আদীব মুমিন আরিফ, জাবি: স্কুল থেকেই সকলে স্বপ্ন দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার।আমাদের দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন যেন সোনার হরিণ।প্রতিবছর লাখ লাখ শিক্ষার্থীর বিপরীতে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে মাত্র কয়েক হাজার শিক্ষার্থী।তাই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হলে লাখ লাখ শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতিযোগিতা করে মেধার স্বাক্ষর রেখে সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে অনেকে।বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর নতুন শিক্ষার্থীদের চোখে মুখে থাকে স্বপ্ন আর প্রত্যয়ের ছাপ, সে স্বপ্ন আর প্রত্যয় হচ্ছে উচ্চশিক্ষা নিয়ে দেশ ও দশের সেবা করার, দেশের মুখ উজ্জল করে লাল-সবুজের পতাকাকে আরো উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া।
গত ৯ মার্চ শুরু হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের (৪৬তম আবর্তনের)প্রথম ক্লাশ।বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস নতুনদের পদচারণায় ছিল মুখরিত। রজনীগন্ধা আর গোলাপ হাতে স্বপ্ন সারথীরা শুরু করেছে তাদের স্বপ্ন বুনন।বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিন ভয় আর আনন্দের মিথষ্ক্রিয়ায় শুরু হয় পথ চলা।চারদিকে শত শত অপরিচিত মুখ আর নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা।চলতে থাকে নতুন বন্ধু শিক্ষক আর বড় ভাই, আপুদের সাথে পরিচয় পর্ব। চলুন শুনে আসি তেমনি কিছু শিক্ষার্থীর স্বপ্ন আর প্রথম দিনের অনুভূতির কথা।
শফিকুল ইসলাম, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ
গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ।পড়েছেন উত্তরা হাইস্কুল এন্ড কলেজে। এসএসসি ও এইসএসসি দুটোই পেয়েছেন জিপিএ ফাইব এরপর ভর্তিযুদ্ধে জয়ী হয়ে চান্স পেয়েছেন পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে।তার স্বপ্ন এখন বিভাগে ভালো রেজাল্ট করে নিউক্লিয়ার ফিজিক্সে দেশের বাইরে উচ্চ শিক্ষা নেয়া।পছন্দের প্রথম তালিকায় আছে হার্ভার্ড অথবা কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নেয়া।এরপর দেশের জন্য গবেষণা করা।অনুভূতির কথা বলতে গিয়ে বলেন ভাইয়া প্রথমে অনেক ভয় করছিল কিন্তু এখন অনেক আনন্দ লাগছে। শিক্ষকদের উপদেশ অনেক অনুপ্রেরণাময়ী ছিল।বন্ধুদের সাথে পরিচিত হয়ে অনেক ভালো লাগছে। ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক পরিবেশও অনেক সুন্দর।
সামিয়া জামান মীম, আইন ও বিচার বিভাগ
গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল।এসএসসি ও এইচএসসি দুটোই পেয়েছেন জিপিএ ৫.০০।চান্স পেয়েছেন আইন ও বিচার বিভাগে।তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট।যেহেতু আইনে পড়েন তাই স্বপ্ন বিচারক হওয়ার। কিন্তু তার আরো বড় স্বপ্ন হলো সুবিধা বঞ্ছিত শিশুদের শিাক্ষার জন্য কাজ করা। ““ছোটবেলা থেকেই অবহেলিত শিশুদের নিয়ে ভাবতাম।এদেরও তো আছে শিক্ষার অধিকার।আমার মত এরাও সুযোগ পেলে হয়তোবা পড়তে পরতো বিশ্ববিদ্যালয়ে। বড় হয়ে এদের অধিকার নিয়ে আইনী লড়াই করবো।আর এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবিধা বঞ্ছিত শিশুদের পড়াতে চাই।”” বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিনের অনুভূতি হচ্ছে মিশ্র, ভয় আনন্দ ভালো লাগা সবই একসাথে উপভোগ করছি।শিক্ষকদের উপদেশ বড় ভাইয়া আপুদের বরণ সবই ভালো লেগেছে।বিশেষ করে বাবা-মার কথা খুবই মনে পড়ছে। তাদের অক্লান্ত স্বার্থহীন প্রচেষ্টায় আমি আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে।স্কুলের শিক্ষকদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা।
আনিকা জামান, ইতিহাস বিভাগ
আনিকা জামানের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ছিল একটু কম।যথাক্রম ৪.৩৮ ও ৩.৭৫ কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার ব্যাপারে ছিলেন আশাবাদি।বাবা-মা অনেক অনুপ্রেরণা দিয়েছিল, বলেছে অনেকে তো গোল্ডেন পেয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে না।তাই পয়েন্টের কথা চিন্তা না করে মন দিয়ে পড়ো দেখবা চান্স হয়ে যাবে।আনিকার প্রথম পছন্দ ছিল ইতিহাস বিভাগ। চান্সও হয়েছে ইতিহাস বিভাগে।ছোটবেলা থেকে মুক্তিযোদ্ধার ইতিহাস পড়তে অনেক ভালো লাগতো তাই ইতিহাসেই ভর্তি হই।এখন স্বপ্ন ভালো রেজাল্ট করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া।দেশের ইতিহাসকে জাতির সামনে তুলে ধরা।অনুভূতি অনেক ভালো দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পেরেছি অনেক খুশি।
দেলোয়ার হোসেন, আইআইটি
গ্রামের বাড়ি চুয়াডাঙ্গা।এসএসসি ও এইচএসসি তে পেয়েছেন জিপিএ ৫.০০ ও ৪.৫০।কিন্তু ভালো করে পড়াশুনা করে অনেক গোল্ডেনধারীদের পেছনে ফেলে চান্স পেয়েছেন আইআইটিতে (ইন্সটিটিউট অব ইনফরমেশন এন্ড টেকনোলজি।স্বপ্ন এখন বিভাগে ভালো করা এরপর কানাডা বা জাপান থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নেয়া। অনুভূতি অনেক ভালো ডিপার্টমেন্টে শিক্ষক ও বড় ভাইরা বরণ করে নিয়েছে।হলে উঠেছি এদিন আগেই হলের বন্ধুদের সাথে পরিচিত হয়ে অনেক ভালো লাগছে।হলের বড় ভাইদের মিষ্টি-দুষ্ট শাসন অন্যরকম।
শরিফুল ইসলাম, আইন ও বিচার বিভাগ
গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা।এসএসসি ও এইচএসসি দুটোই জিপিএ ৫.০০। ভর্তি হয়েছেন আইন ও বিচার বিভাগে।স্বপ্ন আইনজীবী হওয়া উচ্চ শিক্ষার জন্য লন্ডনে যাওয়া। দেশের মানুষের জন্য কাজ করা বিশেষ করে গরিব মানুষদের আইনী সহায়তা করা।আর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিন সবার সাথে পরিচিত হয়ে ভালো লাগছে। এত সুন্দর ক্যাম্পাসে চান্স পেয়ে অনেক ভালো লাগছে।
শাহেলা হক তিশা, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ
গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনা জেলায়। এসএসসি ও এইচএসসি দুটোই জিপিএ ফাইব। শাহেলার স্বপ্ন বিসিএস প্রশাসন। বাবা চাকুরিজীবী তাই তার ও স্বপ্ন সরকারি চাকরি করে দেশের সেবা করা। অনুভূতি ভালো লাগতাছে। সবার সাথে পরিচিত হয়ে ভালো লাগছে।
ঢাকা, ১৭ মার্চ (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমএইচ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: