ওলী আহম্মেদ শেকৃবি: দুর্লভ ফুল। গাছটিও সচরাচর মিলে না। দেখা যায় না কোথাও। এই ফুলের নাম নাগলিঙ্গম। রাজধানী ঢাকার ছায়া সুনিবিড় ক্যাম্পাস শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি)। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াজেদ মিয়া গবেষণাগারের সামনে বিশালাকৃতির কয়েকটি গাছ।
গাছের চোখজুড়ানো রংয়ের ফুলগুলো থেকে ভেসে আসে মনোরম সুবাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী তো বটেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বেড়াতে আসা বহিরাগতদেরও খুব পছন্দের এই গাছটি।
কিছুক্ষণ মনোমুগ্ধকর সুবাস নিতে গাছগুলোর সামনে অজান্তেই দাঁড়িয়ে যায় উৎসুক অনেকেই। তবে শুধু সুবাস বিলিয়ে নয়, অদূর ভবিষ্যতে দুর্লভ এই গাছ সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণে দেশে উন্মোচিত হতে পারে সুগন্ধি শিল্পের নতুন সম্ভাবনা।
গাছটির নাম 'নাগলিঙ্গম', ইংরেজি নাম ‘ক্যাননবল ট্রি' (Cannon ball tree)। অনেকটা সাপের ফনার মতো দেখতে ৬ পাপড়িবিশিষ্ট নাগলিঙ্গম ফুল ফোটে গ্রীষ্ম ও বর্ষা এ দুই ঋতুতে। জানা গেছে, ঢাকার বলধা উদ্যান, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার জমিদারবাড়ি, মৌলভীবাজারের বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) ক্যাম্পাস, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও শেকৃবি ক্যাম্পাস মিলে দেশে নাগলিঙ্গম গাছ এখন ৩৫ টির মতো।
এর মধ্যে শেকৃবি ক্যাম্পাসেই রয়েছে সাতটি। ৮০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয় দুষ্প্রাপ্য নাগলিঙ্গম নামের এই গাছটি। নাগলিঙ্গমের ফল থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় বীজ সংগ্রহ করে তা রোপন করতে হয় বলে জানান শেকৃবি উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ফ ম জামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘বীজ থেকে থেকে গাছ হতে ১ মাসের মতো সময় লাগে।
গাছটির মোটামুটি একটা সাইজ হতে সময় লাগে ৫ বছরের মতো। আর নাগলিঙ্গমের ফুল দেখতে অপেক্ষা করতে হবে ১০ বছর পর্যন্ত।'
মনকাড়া মিষ্টি সুবাসের এ ফুল থেকে পারফিউম তৈরি সম্ভব বলে মনে করেন শেকৃবির এই কৃষি গবেষক।
তিনি জানান,‘দুর্লভ ফুল থেকেই বিখ্যাত সব পারফিউম তৈরি হয়। এক্ষেত্রে সুগন্ধি শিল্পে আমাদের দেশেও নাগলিঙ্গমের সম্ভাবনা অনেক বেশি। সম্প্রতি অনেকে দেশেই নাগলিঙ্গম থেকে পারফিউম তৈরি হচ্ছে। নাগলিঙ্গমের ফলগুলো দেশীয় বেলের মতো গোল ও খানিক বড়, যা হাতির বেশ প্রিয় খাবার।'
দেশে এ গাছের সম্ভাবনা ও সম্প্রসারণের ব্যাপারে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. আ ফ ম জামাল উদ্দিন জানান, 'এ গাছের বিস্তার ঘটাতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা এ গাছের বিস্তার ঘটাতে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি।
বিভাগীয় নিজস্ব ল্যাবে প্রতি বছরই নতুন চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। গত বছর ২০০-র বেশি চারা উৎপাদন করা হয়েছে।
উৎপাদিত এসব চারা গ্রিন বাংলাদেশ সোসাইটির মাধ্যমে সারাদেশে মানুষের কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
ঢাকা, ৩১ অক্টোবর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএসসি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: