ঢাবি লাইভ: এতো নিষ্টুর আগে জানতাম না। এদের মনে দয়া-মায়া বলতে কিছু নেই। একজন মেয়ে হয়ে অন্য মেয়েকে এভাবে হেনস্তা করতে এতটুকুও বাধেনি। হাতে পায়ে ধরেও কোন লাভ হয়নি। এভাবেই মারধরের বর্ননা দিলেন গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্সে (হোম ইকোনমিক্স কলেজ) এর শিক্ষার্থী জিনিয়া খানম মিশি। তিনি বেশ কিছুক্ষণ কাঁদলেন। হাসপাতালের বেডে শুয়ে শুয়ে বললেন, ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে না যাওয়ায় এভাবেই মারধরের শিকার হয়েছি। ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর নাম জিনিয়া খানম মিশি ৷ তিনি হোম ইকোনমিক্স কলেজের শেখ হাসিনা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ৷
মিশির সহপাঠিরা জানান, বৃহস্পতিবার (৯ জুন) রাত সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ওই শিক্ষার্থীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ বর্তমানে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সেখানেই চিকিৎসাধীন। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ছাড়াও ওই হলের একাধিক আবাসিক শিক্ষার্থী জানান, নতুন কমিটির সহ-সভাপতি বিথী দত্ত, পপি খাতুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবরিনা রহমান চৈতি, প্রান্ত দত্ত স্নিগ্ধা, সাংগঠনিক সম্পাদক ইসরাত জাহান মিষ্টি, মাহবুবা ফূর্তিসহ বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী শেখ হাসিনা হলের ৩১৮ নং কক্ষে ঢুকে নিশির ওপর হামলা করে ৷
এসময় নিশির মোবাইল ফোন এবং স্বর্ণের গলার হার নিয়ে যায় হামলাকারীরা ৷ হামলায় অংশ নেওয়া সবাই হোম ইকোনমিক্স কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি শারমিন সুলতানা সনি গ্রুপের অনুসারী ৷ এরা একটি সিন্ডিকেট করে চলাফেরা করে বলে জানাগেছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জিনিয়া খানম মিশি বলেন, আমার ওপর অতর্কিত হামলা করেছে ৷ আমি খুবই অসুস্থ ৷ আমি প্রোগ্রামে যাইনি বলে আমাকে এসে মারধর করেছে ৷ ওরা সবসময় আমাদের ওপর ফোর্স করে ৷ আমার মেবাইল, গলার হারও নিয়ে গেছে ৷
কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শারমিন সুলতানা সনির ইন্দনে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেবুবা আফসানা ৷ তিনি বলেন, ওরা (হামলাকারীরা) অনেকদিন ধরে মেয়েদের ডিস্টার্ব করছে ৷
গতকাল (বৃহস্পতিবার) মিশি একটা রুমে বসা ছিলো ৷ সভাপতির অনুসারীরা এসে রুমের লাইট বন্ধ করে তাকে মারধর করছে ৷ সভাপতির ইন্দন ছাড়া মেয়েরা এত সহস পাবে না ৷ হামলার অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাবরিনা রহমান চৈতি বলেন, ‘কে মারছে? আপনাকে এ খবর কে দিছে? এগুলো সব মিথ্যা কথা’ ৷ এরপর ‘আপনি ভুল নম্বরে কল করেছেন’ বলে তিনি ফোনের লাইন কেটে দেন ৷
এ ব্যাপারে হোম ইকোনমিক্স কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকলিমা আক্তার প্রভাতী বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানিনা ৷ গতকাল ঢাকার বাইরে ছিলাম ৷ ঘটনা শুনেছি ৷ একটু পরে ম্যামরা ডেকেছেন ৷ আমরা ম্যামদের সাথে বসবো ৷ এ ব্যাপারে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি শারমিন সুলতানা সনি বলেন, আমি গতকাল গোপালগঞ্জ ছিলাম ৷ আজ (শুক্রবার) ভোর পাঁচটায় হলে আসছি ৷ কাকে মারধর করছে, কে করছে, হাসপাতালে কে ভর্তি এসব বিষয়ে আমি কিছুই জানি না ৷ আমি ক্লান্ত পরে কথা বলবো।
শিক্ষার্থীকে মারধরের বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ইসমাত রুমিনা বলেন, আমাদের কলেজে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। যা শুনেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভুয়া। আপনারা হাসপাতালে গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখেন এ নামে (জিনিয়া খানম মিশি) কেউ আছে কি না। অধ্যক্ষের কথা ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে হাসপাতালের পুরাতন বিল্ডিংয়ের ২০৩ নম্বর ওয়ার্ডের ১৩ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেখা যায়।
পরে বিষয়টি অধ্যক্ষকে বিষয়টি জানানো হলে তিনি বলেন, সে (জিনিয়া) নিজেই মারামারি করতে গিয়েছিল। অন্যজনকে মারতে গিয়ে সে আহত হয়েছে। এ ঘটনায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে অধ্যক্ষ ইসমাত রুমিনা বলেন, আমরা শিক্ষকরা মিটিংয়ে বসেছি। এটা নিয়ে তদন্ত কমিটি করবো। কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে তার বিরুদ্ধে কলেজ প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। আগে ভুল তথ্য দিলেন কেন জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। এক পর্যায়ে কলটি কেটে দেন।
ঢাকা, ১১ জুন (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএসসি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: