Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | বুধবার, ২২শে মে ২০২৪, ৭ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

"ঢাবি'র কালো দিবসের ঘটনায় জড়িত সকলের বিচার হওয়া দরকার"

প্রকাশিত: ২৩ আগষ্ট ২০২০, ১৯:১৯

মিজানুর রহমান, ঢাবিঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কালো দিবসের ঘটনায় জড়িত সেনা কর্মকতাদের বিচারের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা দরকার বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

কালো দিবসের ঘটনাকে বাংলাদেশের গণতন্ত্র পূনরুদ্ধারের টার্নিং পয়েন্ট ছিলো বলে মন্তব্য করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ।

ঢাবির কালো দিবস সম্পর্কে জানতে চাইলে ক্যাম্পাসলাইভ২৪কে অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, "ইতিহাস ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের উপর ২০ আগস্ট থেকে যেভাবে নির্যাতন, নিপীড়ন করা হলো, শিক্ষদের চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হলো সেটা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবী হত্যার কথা স্মরণ করিয়ে দেই। এই জঘন্য কর্মকান্ডের সাথে জড়িত সেনা কর্মকর্তাদের বিচারের আওতায় এনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার যাতে ভবিষ্যতে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।"

ক্যাম্পাসলাইভ২৪কে ড. আরেফিন সিদ্দিক বিচারের প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলেন, "এই ঘটনার পর সংসদীয় একটা তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছিলো। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী এখন ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। যাতে ভবিষ্যতে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। "

কালো দিবসের ঘটনাকে বাংলাদেশের গণতন্ত্র পূনরুদ্ধারের টার্নিং পয়েন্ট ছিলো বলে মন্তব্য করে অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ ক্যাম্পাসলাইভ২৪ কে বলেন, "এই ঘটনা না ঘটলে ঐ সেনা শাসন আরো দীর্ঘায়িত হতো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ঘটনা গণতন্ত্র পূনরূদ্ধারের সূতিকাগার হিসেবে কাজ করেছে।"

২০০৭ সালের ২০ আগস্ট বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ এবং লোকপ্রশাসন বিভাগের ছাত্রদের মধ্যে ফুটবল খেলায় উপস্থিত ছাত্র ও সেনা সদস্যদের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে।

খেলার মাঠেই শিক্ষার্থীদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালায় উপস্থিত সেনাসদস্যরা। এর প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম সেনাসদস্যদের দ্বারা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন।

২১ আগস্ট নির্যাতনের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরের শিক্ষার্থী। নীলক্ষেত, টিএসসি, কার্জন হল এলাকায় তখন তাদের ওপর আক্রমণ চালায় পুলিশ।
২২ আগস্ট এই আন্দোলন গোটা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়ে। রাজশাহীতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন রিক্সাচালক আনোয়ার। পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠলে তৎকালীন সেনা-তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২২ আগস্ট বিভাগীয় শহরগুলোতে কারফিউ জারি করে। ওইদিন সন্ধ্যার মধ্যেই ঢাবির আবাসিক ছাত্র-ছাত্রীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়।

এরপর ২৩ আগস্ট রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তৎকালীন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডীন ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ এবং প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনকে চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা ক্যান্টেনমেন্টে।

এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইদুর রহমান খান, আবদুস সোবহান, মলয় কুমার ভৌমিক, দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস, আবদুল্লাহ আল মামুন এবং সেলিম রেজা নিউটনকে গ্রেফতার দেখানো হয়। পরে ঢাবির আরও দুই শিক্ষক নীল চন্দ্র ভূমিক ও সৈয়দুল আমিনসহ ৫ ছাত্র নেতাকে গ্রেফতার করে সেনা সমর্থিত সরকার। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

নির্যাতিত শিক্ষক অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ ২৩ আগস্ট রাতের স্মৃতিচারণ করে ক্যাম্পাসলাইভ২৪ কে বলেন, "২০০৭ সালের ২৩ আগস্টের প্রথম প্রহরে আমরা গ্রেফতার হলাম।আমাদের চোখ বেঁধে ক্যান্টেনমেন্টে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো।পরে নীল চন্দ্র ভূমিক ও সৈয়দুল আমিন আত্মসমর্পণ করেছে। ক্যান্টেনমেন্টে এগারো দিন রিমান্ড থাকার পর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ৫ মাস জেলে ছিলাম।

উস্কানিমূলক কর্মকান্ড এবং নাশকতার অভিযোগে দুইটি মামলা দিলো। একটা তে খালাস দিলো আরেকটাতে দুইবছর সশ্রম কারাদণ্ড দিলো। পরে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমদের বিশেষ উদ্যোগে আমাদের মুক্তি দেওয়া হয়। আমাদের বন্ড সাইন দিতে বলেছিলো কিন্তু আমরা রাজি হয়নি।"

অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ আরো বলেন, "তৎকালীন যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিলো সেটা মূলত ছিলো সেনাবাহিনীর অভিজাতদের দ্বারা পরিচালিত ও সমর্থিত সরকার। সামনে মুখোশ হিসেবে ফখরুদ্দিন আহমেদ থাকলেও মূলত সবকিছুই চালাতো সেনাবাহিনী। তাঁদের হয়তো দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার একটা উচ্চাভিলাস ছিলো। তাই ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চেয়েছিলো।"

তিনি আরো বলেন, "সমাজের অনেক রাজনৈতিক দলগুলো যখন হাত গুটিয়ে বসে থেকেছিলো, সমাজের অধিকাংশ মানুষ তখন ভীতিকর অবস্থায় ছিলো তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর ঐতিহাসিক যে ভূমিকা বিগতদিনে পালন করে এসেছে তার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। খেলার মাঠের ছোট্ট ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে আন্দোলন হয়েছে এর প্রেক্ষিতে দেশ সেনাশাসনের কবল থেকে মুক্ত হয়ে আবারো গণতন্ত্র ফিরে পেয়েছে।"

এই ঘটনায় তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেনা সমর্থিত সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলো বলে মন্তব্য করে ক্যম্পাসলাইভ২৪ কে বলেন, " ভিসি ড. ফায়েজ সাহেব ছিলেন দেশের বাইরে। তখন ভারপ্রাপ্ত ভিসি ছিলেন এ এফ এম ইউসুফ হায়দার। তিনি ছিলেন দূর্বলচিত্তের মানুষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে তার যে অবস্থান হওয়া দরকার ছিলো সেটা গ্রহন করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। মানুষ প্রত্যাশা করেছিলো তিনি ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াবেন, প্রতিবাদ করবেন কিন্তু তিনি তা করেন নি। তাহলে সেটা যারা ক্ষমতা দখল করেছিলো কার্যত তাদের পক্ষে যায়। আমাদের স্ত্রী সন্তানেরা যখন সুবেদার সাহবের সাথে দেখা করতে গিয়েছে তিনি বাড়িতে থাকা সত্ত্বেও দেখা করেন নাই।"

তবে হল ভ্যাকেন্টসহ নানা পদক্ষেপে ঢাবি প্রশাসনের ভূমিকা সম্পর্কে অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, "তখন সেনাশাসন ছিলো। প্রশাসন চাপে ছিলো। সীমাবদ্ধতাও ছিলো তাদের।"

ঘটনার দীর্ঘ ৬৬ দিন পর খুলে দেয়া হয় ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো নির্যাতনবিরোধী ব্যানারে মাঠে নামে। ধীরে ধীরে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির আন্দোলনও বেগবান হতে থাকে। পরে আরও দুটি ব্যানারে ছাত্রবন্ধু ও নির্যাতন প্রতিরোধ ছাত্র আন্দোলন ছাত্র-শিক্ষক মুক্তির আন্দোলনে গতির সঞ্চার করেছিল। ছাত্র-শিক্ষকদের মুক্তি আন্দোলনের কাছে হার মানে সেনাসমর্থিত সরকার। বাধ্য হয়ে গ্রেফতারকৃত ছাত্র-শিক্ষকদের মুক্তি দেয়া হয়। পরের বছর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার ২৩ আগস্টকে কালো দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।

ঢাকা, ২৩ আগস্ট (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমজেড


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ