Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শনিবার, ৪ঠা মে ২০২৪, ২১শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com
অবসরের আবেদন ঢাবি শিক্ষক সামিয়া রহমানের

বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণাকাজে চৌর্যবৃত্তি নিয়ন্ত্রণে কঠোর হওয়া উচিৎ

প্রকাশিত: ১৯ এপ্রিল ২০২২, ১২:২২

ঢাবি শিক্ষক সামিয়া রহমান

ঢাবি লাইভ: উপায় নেই। আগের মতো আর হাক ডাক নেই। বাহাদুরী নেই। দারাজ কন্ঠ আর নেই। তিনি ধরা খেয়েছেন। তাও যেনতেন বিষয়ে নয় চৌর্যবৃত্তির দায়ে এখন তিনি দেশ-বিদেশে চোর হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। তিনি হলেন সেই দাপুটে সংবাদ পাঠিকা সামিয়া রহমান। চৌর্যবৃত্তির দায়ে পদাবনতির শাস্তি পাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সামিয়া রহমান চাকরির বয়স শেষ হওয়ার আগেই অবসরে যেতে আবেদন করেছেন। সোমবার বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আবুল মনসুর আহাম্মদ বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, 'সপ্তাহখানেক আগে সামিয়া রহমান আরলি রিটায়ারমেন্টে যেতে বিভাগের চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেছেন। তার আবেদনটি বিভাগ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

ঢাবি রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, চার মাসের অর্জিত ছুটি নিয়ে দেশের বাইরে যান সামিয়া রহমান। গত ৩১ মার্চ তার ছুটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে মার্চ মাসের শুরুতে তিনি বিনা বেতনে আরও এক বছরের ছুটির জন্য আবেদন করেন। তবে সেটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনুমোদন না করার পর তিনি আগাম অবসরের আবেদন করেন। জানা যায় সামিয়া রহমান ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। পরে তিনি সহকারী অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছিলেন। তবে তার বিরুদ্ধে গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০২১ সালের ২৯ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় এক ধাপ পদাবনতি দিয়ে সহকারী অধ্যাপক করে তাকে।

গবেষণা সংক্রান্ত সব নথি হাইকোর্টে:


সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের শিক্ষক সামিয়া রহমানের গবেষণা সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ও এ সংক্রান্ত সকল নথি হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে বৃহস্পতিবার এসব নথি দাখিল করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট তদন্ত কমিটির পক্ষে আইনজীবী এসব প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরে আগামী ২৪ অক্টোবর এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সামিয়া রহমান ও মারজানের যৌথভাবে লেখা ‘এ নিউ ডাইমেনশন অব কলোনিয়ালিজম অ্যান্ড পপ কালচার : এ কেস স্টাডি অব দ্য কালচারাল ইমপেরিয়ালিজম’ শিরোনামের আট পৃষ্ঠার একটি গবেষণা প্রবন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সোশ্যাল সায়েন্স রিভিউ’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল বলে জানাগেছে।

সংশ্লিস্টরা জানান, এটি ১৯৮২ সালের শিকাগো ইউনিভার্সিটির জার্নাল ‘ক্রিটিক্যাল ইনকোয়ারি’তে প্রকাশিত ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকোর ‘দ্য সাবজেক্ট অ্যান্ড পাওয়ার’ নামের একটি নিবন্ধ থেকে প্রায় পাঁচ পৃষ্ঠা হুবহু নকল বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় পরে ঢাবি কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির সুপারিশ অনুসারে গত ৩১ আগস্ট সামিয়া রহমানকে সহযোগী অধ্যাপক থেকে এক ধাপ নামিয়ে সহকারী অধ্যাপক করে দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সামিয়া রহমান ও মারজানের যৌথভাবে লেখা ‘এ নিউ ডাইমেনশন অব কলোনিয়ালিজম অ্যান্ড পপ কালচার: আ কেস স্টাডি অব দ্য কালচারাল ইমপেরিয়ালিজম’ শিরোনামের আট পৃষ্ঠার একটি গবেষণা প্রবন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সোশ্যাল সায়েন্স রিভিউ’ জার্নালে প্রকাশিত হয়। এটি ১৯৮২ সালের যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নাল ‘ক্রিটিক্যাল ইনকোয়ারি’তে প্রকাশিত ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকোর ‘দ্য সাবজেক্ট অ্যান্ড পাওয়ার’ নামের একটি নিবন্ধ থেকে প্রায় পাঁচ পৃষ্ঠা হুবহু নকল বলে অভিযোগ ওঠে।

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে এক লিখিত অভিযোগে মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এ চুরির কথা জানিয়েছিল ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস। শুধু মিশেল ফুকোই নন, বুদ্ধিজীবী এডওয়ার্ড সাঈদের ‘কালচার অ্যান্ড ইমপেরিয়ালিজম’ গ্রন্থের পাতার পর পাতাও সামিয়া ও মারজান হুবহু নকল করেন বলে অভিযোগ ওঠে। তার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমেদকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট।

নানান নাটকীয়তা ও দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে গতবছর ওই কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। ওই প্রতিবেদনে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত ২৯ অক্টোবর তাদের একাডেমিক অপরাধের শাস্তির সুপারিশ করতে আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহকে আহ্বায়ক করে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ট্রাইব্যুনাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে শাস্তির বিষয়ে সুপারিশ জমা দিলে সিন্ডিকেটের সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

জানাগেছে তাদের নিয়ে তদন্ত করতে নানা ধরনের চাপের সম্মুখীন হতে হয়েছে তদন্ত কমিটিকে। সাবেক প্রো-ভিসি অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ বলেন, “আমাদের কলিগদের বিষয়ে যখন কোনো অভিযোগ ওঠে, আমরা চেষ্টা করি খুব কেয়ারফুলি দেখতে, যাতে তাদের উপর কোনো অন্যায় না হয়। “কিন্তু তাদের ব্যাপারে আমরা যখন ইনকোয়ারি শুরু করি, চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। অনেক হৈ চৈ শুরু হয়। যাই হোক, আমরা আমাদের মতো কাজ করেছি।”

নিজের অসুস্থতার কারণে তদন্তে একটু সময় বেশি লেগেছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা তো অনেক আগেই রিপোর্ট জমা দিয়েছি। দেরিতে কেন বিষয়টা সিন্ডিকেটে উঠল? সেটা দেখে অবাক হলাম।” এ প্রসঙ্গে সাবেক প্রো-ভিসি নাসরিন আহমাদ বলেন, গবেষণাকাজে চৌর্যবৃত্তি নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আরও কঠোর হওয়া উচিৎ। “প্লেইজারিজমের জন্য যে শাস্তি, তা হবে ঠিক আছে। কিন্তু এই যে বার বার প্লেইজারিজম হচ্ছে, তার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কঠোর হওয়া উচিৎ। আমরা এটাও নোটিস করেছি, ইদানিং প্লেইজারিজম বেশি বেশি হচ্ছে। কীভাবে আমরা এটাকে নিয়ন্ত্রণ করব, তার একটা সুস্পষ্ট আইন থাকা দরকার।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের স্বায়ত্তশাসিত চারটি বিশ্ববিদ্যালয় ৭৩ এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী পরিচালিত হয়। কিন্তু সেখানে চৌর্যবৃত্তির শাস্তি নিয়ে নির্দিষ্টভাবে কিছু বলা নেই। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রায়ই চৌর্যবৃত্তির ঘটনা ঘটছে। তদন্ত কমিটি চৌর্যবৃত্তি নিয়ে নীতিমালা তৈরি করতেও সুপারিশ করেছে বলে জানান তদন্ত কমিটির সদস্য সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম। তিনি বলেন, “৭৩ এর অর্ডারে প্লেইজারিজম বলতে তো কিছু নেই। কিন্তু শিক্ষকদের কেউ অনৈতিক কাজ করলে, তা নিয়ে আইন রয়েছে। “প্লেইজারিজম অনৈতিক কাজের মধ্যেই পড়ে।

ঢাকা, ১৮ এপ্রিল (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএসসি


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ