ঢাবি লাইভ: প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ৫১তম সমাবর্তন শনিবার। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর তার ছেলেবেলার সেই স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে আজ। কালো রঙয়ের গাউন পরে উল্লাসে মেতেছেন গ্রাজুয়েটরা।
সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ বলেন, উচ্চ শিক্ষার মধ্য দিয়ে তোমাদের দেশ গড়ার কাজে নিজেকে উৎসর্গ করতে হবে। সত্যের সাথে মিথ্যার এবং "অন্যায়ের সাথে ন্যায়ের আপস করবে না"। নিছক চাকরির জন্য উচ্চ শিক্ষা নয়, বরং উচ্চ শিক্ষার অর্থ হলো নিজে শিক্ষিত হওয়া এবং অন্যকে শিক্ষিত করা।
প্রেসিডেন্টের ভাষণে তিনি আরো বলেন, ডিপ্লোমা ও সান্ধ্যকালীন কোর্সের নামে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে অপরিকল্পিত ভাবে ডিগ্রি প্রদান করা হচ্ছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যের পাশাপাশি স্বাভাবিক লেখাপড়ার বিঘ্নিত হচ্ছে কি না তা ভাবতে হবে। জনগণের অর্থে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলো পরিচালিত হয়, তাই তাদের স্বর্থকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে।
মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় অস্ত্র সমর্পণ অনুষ্ঠানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ভষণ উল্লেখ্য করে বলেন, বঙ্গবন্ধু যথার্থই বলেছিলেন "দেশ স্বাধীন করার চেয়ে, স্বাধীনতা রাষ্ট্রকে গড়া একটি কঠিন কাজ"। তাই জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণের জন্য তরুণদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
২১ হাজার শিক্ষার্থীর পদচারণায় মুখর গোটা ঢাবি ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত এ সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ সভাপতিত্ব করবেন।
সমাবর্তনকে ঘিরে হাজারও গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থীকে কালো গাউন পরে বন্ধুবান্ধব বা অভিভাবকদের সঙ্গে উল্লাস করতে দেখা গেছে। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে কেউ কেউ নানা ভঙ্গিতে ছবি তুলছেন, এক বন্ধ আরেক বন্ধুকে গাউন পরিয়ে দিচ্ছেন, কেউ আবার সামনে বসতে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠানে আগেই উপস্থিত হয়ে অধীর অপেক্ষা করছেন।
ভাপতির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘রাজনীতি এখন গরিবের ভাউজ। গ্রামের ভাষায় ভাউজ হচ্ছে ভাবি। গরিবের বউ হচ্ছে সবার ভাবি। এখন রাজনীতিও তেমন। যে কেউ চাইলেই রাজনীতিতে আসতে পারছে। কিন্তু অন্য পেশায় কেউ চাইলেই যেতে পারে না।’
দেখা গেছে, পুরো ক্যাম্পাস ছেয়ে গেছে সমাবর্তনের ব্যানার-ফেস্টুনে। সকাল ৭টা থেকেই ঢাবি ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই মা-বাবাকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। আবেগাপ্লুত অনেক বাবা-মা সন্তানের সাফল্যের আনন্দে অশ্রুও ফেলছেন। কেউ কেউ আবার বাবা-মাকে গাউন ও টুপি পরিয়ে ছবি তুলছেন।
প্রেসিডেন্টের বক্তবে তিনি আরো বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের (ডাকসু) একটি আশার আলো দেখতে শুরু করেছে। ডাকসু নির্বাচনে আমাদের সকলকে একযুগে কাজ করতে হবে। যাতে করে কোন মহল নির্বাচন বানচাল করতে বা কোন অপচেষ্টা চালাতে না পারে। সে দিকে আমাদের সকলের নজর রাখতে হবে।
এসময় তিনি আরো বলেন, ডাকসু নির্বাচনের পরেই আমরা দেশের সকল পাবলিক/প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন করা হবে। যাতে করে মেধাবীদের থেকেই নেতৃত্ব গড়ে উঠে।
সমাবর্তন আয়োজন কমিটির সদস্যরা জানান, সমাবর্তন উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার বিকেল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্রের খেলার মাঠে একটি মহড়া হয়। এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২১ হাজার ১১১ জন গ্র্যাজুয়েট সমাবর্তনে অংশ নিচ্ছেন। যা ঢাবির ইতিহাসে সর্বাধিক গ্র্যাজুয়েট। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে কৃতী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ৯৬টি স্বর্ণপদক, ৮১ জনকে পিএইচডি এবং ২৭ জনকে এমফিল ডিগ্রি দেয়া হবে।
ঢাকা, ০৬ অক্টোবর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমআই
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: