ঢাবি লাইভ: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষাখাতের ব্যয়কে ‘বিনিয়োগ’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, “শিক্ষাকে বহুমুখী করার জন্য বর্তমান সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। শুধু কিতাবি শিক্ষা নয়, জীবনমানের উন্নয়ন ঘটানো যায়, এমন শিক্ষা ব্যবস্থা আমরা গড়ে তুলতে চাই।” শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোকেয়া হলের ছাত্রীদের জন্য নবনির্মিত ৭ মার্চ ভবন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (শিক্ষা) প্রফেসর ড. নাসরীন আহমাদ, প্রো-ভিসি (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মুহাম্মদ সামাদ ও ট্রজারার প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দীন শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য দেন রোকেয়া হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. জিনাত হুদা। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. এনামউজ্জামান অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা এনে দিয়েছিলেন। তিনি শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে একটি সর্বজনীন ও বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষানীতি উপহার দিয়েছিলেন।
জাতির পিতার অবিসংবাদিত নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশ যখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল, তখনই একাত্তরের পরাজিত শক্তি ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট তাঁকে সপরিবারে হত্যা করে। শুধু রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের জন্য তাঁকে হত্যা করা হয়নি। মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি এবং স্বাধীনতা বিরোধীদের পুনর্বাসনের জন্য তাঁকে হত্যা করা হয়।
এরপর বাংলাদেশ পিছনে হাঁটতে শুরু করে। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শাসনকাল ছিল বাংলাদেশের জন্য স্বর্ণযুগ। বর্তমান সরকার গত সাড়ে নয় বছরে জনগণকে কাঙ্খিত উন্নয়ন উপহার দিয়েছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।
জাতীয় প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় ও গড় আয়ু বেড়েছে। দারিদ্রের হার কমেছে। নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সকল ক্ষেত্রে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সক্ষম হয়েছে। তরুণরা এখন আউটসোর্সিং করে আয় করছে।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে আরো বলেন, বিশ্বে ৫৭তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ মহাকাশে ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ উৎক্ষেপণ করেছে। দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতি বিভাগীয় শহরে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হচ্ছে। পিএইচডি ফেলোশিপ ভাতা এবং পোস্ট ডক্টোরাল ফেলোশিপ ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ‘বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ ট্রাস্ট’ গঠন করে গবেষণা কর্মকে আরও বিস্তৃত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশ্বমান অর্জনে যে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে, তার ধারাবাহিকতা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। জ্ঞানভিত্তিক দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তুলতে বর্তমান সরকার প্রয়াস চালিয়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ সম্প্রতি ইউনেস্কোর ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দা ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বাঙালি জাতি হিসেবে আমরা গর্বিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঐতিহাসিক ৭মার্চ ভাষণের স্মরণে নির্মিত এ ভবন যেমন ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতীক, তেমনি শিক্ষা বিস্তারে একটি নতুন মাত্রার সংযোজন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে শিক্ষার্থীরা বিশ্বে সবচেয়ে কম খরচে উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ পাচ্ছে। সব ধরণের উচ্ছৃঙ্খলতা পরিহার ও নিয়ম কানুন মেনে উচ্চশিক্ষার এ সুযোগ গ্রহণের জন্য তিনি শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান।
ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অমর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মূল্যবোধ ধারণ করে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার কাজে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭ মার্চ ভবনের ফলক উন্মোচন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য পরিদর্শন ও ৭ মার্চ জাদুঘর পরিদর্শন করেন।
ঢাকা, ০১ সেপ্টেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমআই
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: