Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

ঢাবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে ভিসির কাছে নানান অভিযোগ!

প্রকাশিত: ১৯ মে ২০২২, ০৯:৫৩

অধ্যাপক ড. একেএম রেজাউল করিম

মনিরুজ্জামান মাজেদ, ঢাবি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক অধ্যাপকের ব্যাপারে এন্থার অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে চলছে তোলপাড়। ক্যাম্পাসে আলোচনা-সমালোচনার যেন কমতি নেই। বিষয়টি আদালত ও ভিসি অফিস গড়িয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনিত নানান অভিযোগ বিভাগীয় চেয়ারম্যান ভিসিকে নালিশ করেছেন বলে জানাগেছে। অন্যদিকে ওই অভিযুক্ত অধ্যাপক বিভাগীয় চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিস্টদের বিরুদ্ধেও নানান অনিয়মের পাল্টা অভিযোগ এনেছেন। তিনি হাইকোর্টে রিটও করেছেন। জানাগেছে মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক এ কে এম রেজাউর করিমের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক মহলে নানান অভিযোগ আলোচনায় উঠে এসেছে। বিভাগের স্টোরকিপার পদে নিয়োগ নিয়ে কিছুদিন আগে বিভাগীয় চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন ও শিক্ষক অধ্যাপক ড. একেএম রেজাউল করিমের মধ্যে জটিলতার সৃষ্টি হয়।

ডিপার্টমেন্টে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর একজন স্টোরকিপার নিয়োগে অধ্যাপক ড. একেএম রেজাউল করিমসহ মোট পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। পরে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি নিয়োগ সংক্রান্ত সিএন্ডডি কমিটির সভায় ২ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। পরীক্ষার আগে অধ্যাপক রেজাউল করিম প্রার্থীদের তালিকা বিভাগ থেকে নিয়ে নিলে সেই নিয়োগ স্থগিত করেন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন।

পরে ৩ ফেব্রুয়ারি একাডেমিক কমিটি ও ২৩ ফেব্রুয়ারি সিএন্ডডি কমিটির সভায় অধ্যাপক রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে স্টোরকিপার পদে প্রার্থীদের নামের তালিকা বিভাগীয় প্রধানকে না জানিয়ে নিয়েছেন বলে সেই নিয়োগের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন চেয়ারম্যান অধ্যাপক কামাল উদ্দিন। পরে অধ্যাপক রেজাউল করিমের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে কোনো সমাধান না আসা পর্যন্ত ‘নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত থাকবে এবং নিয়োগ কমিটিও পুনর্গঠিত হবে না’ বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এদিকে এই কমিটি গঠন প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অধ্যাপক রেজাউল করিম গত ২৭ এপ্রিল হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন। আদালত ওই নিয়োগ স্থগিতাদেশ দেন। বিষয়টি এখনও ঝুলছে। কোন পক্ষই এর দায় নিচ্ছেনা।

এদিকে আরো অভিযোগ মিলেছে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের এক শিক্ষার্থী বলেন, তার ভাইভা নিয়েছিলেন অধ্যাপক রেজাউল করিমসহ আরো ৩ জন শিক্ষক। ওই সময় রেজাউল করিম ছিলেন পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান। ভাইভার নাম্বার যোগ না হলে রেজাউল করিমকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান, ওই শিক্ষার্থী ভাইভা দেয় নি। পরবর্তীকালে নাম্বার পত্র খুঁজে পাওয়া যায়। পরে বিভাগ থেকে দুঃখ প্রকাশ করে নোটিশ প্রকাশ করা হয়।

এর আগে, ড. একেএম রেজাউল করিমকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে 'টাক' ও অশোভন শব্দ ব্যবহার করায় ওই বিভাগের সাত শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ নিয়েও শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দেয়।

অন্যদিকে ২০১৮ সালে একাডেমিক সভা চলাকালে অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম কর্তৃক সহকারী অধ্যাপক মোঃ সোহেল রানা সম্পর্কে অশোভন ভাষা ব্যবহারের জন্য তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় একাডেমিক কমিটিতে নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। একই বছর আরেক ঘটনার প্রেক্ষিতে রেজাউল করিমকে একাডেমিক কমিটির পক্ষ থেকে সাময়িকভাবে ক্লাস নেওয়া থেকে বিরতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

সে সময় ডিপার্টমেন্টের নোটিশে বলা হয় "অধ্যাপক ড. এ কে এম রেজাউল করিম এর কারণে বিভাগীয় কার্যক্রম চালানোর ক্ষেত্রে প্রায় সব সময় বিব্রতকর এবং অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। যার ফলে তার সাথে বিভাগীয় একাডেমিক কার্যক্রম চালানোর ক্ষেত্রে বিভাগীয় শিক্ষকবৃন্দ নিরাপত্তাহীন বোধ করছেন।"

অধ্যাপক ড. এ কে এম রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে আনিত বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, "স্টোরকিপার নিয়োগে ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান দুর্নীতির আশ্রয় নিতে চাচ্ছিলো বলে আমি তালিকা নিয়েছি।" আর হাইকোর্টে রিট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান ক্ষুন্ন হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, "দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমার সাংবিধানিক অধিকার আছে হাইকোর্টে রিট করার। এখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে কে দুর্নীতি করতে চেয়েছিল।"

অন্যদিকে শিক্ষার্থীর ভাইভার নাম্বার নিয়ে সমস্যার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, " এই সমস্যা আমার জন্য হয়নি। এটি হয়েছে তখনকার চেয়ারম্যানের ভুলের কারণে।"
শিক্ষার্থীদের সোস্যাল মিডিয়ায় টাক বলা নিয়ে ৭ জনকে বহিষ্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "পাস্ট ইজ পাস্ট। এটা নিয়ে কথা বলতে চাই না।"

সর্বোপরি আপনার বিষয়ে এত অভিযোগ, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে কারো কোন অভিযোগ নেই। এরপর তিনি ফোন সংযোগটি কেটে দেন।

এইসব বিষয় সম্পর্কে বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, "অধ্যাপক ড. এ কে এম রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ সত্য। তার কর্মকাণ্ডে বিভাগের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে ও সকল শিক্ষক নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছেন। তিনি এই রিট মামলা করে মনোবিজ্ঞান বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুন্ন করেছেন বিধায় একাডেমিক কমিটি মনে করে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

তিনি আরো বলেন, অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. রেজাউল করিম আচরণগত সমস্যার কারণে ধারাবাহিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুন্ন করে চলেছেন। তার বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে আরো অভিযোগ উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে দেওয়া হয়েছে। আজকেও আমরা একটি অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উনার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিবে। আমরা চাচ্ছি উনার দ্বারা যাতে বিভাগের কোন সমস্যা বা সম্মানহানি না ঘটে।"

ঢাকা, ১৮ মে (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএসসি


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ