ঢাবি লাইভ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফিল্ম সোসাইটির ভর্তির প্রশ্ন নিয়ে ঝড় উঠেছে। তাদের রুচিবোধ, মানসিকতা, ও রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে চলছে নানা বিতর্ক। ভর্তি হতে আসা অনেকেই তাদের কুরুচিপূর্ণ প্রশ্ন ও আচরণ মেনে নিতে পারছেন না। রীতিমত ফিল্ম সোসাইটির ওই ভর্তি কমিটির লোকজনের শাস্তি দাবী করেছেন। বলেছেন,বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের মুখে এ জাতীয় অশ্লীল ও নিচু মানসিকতা সমাজ- রাষ্ট্রকে ধবংস করে দেবে।
ভর্ত হতে আসা শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের ভাইবাতে প্রশ্ন করা হয় ‘এই আপুর প্রতি ইন্টারেস্ট আছে নাকি? সর্বশেষ কবে গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে ফিজিক্যাল রিলেশন করেছ? ১০ জন পর্নস্টারের নাম বলো’- এমন আরও অনেক ‘কুরুচিপূর্ণ’ প্রশ্ন!
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ফিল্ম সোসাইটির ২০১৭-১৮ সেশনে নতুন সদস্য নেয়ার সময় সাক্ষাৎকারের প্রশ্নের ধরন ছিল এমনই। হঠাৎ করে এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়ায় বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন সংগঠনটির সদস্য হতে আগ্রহী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা। অভিযোগের বিষয়ে মোবাইলে কোনো উত্তর দিতে চাননি ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি এস এম আরিফ রায়হান শোভন। ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ‘মোবাইলে কিছু বলতে চাই না। দেখা হলে সরাসরি বলব।’
তবে ‘অভিযোগকারীরা অনেকগুলো প্রশ্নের মধ্যে ‘দু-একটা’ নিয়ে অভিযোগ করেছেন’- দাবি করেন তিনি।
চলচ্চিত্র সম্পর্কিত কোনো প্রশ্ন না করে নানা ধরনের অবান্তর ও অশ্লীল প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করায় বেশ ক্ষুব্ধ তারা। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন অনেকে। সংশ্লিস্টদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেছেন।
কেউ কেউ আবার সদস্য হওয়ার সুযোগ পেলেও এ সংগঠনে না জড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বলেছেন, এরা নিজেরা সারা বছর এসব করে বেড়ায়। নতুন নতুন মুখ খোঁজে। তাদের সাথে চলাফেরা ও সম্পর্ক রাখাটাও বিপদজনক।
অন্যদিকে এ বিষয়ে ফিল্ম সোসাইটি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন সদস্যদের ম্যাচুরিটি পরখ করতে এসব প্রশ্ন করা হয়েছে। এটা তেমন কিছু নয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুয়েত মৈত্রী হলের একজন ছাত্রী ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, আমি তাদের পছন্দ করতাম। ‘ফিল্ম সোসাইটির প্রতি আমি দুর্বল। অনেকেই পরিচিত ছিল। চলচ্চিত্রের প্রতি ভালোবাসা থেকেই সংগঠনটির সদস্য হওয়ার জন্য ভাইবায় অংশ নেই।’ কিন্তু যা শুনলাম তাতে আমার মনটা আর তাদের কাছে যেতে চায় না। আমি আর এদের সঙ্গে কোন সম্পর্ক রাখবো না।
তিনি আর বলেন আমাকে বলা হয় সর্বশেষ কবে যৌন মিলন করেছি! মাস্টারবেশনের সময় কাকে কল্পনা করেছি! জানতে চাওয়া হয় ১০ জন পর্নস্টারের নাম। কোনো ধরনের ফিল্ম রিলেটেড প্রশ্ন করা হয়নি।’ এসব শুনে কোন কথা না বলে চলে আসি হলে।
আর জিয়া হলের ছাত্র এবং ফিল্ম সোসাইটির সদস্য হতে আগ্রহী নাজমুল ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ‘ভাইবা বোর্ডে বসা একজন নারী সদস্যকে দেখিয়ে অন্য একজন প্রশ্ন করেন, আপুকে...ইন্টারেস্ট আছে নাকি? এমনকি বোর্ডে বসা ওই নারী সদস্য প্রশ্ন ছোড়েন, সর্বশেষ কবে গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে ফিজিক্যাল রিলেশন করেছ? ফিলিংস কী?’ তখন কেমন লাগছিল? ইত্যাদি, ইত্যাদি।
মুহসিন হলের শিক্ষার্থী তাহসান শাবাব ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, এডাল্ট মোভি দেখার সময় বয় না গার্লদের ভাল লাগে? দেখার পর কি অনুভূতি হয়, আপনি তখন কি করেন। তিনি আরও বলেন, ‘ম্যাচিউরিটি টেস্টের জন্যে আরও অনেক প্রশ্ন করেছে বলে তাদের দাবী, কিন্তু এ ধরনের প্রশ্নে আমি বিব্রত এবং ক্ষুব্ধ। তাই সুযোগ পেলেও ওই সংগঠনে কাজ করব না’- এদের বিরোধিতাই করে যাব। শুনতাম খবই ভাল এরা। আধুনিক মনমানসিতা নিয়ে চলে। কিন্তু এটা আধুনিকতা এব্যাপারটি জানা ছিলনা। পরে তিনি আর যোগ দেননি।
জগন্নাথ হলের মৃনাল কান্তি ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ক্ষোভ প্রকাশ করে বললেন, এরা এত বাজে জানাছিল না। সিনিয়র হলে মার দিতাম। তিনি বলেন এব্যাপারটির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অ্যাকশনে যাওয়া উচিত। কিছু একটা করা উচিত। আরেক প্রার্থী বলেন, ‘এমন প্রশ্নে আমি অবাক হয়েছি। ধারণাই ছিল না আমার যে, ঢাবির কোনো সংগঠনের ভাইবার প্রশ্ন এমন হতে পারে।’ এতো নোংড়া হতে পাবে।
সলিমুল্লাহ হলের অপু নামের অপর একজন শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন,‘আমাকে প্রশ্ন করা হয়, সিগারেট টানতে পারবো কিনা? বাথরুম পরিষ্কার ও পানি টানতে পারব কিনা? ফিল্ম সোসাইটিতে কি আমি সিগারেট টানতে আর বাথরুম পরিষ্কার করতে যাব’- প্রশ্ন রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের এ ছাত্র। বলেন এরা আবার কি শেখাবে। তাদেরকে শিক্ষা দেয়া উচিত।
এসব অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি বেশ ‘গর্বের’ সঙ্গে স্বীকার করেন ফিল্ম সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন তাহা। তিনি ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ‘এসব প্রশ্ন নতুন সদস্য রিক্রুটের সময় করা হয়। আমরা ম্যাচিউরিটি পরীক্ষা করার জন্য এ ধরনের প্রশ্ন করে তাদের বিব্রত করি। কারণ তাদের মেন্টালিটি জানা আবশ্যক। কারণ প্রায় ১২শ’ শিক্ষার্থী থেকে আমরা মাত্র ৩০ জনকে নেব।’ তাই একটু মজা করতেই এই আয়োজন।
ফিল্ম সম্পর্কিত কোনো প্রশ্ন করা হয় না কেন- এমন প্রশ্নে জবাবে তাহা বলেন, ‘আমরা তাদের ফিল্ম শিখিয়ে নিতে পারব। কিন্তু এসব বিষয় তো শেখাতে পারব না। তাই বিভিন্ন প্রশ্ন করে যেকোন পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খেতে পারবে কিনা তা যাচাই করি। কারো এলার্জি থাকলে সে নাও আসতে পারে।’
‘সিগারেট টানা, পানি টানা এবং বাথরুম পরিষ্কার’- এসব বিষয়ে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সংগঠনের সঙ্গে থাকতে হলে এসব কাজ করার মানসিকতা থাকতে হবে। কারণ সিনিয়রদের সিগারেট টানা জুনিয়রদের কাজ। এটাই নিয়ম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলসহ সব জায়গায় এ সিস্টেম চালু আছে।’
এ বিষয়ে ফিল্ম সোসাইটির উপদেষ্টা ও ঢাবি ভিসি প্রফেসর ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘সাধারণ সম্পাদকও এভাবে কথা বলেছেন। এভাবে চলতে পারে না। এমন কিছু করার সুযোগ নেই। বিষয়টি নিয়ে আমি তাদের সঙ্গে কথা বলব।’
উল্লেখ্য, সোমবার জাতীয় চলচ্চিত্র নীতিমালা ২০১৭-এর খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এতে বলা হয়, `চলচ্চিত্রে সরাসরি ধর্ষণের দৃশ্য দেখানো যাবে না। এমনকি অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ ভাষাও পরিহার করতে হবে।` এছাড়াও নীতিমালা অনুসারে, শিশু ও নারীর প্রতি সহিংসতা, বৈষম্যমূলক আচরণ ও হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ড উদ্বুদ্ধ করে এমন দৃশ্য বা ঘটনা চলচ্চিত্রে প্রদর্শন করা যাবে না। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বসে কিছু ছেলে মেয়ে এধরনের আচরণ করে যাচ্ছে। বিষয়টি ব্যাপারে এখনই ভাবতে হবে বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন।
ঢাকা, ০৩ এপ্রিল (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমএইচ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: