Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | রবিবার, ১৯শে মে ২০২৪, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

শিবির অপবাদে নির্যাতন চলত বশেমুরবিপ্রবিতেও

প্রকাশিত: ২২ অক্টোবার ২০১৯, ০৮:১৫

বশেমুরবিপ্রবি লাইভঃ আবরার হত্যাকান্ডের পর প্রতিদিনই সংবাদমাধ্যমে উঠে আসছে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্যাতনের বর্ণনা। এই তালিকা থেকে বাদ নেই গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ও (বশেমুরবিপ্রবি)।

অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক ভিসি খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের নির্দেশেই শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করতে শিবির অপবাদে চলতো এই নির্যাতন। নির্যাতনকারীর তালিকায়ও উঠে এসেছে সাবেক এই ভিসির ঘনিষ্ঠ চার শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম সাকিব, শেখ রাফিজ, নুরুদ্দীন নাহিদ এবং রাফিন রাসা সহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর নাম।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলা হলে ১৭ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন সময়ে ভিসির ঘনিষ্ঠ শিক্ষার্থীদের দ্বারা নির্যাতিত হওয়ার কথা জানান। শিবির অপবাদে এই নির্যাতনের তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইন্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের শিক্ষার্থী সালমান রহমান।

সিএসই বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, তৎকালীন ভিসি প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় ১ সেপ্টেম্বর রাত ১০ টায় ম্যানেজমেন্ট চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শেখ রাফিজ এবং নুরুদ্দীন নাহিদের নেতৃত্বে হল থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় সালমান রহমানকে।

পরবর্তীতে শিবির অপবাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় চলে প্রায় তিনঘন্টার নির্যাতন এবং নির্যাতন শেষে তুলে দেয়া হয় পুলিশের নিকট। আর এই সমগ্র ঘটনাটিতে সহায়তাকারীর ভূমিকা পালন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সালমানের প্রতি নির্যাতন শেষে রাত ২ টায় সালমানসহ আইন দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাতেমা-তুজ-জিনিয়া ও বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে শিবিরকর্মী উল্লেখ করে ফেসবুকে পোস্ট দেয় আরিফুল ইসলাম সাকিব।

পোস্টে উল্লেখিত বাকি দুজনেরও অপরাধ ছিলো ভিসির দুর্নীতির প্রতিবাদ করা। পরবর্তীতে আরিফুল ইসলাম সাকিবের নেতৃত্বে, নুরুদ্দীন নাহিদ, রাফিন রাসাসহ বেশ কয়েকজন হামলা চালানোর চেষ্টা করে ফাতেমা তুজ জিনিয়ার মেসে যেখানে তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরও কিছু ব্যক্তি সহায়তা করে। কিন্তু স্থানীয়দের কারণে তাদের এই হামলা চেষ্টা ব্যর্থ হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমের (এআাইএস) শিক্ষার্থী রাকিবুল রণি জানান ২০১৮ সালে শিবির অপবাদে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিনিও। খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় শিবির অপবাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় দিবস হলের একটি কক্ষে তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়।

এক্ষেত্রে তিনি নির্যাতনকারী হিসেবে একাউন্টিাং এন্ড ইনফরমেশন বিভাগের ফয়সাল সাজিদ এবং শেখ লিখনের নাম উল্লেখ করেন। রণি জানান তাকে স্টাম্প, ক্রিকেট ব্যাট এবং হাতুড়ি দিয়ে প্রায় ২ ঘন্টা নির্যাতন করা হয়। নির্যাতন শেষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহায়তায় রণিকে শিবির কর্মী অপবাদে তুলে দেয়া হয় পুলিশের নিকট।

এ বিষয়ে অভিযুক্তদের সাথে যোগাযোগ করা হলে ফয়সাল সাজিদ জানান, রণিকে রুমে ডাকা হয়েছিলো এটা ঠিক তবে তিনি পুরোটা সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন না এবং নির্যাতনও করেননি। আর শেখ লিখন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

শুধু সালমান কিংবা রণি নয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো ১৫ জন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসকল শিক্ষার্থী জানিয়েছেন তারা বিভিন্ন সময় আরিফ, রাফিজ, নাহিদ, রাসাদের কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কেউ কোনো বিষয়ে প্রতিবাদ করলেই তাকে শিবির সন্দেহে নির্যাতন এবং পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হতো।

এমনকি গত ১৯ সেপ্টেম্বর স্বৈরাচারী আচরণসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হলে আন্দোলনকারীদের শিবির কর্মী প্রমাণের চেষ্টা করে ভিসির ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা।

ভিসি ঘনিষ্ঠ শিক্ষকদের একটি গ্রুপ কনভারসেশনের স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে যেখান থেকে এধরণের ষড়যন্ত্রের প্রমাণ পাওয়া যায়। এছাড়া ২১ সেপ্টেম্বর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর যে হামলার ঘটনা ঘটে সেখানেও হামলাকারী হিসেবে উঠে এসেছে ভিসির ঘনিষ্ঠ এসকল শিক্ষার্থীদের নাম।

এসকল বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর আশিকুজ্জামান ভুঁইয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রশাসনের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেন এবং বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সন্তানতুল্য, তাদের নির্যাতনের কথাতো আমরা চিন্তাও করতে পারিনা"

ঢাকা, ২১ অক্টোবর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমজেড


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ