Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | সোমবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৪, ১৬ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

শেকৃবিতে সর্বপ্রথম জাফরান উৎপাদনে সফলতা

প্রকাশিত: ১১ নভেম্বার ২০১৮, ০২:২২

ওলী আহম্মেদ, শেকৃবি: জাফরান। একটি নাম। একটি মূল্যবান ফুলও বটে। এর উৎপাদন আর ফলন নিয়েই আজকের আয়োজন। ইংরেজিতে স্যাফ্রন যার বৈজ্ঞানিক নাম Crocas sativas। রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) গবেষণায় দেশে সর্বপ্রথম জাফরান উৎপাদন সফলতার মুখ দেখেছে। বাংলাদেশে জাফরান উৎপাদনে একটি মাইলফলক।

জাফরান (ইংরেজি: saffron crocus), (বৈজ্ঞানিক নাম: Crocus sativus) হচ্ছে Crocus গণের একটি সপুষ্পক উদ্ভিদের প্রজাতি। এটি ওজনের মধ্যে বিশ্বের সর্বাপেক্ষা মূল্যবান মসলার একটি। এদের বেশির ভাগ ভারতে কাশ্মীরে জন্মায়। এটি গ্রিসে প্রথম চাষ করা হয়েছিল। এদের অন্যান্য স্থানীয় নামের মধ্যে আছে saffron Za’afaran, Zaafaran Kesar, Zafran.


সেই বহুকাল ধরেই নানা মুখরোচক খাবারকে আরও সুস্বাদু করা সহ মূল্যবান প্রসাধনীতে জাফরানের জুড়ি নেই। জাপান প্রবাসী বন্ধুর দ্বারা দুইশ'টি জাফরানের কন্দ আনিয়েছিলেন তিনি। প্রয়োজনীয় পরিচর্যায় কয়েকমাস পর সুবাস ছড়িয়ে সেই দুইশ কন্দের প্রত্যেকটিতেই ফুল আসে। দৈর্ঘ্যে সর্বোচ্চ ছয়-আট ইঞ্চি প্রতিটি জাফরান গাছে এক থেকে দুটি গাড় বেগুনী রংয়ের ফুল হয়।

জাফরান নিয়ে কথা বলার সময় এমনটাই জানাচ্ছিলেন ড. আ ফ ম জামাল উদ্দীন। সংশ্লিষ্ট এই গবেষক শেকৃবি উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক। তিনি ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ইরানের জাফরান বিশ্ববিখ্যাত। কাশ্মীরি জাফরানও বিশ্ব বাজারে বেশ চাহিদার।

জানা যায়, আমাদের দেশে জাফরান উৎপাদন হয়না বলে দেশের সব বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট, হোটেল ও মিষ্টান্ন সম্ভারগুলোতেই কেবল প্রতি বছর ছত্রিশ থেকে চল্লিশ কেজি জাফরান আমদানি করা হয়। যার প্রতি কেজির মূল্য তিন লক্ষ টাকা পর্যন্ত।

এ সংশ্লিষ্ট সার্বিক বিষয়ে কথা বলার সময় ড. জামাল বাংলাদেশ ও বিশ্ব প্রেক্ষিতে জাফরান চাষের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “ঝুরঝুরে বেলে-দোআশ মাটি জাফরান চাষের উপযোগী। স্বল্প আলোতে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় জাফরান ভালো জন্মায়। প্রস্তুতকৃত জমিতে কন্দ লাগানোর তিন মাসের মধ্যে জাফরান ফুল সংগ্রহ করা যায়, এক্ষেত্রে ফুল ফোটার দিনই ফুল সংগ্রহ করে নিতে হয়।

জাফরান চাষ

 

একটি কন্দ থেকে পরবর্তীতে আরেকটি কন্দ হয় এবং প্রতিটি কন্দ বেশ কয়েকবার ব্যবহার উপযোগী। তবে বাংলাদেশে জাফরান নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে চাষ করতে হবে। বাংলাদেশ উষ্ণম-লীয় অঞ্চলে অবস্থিত বলে এখানকার স্বাভাবিক তাপমাত্রা জাফরান চাষের জন্য প্রায় অনুপযোগী।

তাছাড়া জলাবদ্ধতা প্রধান বাধা হওয়ায় ড্রিপ ইরিগেশন পদ্ধতিতে পানি সরবরাহ করলে এক্ষেত্রে সুবিধা করা যাবে। সার্বিক দিক খেয়াল রাখলে গ্রিন হাউজের মাধ্যমে দেশে জাফরান সম্পূর্ণ সফলভাবে উৎপাদন সম্ভব বলে জানান শেকৃবির এই গবেষক।”

তিনি আরও বলেন, “ব্যক্তিগত ভাবে দেশে জাফরান চাষ বেশ ব্যয়বহুল। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে জাফরান চাষের লক্ষ্যে কমপক্ষে ২০০০ বর্গফুটের একটি গ্রিনহাউজ প্রয়োজন যাতে খরচ হবে সর্বোচ্চ দেড় থেকে দুই কোটি টাকা।

এক্ষেত্রে সরকার যদি এই সম্ভাবনাময় গবেষণায় বিশেষ অনুদানের ব্যবস্থা করেন, তবে তা আমাদের সম্প্রসারণ মূলক গবেষণায় আরেকটি ধাপ উন্মোচিত করবে।”

জাফরান ফুল দেখতে যেমন আকর্ষনীয় তেমনি আকর্ষনীয় এর সুগন্ধ। এই উদ্ভিদের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর কোন বীজ হয় না। বিস্ময়ের ব্যাপার যে, এর ফুল হয় অথচ বীজ হয় না । এটি বহুমূল্য হওয়ার আরো একটি কারণ আছে। এই উদ্ভিদ থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান মসলা উৎপাদন করা হয়। এই মসলার নামও জাফরান। এটা কত মূল্যবান তা বোঝা যায় এর দাম শুনলেই। ১ কেজি জাফরানের গড় দাম বাংলাদেশী মূদ্রায় প্রায় চার লাখ টাকা । ৪৫০ গ্রাম জাফরান তৈরির জন্য প্রায় ৭৫ হাজার ফুল প্রয়োজন।

জাফরানের ব্যাবহারঃ জাফরান ফুলে লাল বর্ণের তিনটি গর্ভদণ্ড থাকে। এগুলোকে ইংরেজিতে বলে স্টিগমা। এই গর্ভদণ্ড সংগ্রহ করে শুকিয়ে জাফরান প্রস্তুত করা হয়। সত্যিই বড় অদ্ভুত আমাদের প্রকৃতি। আমাদের দেশে জাফরান মূলত: ব্যবহার হয় জরদা নামের মিষ্টান্ন ও পায়েস তৈরিতে। বিরিয়ানির সুন্দর রঙ আনার জন্যও জাফরান ব্যবহার করা হয়।

এ ছাড়াও জাফরান দিয়ে প্রস্তুত করা হয় জাফরান কালি। এই জাফরান কালি ব্যবহার করা হয় আরবী লেখার ক্ষেত্রে। মৌলভী ও ইমামগণ জাফরান কালি দিয়ে পাত্রে আরবীতে দোয়া লিখে অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দিয়ে থাকেন। এই কালি ধোয়া পানি রোগী পান করে থাকেন।

টপে জাফরান চাষ

 

জাফরানের উপকারীতাঃ জাফরান যেমন অর্থকরী একটি মসলা তেমনি এটি স্বাস্থ্যের জন্যও অনেক উপকারী। এটি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা ও অন্য অনেক শারীরিক সমস্যা নির্মূলে ঔষধি হিসেবে কাজ করে থাকে।

একসময় দেহসৌষ্ঠব বাড়ানোর জন্য গায়ে মাখা হতো জাফরান। ত্বকের লাবন্য বাড়াতে জাফরানের জুড়ি নেই। এটি ত্বককে উজ্জ্বল করে এবং অবসাদের চিহ্ন দূর করে ত্বককে সতেজ ও সজীব করে তোলে। এর ভেষজ গুণ এতই সমৃদ্ধ যে, এটি মানবদেহে অন্তত ১৫টি সমস্যা দূর করতে সক্ষম।

জাফরানে উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদপিণ্ডের সমস্যা দূর হয়। হজমজনিত সমস্যা নিরাময়ে জাফরান প্রয়োগের নজির আছে। পরিমাণমত জাফরান নিয়মিত খেলে ফুসফুসের বিভিন্ন রোগ দূর হয়ে যায়। অনিদ্রা দূর করে জাফরান। যে কোন ধরণের ব্যথা নিরাময়ে জাফরান অত্যন্ত কার্যকরী। স্মৃতিশক্তি ও চিন্তাশক্তি বৃদ্ধিতেও এটি বেশ সহায়ক। প্রসাধন সামগ্রীতে জাফরানের বহুল ব্যবহার রয়েছে।


ঢাকা, ১০ নভেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএসসি


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ