Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শনিবার, ১৮ই মে ২০২৪, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com
সেই সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে এন্থার অভিযোগ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী কেলেঙ্কারি যেন ছাত্রলীগের নিত্যসঙ্গী!

প্রকাশিত: ২৫ জুলাই ২০২২, ০৭:২৮

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী কেলেঙ্কারি

জবি লাইভ: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে এন্থার অভিযোগ। যৌন হয়রানি, নিপীড়ন, চাঁদাবাজি ও দখলসহ জর্জরিত ওই শাখা সংগঠন। যারাই লঙ্কায় যায় তারাই বদলে যান। হয়ে উঠেন বিরাট ও বিশাল ক্ষমতাধর নেতা। অভাব হয়না অর্থবিত্ত ও নারী সহচর্য। বিশেষ করে ছাত্রী কেলেঙ্কারি যেন মামুলি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িত থাকায় সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত আছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি। এরই মাঝে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে খোদ সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে।

প্রথমে সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলেন সংগঠনেরই এক নারী কর্মী। এবার তাতে ঘি ঢাললেন সংগঠনের আরেক নারী কর্মীর সাথে সভাপতি গ্রুপের এক কর্মীর ফোনালাপ। ফোনালাপে শোনা যায় সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজী গ্রুপের মেয়েদেরকে রিসোর্টে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি। ফোনালাপের একপ্রান্তে ছিলেন সভাপতি গ্রুপের মেহেদি হাসান জনি।ফোনালাপের বিষয় জানতে চাইলে ওই নারী কর্মী বলেন, 'ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত হওয়ার পর আমি পরবর্তীতে যারা ভারপ্রাপ্ত আসতে পারেন তাদের সাথে শোডাউনে যাই। এটা দেখে মেহেদি হাসান জনি আমাকে ফোন দেয়। এরপর এসব কথাবার্তা হয়।

তিনি বলেন, আমি তাকে বলি ভাই ওখানে (প্রেসিডেন্ট গ্রুপে) তো মেয়েদেরকে রিসোর্টে যাওয়ার জন্য আশাকারা দেয়া হয়। আর আমি তো কারো সাথে ঘুরতেও যাইনা, কারোর সাথে রিসোর্টেও যাইনা। তখন আমাকে বলা হয় -‘যাওনা কেন? ঘুরতে যাবা তুমি।’ ফোনালাপে শোনা যায় মেহেদি হাসান জনি রিসোর্টে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে ঐ নারী কর্মীকে বলেন, ‘ওটা হলো আমাদের পটুয়াখালীর এক বড় ভাইয়ের রিসোর্ট। এখানে আমরা নিজেরাই যাই। ওটা কোনো বিষয় না। এসব নিউজে কিছু হয়? তুমি বলো তোমারে নিয়ে আমি নিউজ করে দেই, কয়টা লাগবে? নিউজে কিছু হয়না। এগুলা আহামরি কোনো বিষয় না।

তিনি আরো বলে, সাংবাদিকরা এসব নিউজ করলেও কিছু যায় আসে না। যারা সেন্ট্রালে বসে থাকে তারাও জানে সাংবাদিকরা কি কি নিউজ করে আর না করে। পরে মেহেদি হাসান জনি আরো বলেন, সাংবাদিকরা এসব নিউজ করেছে শুধু জগন্নাথে। কারণ আমরা ঢাকা ভার্সিটির আন্ডারে একটা দাসত্বের মতো চলি।'

এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রীদের আবাসিক ‘বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল’ থেকে নিয়ে গিয়ে আমোদ প্রমোদ করার বিষয়টি সামনে এসেছে। আর এসবে অভিযোগের তীর খোদ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজির বিরুদ্ধে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, চলতি বছরের ২৯ জুন ছাত্রী হল থেকে সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজির অনুসারী ১৫-২০ জন মেয়েদের নিয়ে বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী রিসোর্টে নিয়ে যায়। কেরানিগঞ্জের শ্যামল বাংলা রিসোর্টে বিকেলে নিয়ে সেখানে প্রায় মধ্য রাত পর্যন্ত থাকে। সূত্র জানায়, রিসোর্টে ছাত্রী হলের মেয়েরা সহ বাহিরের ও ৮-১০ জন মেয়ে ছিলো।

সেখানে সভাপতির অনুসারী কর্মীদের জন্যও কক্ষ বরাদ্দের ব্যবস্থা ছিলো বলে জানা যায়। এছাড়াও সেখানে ডিজে পার্টির ও করা হয়। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলে রাত সাড়ে নয়টার পর প্রধান ফটক বন্ধ হওয়ার কথা থাকলেও সেদিন সেই নারী ছাত্রলীগ কর্মীরা মধ্যরাতে হলে প্রবেশ করে। যা ক্যাম্পাসের নিয়ম বহির্ভূত।

এ ব্যাপারে ছাত্রীহলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামীমা বেগম ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ‘হ্যাঁ ওইদিন ওরা আবেদন করে গিয়েছিল। তাদের কোথায় যেন অনুষ্ঠান ছিলো তার জন্য আগে থেকেই বলে গেছে। এবং যথারীতি চলে এসছে।’ তবে অনুষ্ঠানের নাম করে রিসোর্টে অবস্থানের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে এ ব্যাপারে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে স্থগিত কমিটির সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজী ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, 'আমরা গিয়েছিলাম। তবে সেটি পারিবারিক অনুষ্ঠান ছিল। মেহেদী ভাইয়ের স্ত্রীর দাওয়াতে বেশ কয়েকজন মেয়ে ও ছেলে গিয়েছিল। এসব ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া হয়েছে।'

রিসোর্টে মধ্যরাতের ছবি

এদিকে সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসাইনের বিরুদ্ধে ‘গুরুতর’ অভিযোগ তুলেছেন সংগঠনের একই শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফৌজিয়া জাফরিন প্রিয়ন্তী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘আমার অপরাধ ছিল আমি তার কুপ্রস্তাব মেনে নেইনি। ভেঙে গেল ৭ বছরের ভাই-বোনের সম্পর্ক। একমাত্র ছাত্রী হলে ছাত্রলীগ থেকে ৩০০ মেয়ে সিট পেলেও আমাকে সে হলে উঠতে দেয়নি।’

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটির কার্যক্রম স্থগিতের নির্দেশ দেয়ার পর শুক্রবার রাতে এই নেত্রী নিজের টাইমলাইনে এক পোস্টের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি অভিযোগ তুলে ধরেন।
ফৌজিয়া বলেন, ‘আমার জন্য তার অনেক বড় ভাইরা বললেও তিনি কানে তোলেননি। কারণ তার তো আর আমাকে কর্মী হিসেবে প্রয়োজন নেই। এখন তিনি নেতা, প্রয়োজন মেটাতে পারলেই কেবল প্রয়োজন বোধ করবেন। বাংলাদেশের এমন কোনো হল আছে কি যেখানে কোনো গেস্ট গিয়ে একদিন থাকতে পারে না?

কিন্তু এই আমি প্রিয়ন্তী হলে একদিন গিয়েছিলাম দেখতে যে হলে থাকার কেমন অনুভূতি। কিন্তু এই আকতার জানতে পেরে প্রভোস্ট ম্যামকে চাপ দিয়ে সেই রাতেই আমাকে হল থেকে বের হতে বাধ্য করে।’ ‘আমার কি অপরাধ ছিল? ১৪ সাল থেকে প্রতিদিন আট-দশ ঘন্টা ইভেন আরও বেশি পরিশ্রম করে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর কমিটিতে এসেছি। আমাকে হলে উঠতে দেওয়া হয়নি। এর পেছনের প্রধান কারণ হচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকতার। আমার দীর্ঘ আরাধ্য ও প্রতীক্ষার হল থেকে, আমার প্রাপ্য অধিকার থেকে আমাকে বঞ্চিত করেছে।’

প্রিয়ন্তী ফেসবুকে আরও লিখেন, ‘দীর্ঘ ৭ বছর তার পিছনে হেঁটেছি। আপনি তার কয় দিনের কর্মী সেটা আগে ভাবুন। আমার মাদারীপুরের তিনজন ক্যান্ডিডেট ছিল। কিন্তু তার মধ্যে থেকে তাকে বেছে নিয়েছিলাম নেতা হিসেবে। তার জন্য কত কিছু করছি যা লিখে বলা সম্ভব না। আল্লাহ মনের আশা পূরণ করলেন, কিন্তু তারপর থেকে আকতার ভাইয়ের আসল রূপ বের হতে থাকলো।

‘লেখক দাদার বাসা থেকে যেদিন ফুল দিয়ে নিচে নামলাম তার সাথে, সেদিন সকল পোস্টেড নেতার সামনে বসে আমাকে আর জিনিয়া আফ্রিনকে উদ্দেশ করে বলল- কোন হাইকমান্ডের ফোনে সে হল কমিটি দিবে না; দরকার হয় সে সাবেক হয়ে যাবে। সে নেতা হয়ে গেছে। তার নামের আগে সাবেক লেখা থাকবে তার সমস্যা নেই। আগে তার কর্মী হতে হবে, তাকে নেতা মেনে ধারণ করতে হবে। তবেই সেই হলের নেত্রী বানাবে। আমরা অবাক হয়ে রইলাম। হলের কথা কই থেকে আসলো? নেতা হল ১০ দিন মাত্র তখন। সেদিনের পর থেকে তার বিভিন্ন আবদার রাখতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে তার সাথে আমার দীর্ঘ ৭ বছরের রাজনীতিকে সে মুহুর্তেই অস্বীকার করেছে।’

এদিকে এ বিষয়ে ফৌজিয়া জাফরিন প্রিয়ন্তী বলেন, কুপ্রস্তাব বলতে বুঝাতে চেয়েছি, তাঁর মতো করে চলতে হবে। সে যেখানে যেতে বলবে সেখানে যেতে হবে, যা করতে বলবে তা করতে হবে। আমি তো রাজনৈতিক প্রোগ্রাম কোনো কিছুই বাদ দিতাম না। কিন্তু এর বাইরে সে কী বুঝাইছে আশা করি আপনাদের এটা আর ডিটেইলস-এ বলতে হবে না।’ অন্যদিকে এ পোস্ট দেয়ার পর থেকে চাপের মুখে পড়েছেন বলে জানান এই নেত্রী। বলেন, ‘পোস্ট দেওয়ার পর আকতার হোসাইন আমাকে কল দিয়ে বলেন- যা করলি অনেক ভালো করলি।
তিনি আরো বলেন, আমি যখন তাকে জিজ্ঞেস করলাম- আপনি আমার সঙ্গে অন্যায় করেননি? তখন তিনি বলেন- হ্যাঁ, আমি অন্যায় করেছি। কিন্তু তুই এটা এ সময়ে তুলে না ধরলেও পারতি।’

প্রসঙ্গত, দীর্ঘ ৬ বছর পর আসাদুজ্জামান আসলামকে সভাপতি করে ও সুজন মোল্লাকে সাধারণ সম্পাদক করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। এদিকে ৩ বছর পর এ বছরের পহেলা জানুয়ারিতে ইব্রাহীম ফরাজীকে সভাপতি ও এসএম আকতার হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কমিটির ৬ মাস না গড়াতেই অর্থাৎ ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার পরদিন শুক্রবার (পহেলা জুলাই) শাখা ছাত্রলীগের সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

ঢাকা, ২৪ জুলাই (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//আরআই//এমজেড


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ