জবি লাইভ: এবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) কিছু বিভাগে দুর্গাপূজার ছুটির মধ্যে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার তারিখ দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা। তারা পূজার ছুটির পর পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, দুর্গাপূজাকে ঘিরে তাদের নানা রকম প্রস্তুতি, পরিকল্পনা ও আচার-অনুষ্ঠান থাকে।
পরিবারের সঙ্গে দুর্গাপূজা উদযাপন তাদের জন্য এক মিলনমেলায় পরিণত হয়। কিন্তু এবার পূজার মধ্যে পরীক্ষা হওয়ায় তারা তাদের বছরের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসব থেকে বঞ্চিত হবেন। জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের (২০১৭-১৮ সেশন), অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগসহ বেশ কয়েকটি বিভাগে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ হয়েছে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বিভাগ পূজার পরেই সেমিস্টার পরীক্ষা শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আরও জানা গেছে, এ বছর নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী, আগামী ১১ অক্টোবর ষষ্ঠী, ১২ অক্টোবর সপ্তমী, ১৩ অক্টোবর অষ্টমী, ১৪ অক্টোবর নবমী এবং ১৫ অক্টোবর বিজয়া দশমী পালন করা হবে।
তবে এর মধ্যেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও বর্ষের শিক্ষার্থীদের আটকেপড়া সেমিস্টার পরীক্ষা আগামী ৭ অক্টোবর থেকে সশরীরের শুরু হবে। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী কেয়া সরকার বলেন, এ বছরের শুরু থেকেই আমাদের আটকে থাকা পরীক্ষা নিয়ে গড়িমসি শুরু হয়েছে।
একাধিকবার তারিখ পিছিয়ে আমাদের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সব থেকে বড় উৎসব দুর্গাপূজার সময়ে পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ করেছে। পূজার দিনগুলোতে পরীক্ষা রাখা হয়েছে! এতদিন বারবার পরীক্ষার সময় পরিবর্তন করে আমাদের পূজার মধ্যে তারিখ দেওয়ার কোনো যুক্তি খুঁজে পাচ্ছি না।
বরং রীতিমতো আমাদের সঙ্গে অন্যায় মনে হচ্ছে। সারাবছর ধরে আমরা এই উৎসবের অপেক্ষায় থাকি, পরিবার-আপনজনের সঙ্গে উপভোগ করতে চাই। কিন্তু পূজার সময়ে পরীক্ষার তারিখ দেওয়ায় আমাদের আশায় গুড়েবালি ঢেলে দিলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী সৌরভ দাস বলেন, সৃষ্টিলগ্ন থেকেই বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসবের অন্যতম হচ্ছে দুর্গা পূজা। কিন্তু ঠিক এই সময়টাতে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার নামে প্রহসন করছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি বিভাগ। বিভাগগুলো চাইলেই পূজার পাঁচ দিন সময় বাদ দিয়ে পরীক্ষা নিতে পারতো। সংশ্লিষ্টদের প্রতি বিনীত অনুরোধ, আপনারা দয়া করে পুনরায় বিষয়টি বিবেচনা করে নতুনভাবে পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ করবেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামানের সঙ্গে মুঠোফোন যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি। তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. মনিরুজ্জামান বলেন, পূজার ছুটি মানে সরকারি ছুটি।
আর কোনো সরকারি ছুটিতেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা নেওয়া হয় না। অসতর্কতাবশত পূজার দিনে একাউন্টিং বিভাগের পরীক্ষার তারিখ দেওয়া হতে পারে। আমি একাউন্টিং বিভাগের চেয়ারম্যানকে বলেছি, পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন করতে। দুর্গাপূজা যেহেতু হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব তাই পূজার দিনে পরীক্ষা কোনোভাবেই হবে না।
ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের রুটিনে পূজার দিনে পরীক্ষার তারিখ দেওয়ার বিষয়ে লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি এই ফ্যাকাল্টির ডিন। আমি আশ্বস্ত করছি, পূজায় কোনো পরীক্ষা হবে না। বিষয়টি নিয়ে নানান সমালোচনা ও আলোচনা চলছে।
ঢাকা, ১৭ সেপ্টেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএসসি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: