Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | মঙ্গলবার, ৭ই মে ২০২৪, ২৪শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

জবিতে শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ এসআই নাহিদের বিরুদ্ধে

প্রকাশিত: ২০ নভেম্বার ২০২১, ০৫:১৪

জবি লাইভ: দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে উঠছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) পুুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নাহিদ। শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নিয়ে বিহঙ্গ পরিবহনের সঙ্গে সামান্য ঝামেলা হলে কোনো কারণ ছাড়াই শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জের অভিযোগ উঠেছে ইনচার্জ নাহিদের বিরুদ্ধে

জানা গেছে, বুধবার, ১৭ নভেম্বর শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নিয়ে বিহঙ্গ পরিবহনের সাথে সামান্য ঝামেলা হয়। ওই ঝামেলার পর কোনো কারণ ছাড়াই শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ, অকথ্যভাষায় গালাগালি শুরু করেন ফাঁড়ির ইনচার্জ নাহিদে। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের অনুমতি ব্যতীত হাতকড়া পরিয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে আসেন এসআই নাহিদ। এ সময় ওই শিক্ষার্থীকে মারধরও করেন অভিযুক্ত এসআই।

জানা যায়, নাহিদ জবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এমএম শরিফুল ইসলামের ছোট ভাই। তাই তিনি ভাইয়ের ক্ষমতা দেখিয়ে, প্রভাব খাটিয়ে নানাভাবে শিক্ষার্থীদের হয়রানি করে থাকেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এসআই নাহিদ নিজেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এই পরিচয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের দোকান ও সদরঘাট বাসস্ট্যান্ড থেকে চাঁদা তোলেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন জবির মার্কেটিং বিভাগের সাবেক এমএলএসএস। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, জবি শিক্ষার্থীদের হয়রানি, কোনো ধরনের তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মারধর এবং কলার ধরে গাড়িতে তোলার অভিযোগ রয়েছে।

নাহিদের চাঁদাবাজির শিকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বাসের ম্যানেজার ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, আমাদের প্রায় সব গাড়ির কাছেই এসআই নাহিদ নিজেকে জগন্নাথের শিক্ষার্থী বলে পরিচয় দিয়ে টাকা নিতো। আমরাও বাধ্য হয়ে দিতাম। তার নিজেরও ৪টি বাস এখানে আছে। এছাড়া গতকাল যেটি ভাঙ্গা হয়েছে সেটি তার ভাইয়ের। তারা দুই ভাই মিলে সদরঘাট বাস টার্মিনালকে চাঁদাবাজির রাজ্যে পরিণত করেছেন। কিছু বললেই নানাভাবে মামলা ও হয়রানির ভয় দেখান।

হয়রানির শিকার সাবেক এক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, আমরা কয়েকজন মিলে ক্যাম্পাসের পাশে বসেছিলাম। হঠাৎ কােনো কারণ ছাড়াই আমাদের ওপর চড়াও হয় এবং আমাদের কলার ধরে পুলিশের গাড়িতে ওঠান এবং আমার এক বন্ধুকে চড়-থাপ্পড় দেন। এর কারণ হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা তার ভাইয়ের বিপরীতে রাজনীতি করতাম।

বুধবারের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা একটি বাসের গ্লাস ভাঙ্গার (ঢাকা মেট্রো-ব ১১৭১৮০) সময় পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। এতে ছাত্ররা দৌঁড়াদৌড়ি শুরু করে এবং ঘটনাস্থল ত্যাগ করে সবাই ক্যাম্পাসের দিকে চলে আসে। দৌঁড়ে ক্যাম্পাসে আসার চেষ্টা করলে এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের এক শিক্ষার্থী রাস্তায় পড়ে যায়। আর তখনই তাকে আটক করে। আটক করার সময় সেই শিক্ষার্থীকে মারধর এবং বুকে পা দেন এসআই নাহিদ বলে জানান ঘটনাস্থলে থাকা একাধিক শিক্ষার্থী। এছাড়া তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে না জানিয়েই ওই শিক্ষার্থীকে বুধবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে হ্যান্ডক্যাপ পড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে তাকে কোতয়ালি থানার সেলে রাখা হয়। এতে শিক্ষার্থীরা আরো ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে।

এ সময় সাংবাদিকদের দেখে নাহিদ রাগান্নিত স্বরে বলতে থাকেন, ‘তোমরা এদের সবাইকে চলে যেতে বলো, নয়তো সবাইকে অ্যারেস্ট করে নিয়ে যাব।’ নাহিদের এমন আচরণে সকল শিক্ষার্থী আরো ক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং তার প্রত্যাহার চেয়ে স্লোগান দিতে থাকেন।

বুধবার মধ্য রাত ১ টা ৩০ মিনিটের দিকে প্রক্টরিয়াল বডির সহায়তায় আটক শিক্ষার্থীকে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে সেই শিক্ষার্থীকে আটকের সময় মারধর করা হয়েছে বলে জানা গেছে। পরবর্তীতে প্রক্টরিয়াল বডির অনুরোধে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ তুলে নেয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থীকে আটকের পূর্বে প্রক্টরকে জানানোর নিয়ম থাকলেও তা করেনি এসআই নাহিদ। বরং অবৈধভাবে কোনো কারণ ছাড়াই হাতকড়া পরিয়ে মারধর করতে করতে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যায় তাকে।

সামগ্রিক বিষয়গুলো নিয়ে জানতে চাইলে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নাহিদুল ইসলাম ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, আমার আপন বড় ভাই শরিফুল ইসলাম কিন্তু আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলাম এমন পরিচয় দেই না। তাছাড়া আমি কোনো ধরনের চাঁদাবাজি করি না। এ সময় তিনি রাগান্নিত হয়ে এই প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতে থাকেন। আপনি আমার সামনে এসে এমন কথা বলেন বলে হুমকি দেন।

পুলিশের এসআই ও জবি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এক ছাত্রকে মারধর ও লাথি মেরে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে আটক করে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, লালবাগ জোনের ডিসিকে আমরা বিষয়টি জানিয়েছি। আমাদের একজন ছাত্রের গায়ে পুলিশ কোনোভাবেই হাত তুলতে পারে না। আর হাতকড়া পরিয়ে পুলিশ অন্যায় কাজ করেছে সেটাও জানিয়েছি। আমাদের কোনো ছাত্র অপরাধ করলে আমাদের জানিয়ে তাকে ধরে নিয়ে যেতে পারবে। আমাদের যে জানানো হয়নি সেটাও আমরা ডিসিকে জানিয়েছি। উনি বলেছেন, বিষয়টি দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রক্টর আরো বলেন, পুলিশ ফাঁড়ি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য, শিক্ষার্থীদের হয়রানি করার জন্য নয়।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানার ওসি মিজানুর রহমান ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, হ্যান্ডকাফ পরিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি ঠিক নয়। বাকিগুলো নিয়ে কথা বলতে চাননি তিনি।

ঢাকা, ১৯ নভেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমআই

 

 


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ