ঢাবি লাইভঃ বাংলাদেশ-ভারত, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় থেকে দেশ দুটির সম্পর্কে খুব বেশি ভাটা পড়তে দেখা যায়নি। সামান্য কিছুু বিষয় নিয়ে সাময়িক দ্বন্দ্বের মুখোমুৃখি হলেও বর্তমানে ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক অভূতপূর্ব। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বলেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন। আবার অনেকে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ বলেছেন।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এত মধুর থাকার পরেও কেন সীমান্তে নির্বিচারে বাংলাদেশী হত্যা থামছে না? এমন প্রশ্নের কোন প্রাসঙ্গিক সীমান্তে হত্যার প্রতিবাদে শোকমিছিল দিতে পারেনি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। বারবার সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যার পর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিজিবি প্রতিবাদ জানালে তারা যে যুক্তি দেখায় তা মানতে নারাজ বিজিবি।
বিএসএফ যুক্তি দেখিয়ে বলে,"আমরা আত্মরক্ষার্থে গু*লি চালাই অথবা গরু পাচার রোধে গু*লি চালাই।" বিজিবি প্রতিবারই তাদের এই খোড়া যুক্তি মানতে নারাজ। প্রতিবছর সীমান্তে সাংকেতিকহারে বাড়ছে। অন্যদিকে ভারতের সাথে পাকিস্তানের কিংবা চীনের সাপে নেউলে সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও এমন আশঙ্কাজনকহারে সীমান্ত হত্যার ঘটনা ঘটছে না। এখানটাতেই প্রশ্ন সবার। বাংলাদেশের সাথে তাহলে কেমন সম্পর্ক ভারতের?
গতবছর অর্থ্যাৎ ২০১৯ সালে সীমান্তে ৪৩ জন বাংলাদেশীকে গুলি করে হত্যা করেছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ। এরপর ২০১৯ পেরিয়ে ২০২০ আসতে না আসতে শুধু জানুয়ারীর ২৩ তারিখ পর্যন্ত মাত্র ২৩ দিনে ১৫ জন বাংলাদেশীকে গু*লি করে হত্যা করে বিএসএফ। এরপরেও বেশ কিছু হত্যার ঘটনা ঘটেছে সীমান্তে। এক রাখালকে সীমান্ত থেকে ধরে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে বিএসএফ।
পরে বিজিবি পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে লাশ ফেরৎ চাইলে লাশ দিতে অস্বীকৃতি জানায় বিএসএফ। পিটিয়ে হত্যার ৮দিন পর সেই রাখালের লাশ ফেরৎ দিয়েছিল বিএসএফ। এসব ঘটনার প্রতিক্রিয়া স্বরূপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী নাসির আব্দুল্লাহ্ সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান কর্মসূচীতে বসেন।
ফেব্রুয়ারির ২০ তারিখ পর্যন্ত তার অবস্থানের ২৭ দিন। ২১ ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবস বা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের পাশাপাশি সীমান্তে বিএসএফ এর হাতে প্রাণ দেয়া বাংলাদেশীদেরও স্বরণ করতে চায় অবস্থান কর্মসূচীতে থাকা নাসির আব্দুল্লাহ্সহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সর্বস্তরের জনগন। বিষয়টি তারা একটি প্রেস রিলিজের মাধ্যমে নিশ্চিত করেছে। ক্যাম্পাসলাইভের পাঠকদের সুবিধার্থে প্রেস রিলিজটি হুবহু নিচে তুলে দেয়া হলো।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
তারিখঃ ২০/০২/২০২০
"সীমান্তে হত্যার প্রতিবাদে শোকমিছিল"
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী আমাদের বেসামরিক নাগরিকদের ধারাবাহিকভাবে হত্যা করে আসছে। এই হত্যার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ রাষ্ট্র কখনো শক্ত অবস্থান নেয়নি যা আমাদের জন্য অপমানজনক ও লজ্জার। সেই ক্ষোভের জায়গা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাসীর আব্দুল্লাহ সীমান্তে ঘটে যাওয়া সকল হত্যার বিচারের দাবিতে খোলা আকাশের নিচে ধূলাবালির ভিতরে রাজু ভাস্কর্যে সাতাশ দিন যাবত অবস্থান করছেন। তাঁকে ঘিরে আমরা নাগরিকরাও পাশে দাড়িয়েছি।
প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি আমরা শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে আমাদের ভাষা শহীদদের স্মরণ করি। কিন্তু এবারের একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের কাছে এক ভিন্ন অর্থ বহন করে। এই ফেব্রুয়ারিতে রাজু ভাস্কর্যে প্রতিবাদরত অবস্থায় আমরা যেমন ভাষার জন্য প্রাণ দেওয়া শহীদদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি, একইসাথে সীমান্তে নির্যাতিত ও শহীদ হওয়া সকল বাংলাদেশী নাগরিকদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছি। তাই এবারের একুশের চেতনা আমাদের কাছে ভাষা, সীমান্ত, স্বাধীনতা, স্বার্বভৌমত্ব ও নাগরিকের মর্যাদা রক্ষার করার দীপ্ত শপথ।
সেই দীপ্ত শপথে বলীয়ান হয়ে আগামীকাল ৩টায় রাজু ভাস্কর্য থেকে মাটি, মানুষ, ভাষা ও সীমান্ত রক্ষার দাবিতে এবং ভাষা শহীদ ও সীমান্তে নিহত হওয়া সকল বাংলাদেশী নাগরিকদের স্মরণ করে শোকমিছিলের আহ্বান করা হয়েছে। শহদীদের স্মরণের পাশাপাশি নিহত নাগরিকদের বিচার পাবার অধিকার, তাঁদের পরিবারের ক্ষতিপূরণ পাবার অধিকারের কথা দেশে এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে জানাতে চাই। মিছিলে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, শ্রমিক, রিকশাওয়ালাসহ সকল শ্রেণিপেশার জনগণকে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানাই।
দেশের সার্বভৌমত্ব ও মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ের বার্তাটি জনগণের মধ্যে পৌছে দেওয়ার জন্য আগামীকালের "সীমান্তে হত্যার প্রতিবাদে শোকমিছিল" কর্মসূচীতে সাংবাদিক বন্ধুদের উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানাই।
ঢাকা, ২০ ফেব্রুয়ারি (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমজেড
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: