুহুল আমিন বেপারি (গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ), উপ-সম্পাদক মেহেদী হাসান হিমেল (উর্দু বিভাগ) এবং সহ-সম্পাদক ফারদিন আহমেদ মুগ্ধ (লোক প্রশাসন বিভাগ)। মারধরের ঘটনায় প্ররোচনার দায়ে হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আরিফুল ইসলামকে (শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট) এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়।

গতকাল (শুক্রবার) রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন এবং হল শাখার সভাপতি তানভীর সিকদার ও সাধারণ সম্পাদক মিশাত সরকার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে হল ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে দেখা যায় এসএম হলের ছাত্র এহসানকে মারধরের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত আহসান উল্লাহকে এক ১নং সহ-সভাপতি, ফারদিন আহমেদ মুগ্ধকে ৩নং সহ-সভাপতি, সামিউল ইসলাম সামিকে ৪নং যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, রুহুল আমিন বেপারিকে ৫নং সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে।

এছাড়াও নব গঠিত এই কমিটিতে গেস্টরুমে শিক্ষার্থী নির্যাতনের অভিযোগ থাকা আল-ইমরানকে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, ইয়াসিন আরাফাত প্লাবনকে ৩নং সাংগঠনিক সম্পাদক, ইয়াসিন আল শাহিনকে ৯নং সাংগঠনিক সম্পাদক পদ দেওয়া হয়েছে। এদিকে, গত ২৪ মে মারধর ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগ এনে ছাত্রদল নেত্রী মানসুরা ছাত্রলীগের ৩৩ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই মামলার আসামি মো. নাজিম উদ্দিন সাইমুন ১১নং সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পেয়েছেন।

হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর সিকদার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু তাদের বহিষ্কারাদেশ তুলে দিয়েছে, সেক্ষেত্রে আমরা তাদের পদ দিয়েছি। তারা সংগঠনের জন্য ত্যাগী ও যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে পদ পেয়েছেন। তারা একটি ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ও হল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। ওই বহিষ্কারের মেয়াদ শেষ হওয়ায় তারা স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছে যারা জনপ্রিয় তারাই পদে এসেছেন। এমএম হলের ছাত্রলীগের কমিটিতে যারা যোগ্য একমাত্র তারাই পদে এসেছেন। অনেক সময় বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ম শৃঙ্খলার স্বার্থে বহিষ্কার করে থাকে। তাদের বহিষ্কারাদেশ উঠে যাওয়ায় ও বর্তমানে এরকম কাজে জড়িত না থাকায় তাদেরকে উক্ত পদে পদায়ন করা হয়েছে।

ঢাকা, ১৪ অক্টোবর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমএ


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ