Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | সোমবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৪, ১৬ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে পাল্লা দিচ্ছে নিটারের ইইই ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীরা

প্রকাশিত: ৯ আগষ্ট ২০২২, ২২:২৯

নিটারের ইইই ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীরা

নিটার লাইভ: বিরাজমান সমস্যা নিরসনকল্পে নতুন জ্ঞানের উদ্ভাবন ঘটাতে গবেষণার কোনো বিকল্প নেই। গবেষণার সূতিকাগার হিসেবে ধরা হয় দেশের বিভিন্ন উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলোকে। সাভারের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড রিসার্চ (নিটার) এর ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে অংশিদার হওয়ার লক্ষ্যে উদ্ভাবন করেছে নিত্য নতুন প্রযুক্তি। এতে ২য় বর্ষের শিক্ষার্থীদের প্রজেক্ট আয়োজন করা হয়। এখানে মোট ২১ টি প্রজেক্ট প্রদর্শিত হয়। মোট ৫৮ জন শিক্ষার্থী এতে অংশগ্রহণ করেন।

সোমবার (০৮ আগস্ট) নিটারের ইইই ডিপার্টমেন্টের ল্যাবে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে উপযোগী ২১ টি প্রজেক্ট সকাল থেকে শুরু করে বিকেল পর্যন্ত উপস্থাপন করে। এসময় উপস্থিত ছিলেন নিটারের ইইই ডিপার্টমেন্টের প্রধান ও এডমিন ইনচার্জ সহকারী অধ্যাপক মো. মামুন-উর রশিদ, লেকচারার সাখাওয়াত পারভেজ, মুয়াজ রহমান, নিরুপম দাস, রুচিরা তাবাসসুম, ধীমান দে ও ল্যাব সহকারী হাফিজুল রহমান।

ইইই ডিপার্টমেন্ট শিক্ষার্থী হাসিবুল আজাদ শুভ বলেন, আমাদের প্রজেক্টের নাম ওয়াইফাই কন্ট্রোলড আর.সি. কার। যা মূলত ওয়াইফাই দ্বারা চালিত, রোবট গাড়িটি মানুষ পৌঁছাতে পারে না এমন দুর্গম জায়গায় পাঠানো সম্ভব। ভবিষ্যতে এর সাথে সার্ভিলেন্স ক্যামেরা যুক্ত করে ঘরে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে লাইভ ভিডিও দেখে গাড়িটিকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। আমাদের বাকি সদস্যরা হলেন ইসরাত, সানজিদা, কাওসার, সাফি, মিনহাজুর রহমান।

আরেক শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন শান্ত বলেন, আমাদের প্রজেক্টের নাম প্লান্ট ওয়াটেরিং সিস্টেম বেসড অন আইওটি। এই প্রজেক্টের মাধ্যমে আমরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে মাটির আর্দ্রতা পরিমাপ করে গাছে পানি দিতে পারব।

যেমন হর্টিকালচার, বাগান, জাতীয় কোন বৃক্ষ প্রজেক্টগুলোতে অবস্থান না করেও গাছগুলোতে পানি দিতে পারব। ময়েস্চার সেন্সর স্বয়ংক্রিয়ভাবে মাটির আর্দ্রতা পরিমাপ করে এই কাজটি করবে। যেটি আমরা ঘরে,অফিসে বসেও অনলাইন এর মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করতে পারব মাটির আর্দ্রতা কেমন। পাশাপাশি নিজেরাও ম্যানুয়ালিভাবে অনলাইনে মটর অন করে পানি দিতে পারব।বড় কোন ছুটিতে অনেকের শখের বাগানে এই প্রজেক্টের মাধ্যমে গাছে পানি দিয়ে বাগানটি সজীব রাখতে পারবে। আমার টিমের বাকি সদস্যরা হলেন মুনায়েম, আকিবুর, মাহমুদুল, উল্লাস।

তমাল ব্যানার্জী জানান, আমাদের প্রজেক্টের নাম অটোমেটিক অন বা অফ সোলার রিচার্জেবল স্ট্রিট লাইট। বর্তমান বাংলাদেশের প্রক্ষাপটে নবায়নযোগ্য শক্তি কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে আমরা তা দেখতে পাচ্ছি। আমাদের স্বয়ংক্রিয় সোলার রিচার্জেবল লাইট সেরকমই একটি যুগোপযোগী প্রজেক্ট। যা আমরা ঘরে বাইরে যেকোনো জায়গায় যেকোনো ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারি। অনেক কম খরচের মধ্যে সোলার পাওয়ারকে চার্জ হিসেবে ব্যাটারি তে সংরক্ষণ করতে পারি। পরবর্তীতে ট্রানজিস্টর কে সুইচের মতো ব্যবহার করে অটোমেটিক দিনে অফ, রাতে অন করে এলইডি বাতি জ্বলে। যা ঘটে মানুষের সাহায্য ছাড়াই। পুরো কাজ অটোমেটিক ভাবে চলবে। আমাদের টীমের অন্যান্য সদস্যরা হলেন শাইরা তাহসিন, আজমাইন জাওয়াদ, মেহরাব মুস্তাকিম, সামিয়া সুলতানা অর্পা।

জান্নাতুল বুশরা ক্যাথি বলেন, আমাদের প্রজেক্টের নাম স্মার্ট কার পার্কিং সিস্টেম। বর্তমান প্রেক্ষাপটে যানবাহন পার্কিং সংক্রান্ত সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই নিবন্ধে, আমরা একটি স্বয়ংক্রিয় গাড়ি পার্কিং সিস্টেম প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছি। যখন কোনো গাড়ি পার্কিং এরিয়াতে আসবে তখন কয়টা স্লট খালি রয়েছে বা স্লট সব কয়টা ফিল আপ হয়ে গিয়েছে কিনা সেটা ডিসপ্লেতে দেখানো হবে। এতে করে ড্রাইভারদের পার্কিং স্লটে গিয়ে দেখতে হবে না স্লট ফাঁকা রয়েছে কিনা বা পার্কিং এরিয়াতে গিয়ে ফিরে আসতে হবে না কারণ স্লট ফাঁকা না থাকলে গাড়ি ভিতেরে যেতে দেয়া হবে না। আমাদের দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন আজমাইন জাওয়াদ, অর্পা, হারুনুর রশিদ ইমন, শিহাব উদ্দিন, মিনহাজুর রহমান।

শুভদ্বীপ সাহা বলেন, আমাদেরর প্রজেক্টের নাম স্মার্ট হ্যান্ড স্যানিটাইজার। বর্তমান সময়ের এক ভয়াবহতার নাম করোনা। বিশ্ববাসি এখনো করোনার কড়াল গ্রাস থেকে পুরোপুরিভাবে মুক্ত হতে পারে নি। তাই করোনাসহ বিভিন্ন ভাইরাস ও ব্যকটেরিয়া থেকে মুক্তি পেতে উদ্ভাবন করা হয়েছে স্মার্ট হ্যান্ড স্যানিটাইজার যার মাধ্যমে কোনো প্রকার হাতের স্পর্শ ছাড়াই স্যনিটাইজারটি ব্যবহার করা সম্ভব। ফলশ্রুতিতে জিবাণু সহজে ছড়িয়ে পড়তে পারবে না।মেশিনটিতে ব্যবহার করা মোশন সেন্সর খুব সহজেই হাত সনাক্ত করতে সক্ষম। অন্যান্য সদস্যরা হলেন অনিক, মনিরুজ্জামান মিম, শাখাওয়াত সজীব, উল্লাস অধিকারী।

সাফি শাহরিয়ার বলেন, আমাদের প্রজেক্টের নাম ফায়ার এলার্ম নোটিফিকেশন অন ফোন।
প্রজেক্টির মাধ্যমে ঘরে আগুন লাগলে এবং তা যদি ৩০° সেলসিয়াস এর উপর হয় তাহলে আমাদের ইমেইল ও নোটিফিকেশন এলার্ট এর পাশাপাশি ঘরের মাঝে সাইরেন এর দ্বারা সকলকে সতর্ক করা যায়। এই প্রজেক্টটি দিয়ে আমরা যেকোন জায়গা থেকে সতর্ক হতে পারব এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারব। ভবিষ্যতে প্রজেক্টিতে গিএসএম মডিউল ব্যবহার করে ফোন কল এর মাধ্যমে ফায়ার সার্ভিসে এবং মালিককে জানিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা ও করা জেতে পারে। অনান্য সদস্যরা হলেন হাসিবুল, আজাদ, কাওসার, মিনহাজুর, রাবিতা ভুইয়ান ঐশী।

সৈকত বিশ্বাস বলেন, আমাদের প্রজেক্টের নাম হচ্ছে ডিটেকশন অফ এলপিজি গ্যাস লিকেজ এন্ড অটোমেটিক এলার্ট সিস্টেম। এই সিস্টেমটি গ্যাস সিলিন্ডার থেকে লিকেজ হওয়া এলপিজি গ্যাস শনাক্ত করতে পারে এবং তাৎক্ষণিক সতর্ক করে দেয়৷ এছাড়াও এটি লিকেজ হওয়া গ্যাসকে বাইরের দিকে স্থানান্তর করে দেয়। বাকি সদস্যরা বলেন মশিউর, সিফাতুল্লাহ, মনিরুজ্জামান রুমান, আসফ মাহমুদ, আহসান।

দিদার হাসান চৌধুরী বলেন, থার্ড আই ফর এ ব্লাইন্ড পারসন। আমাদের এই প্রজেক্টি আরডিওনো ন্যানো চিপসেট ও কিছু ইলেকট্রিক্যাল কম্পোনেন্টস এর সাহায্যে একজন অন্ধ ব্যাক্তির চলাচলের মাধ্যমকে আরও উন্নত ও নিরাপদ করার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রথমত আমরা আলট্রাসনিক সেন্সর থেকে প্রাপ্ত ডাটাগুলো আরডিওনো ন্যানোতে প্রোগ্রামিংর মাধ্যমে প্রসেসিং করে পর্যায়ক্রমে বাজার ও ভাইব্রেশন মটর কে এক্টিভ করি যথা-সেন্সর ১ এর সামনে (১মিটার) যদি কোনো বাধা আসে তবে ডানদিকের বাজার ও সেন্সর অন হয়ে যাবে এবং অন্ধব্যাক্তি ডানদিকে বাধা বুঝতে পেরে বামদিকে ঘুরে যাবে ।ঠিক একই প্রক্রিয়ায় বামদিকের সেন্সরটি ও কাজ করবে যার ফলে অন্ধব্যাক্তি বামদিকে বাধা আসলে বুঝতে পড়বে এবং ডানদিকে ঘুরে যাবে। এতে তার চলাচল আরও সহজ ও নিরাপদ হবে।আমরা খুবই আশাবাদি যে আমাদের এই প্রজেক্টি একজন অন্ধব্যাক্তির চলাচল ও যোগাযোগে কিছুটা হলেও নতুন ভূমিকা পালন করবে। অন্যান্য সদস্যরা হলেন কাজী নাবিল আহমেদ, শাহাদাত হোসেন, ফাতেমা বিনতে নূর, আক্তেরা জাহান আমেনা, মেহেরাব মুস্তাকিম।

ইইই ডিপার্টমেন্ট এর লেকচারার নিরুপম দাস বলেন, অটোমেটিক রিচার্জজেবল স্ট্রিট লাইট প্রজেক্ট টা বেশ যুগোপযোগী একটি আবিষ্কার। কেননা বর্তমানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদ্যুৎ এর সংকট সৃষ্টি হয়েছে। যদি এই প্রজেক্টটি বাজারজাত করা যায় তাহলে দেশের বিদ্যুৎ এর উপর চাপ কমানো সম্ভব হবে একই সাথে জ্বালানি তেলের দাম ও হ্রাস পাবে বলে মনে করি।

ইইই ডিপার্টমেন্টের লেকচারার মুয়াজ রহমান বলেন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য তৈরি করা তৃতীয় চক্ষু বা সেন্সরযুক্ত চশমার উদ্ভাবন টাও বেশ ভালো লেগেছে আমার কাছে। তিনি বলেন এই চশমা পরিহিত একজন ব্যক্তির ডানে বামে বা সামনে থেকে যদি কোন বস্তু হটাৎ চলে আসলে তাহলে এই চশমা পরিহিত ব্যক্তি দুর থেকে সংকেত গ্রহন করতে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে নিজেকে সুরক্ষা করতে পারবে।

সার্বিক বিষয়ে নিটারের ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) ডিপার্টমেন্ট এর প্রধান সহকারী অধ্যাপক মো. মামুন-উর রশিদ ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন. আমাদের শিক্ষার্থীরা মাত্র দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যায়নরত ইতিমধ্যে তারা যে প্রজেক্ট গুলো তৈরী করেছে সেগুলো সত্যি অভাবনীয় ও প্রশংসার দাবিদার। আমি আশা করবো আগামী দিনে তারা এই প্রজেক্ট গুলো আরো ডেভেলপ করে বাস্তবিক অর্থে ইন্ডাস্ট্রিতে প্রয়োগ করতে পারলে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে অবদান রেখে নিটার যেমন সুনাম কুড়াবে তেমনি দেশ উপকৃত হবে।

ঢাকা, ০৯ আগস্ট (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এসএম//এমজেড


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ