জবি লাইভ : পড়াশোনা বাদ দিয়ে দুর্বৃত্তায়নে জড়িয়ে পড়ছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অপহরণ, ছিনতাই, যৌন হয়রানিসহ নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। এসব অপকর্মের জন্য একটি চক্র গড়ে উঠেছে। তারা অনেক সময় রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করে। এছাড়া মাদকের নেশায় মত্ত হয়ে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। এই বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে জমজমাট হয়ে উঠেছে মাদক ব্যবসা। ক্যাম্পাসে হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইন, ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য। দশটি পয়েন্টে নিয়মিত মাদকসেবীদের আড্ডা বসে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভবনের বেজমেন্ট (জিরো পয়েন্ট), ভিসি চত্বর, ক্যান্টিন, পাটুয়াটুলি গেইট, সামাজিক বিজ্ঞান চত্বর, রেভেনাস ক্যান্টিন, নির্মাণাধীন ছাত্রী হল, দ্বিতীয় গেইটের বাসস্ট্যান্ড, লোকপ্রশাসন বিভাগের ছাদ ও পোগোজ স্কুল মাদকসেবীদের আড্ডার স্পট হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত পেয়েছে। হাতের নাগালে সহজেই মাদক পাওয়া যায় বলে বিশ্ববিদ্যালয়ে দিন দিন মাদকসেবী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে।
এদিকে ব্যবসায়ীকে অপহরণের পর চাঁদা দাবির অভিযোগে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপহরণে ঘটনায় জড়িত অপর শিক্ষার্থীদের খুঁজছে পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি চক্র এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ। ওই চক্রের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।
অপকর্মের কথা স্বীকার করায় দুই ছাত্রকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্তরা হলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের নবম ব্যাচের গণিত বিভাগের ছাত্র রাকিবুল ইসলাম রিয়াদ ও ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের দশম ব্যাচের ছাত্র নূর-ই-আলম নিশান।
তদন্ত কর্মকর্তা ও কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক মওতুত হাওলাদার বলেন, এক ব্যক্তিকে অপহরণ করে চাঁদা আদায়ের অভিযোগে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, আবু সাহেদুল ইসলাম নামের এক দোকান কর্মচারী মালামাল কেনার জন্য গত বৃহস্পতিবার সদরঘাটে আসেন। তার কাছে ছিল ২ লাখ ৭২ হাজার টাকা। কেনাকাটা শেষে তিনি যখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আসেন, তখন অজ্ঞাত কিছু লোক তাকে রাস্তা থেকে অপহরণ করে আটকে রাখেন। পরে সাহেদুলের মালিক রওশন পারভেজের কাছে চাঁদা চান। এ ঘটনায় রওশন পারভেজ বাদী হয়ে সেদিনই কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন।
১০ আগস্ট রিয়াদ ও নিশান নামের দুই ছাত্রকে আদালতে হাজির করে ঘটনার রহস্য উদঘাটনের জন্য সাত দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। আদালতকে সেদিন পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সাহেদুলকে অপহরণ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে বাণিজ্য বিভাগের দক্ষিণ-পূর্ব কোণের চিপা গলিতে নিয়ে মারধর করে সাহেদুলের মালিক রওশন পারভেজের কাছে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়।
পরে বাদীকে আসামিরা বিকাশ নম্বর দেন। সেই নম্বরের সূত্র ধরে দুজনকে নাসির উদ্দিন সরদার লেক থেকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
গত ১২ আগস্ট রিয়াদ ও নিশানকে আদালতে হাজির করে তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন জানায় পুলিশ। সেদিন পুলিশ আদালতকে জানিয়েছে, ভুক্তভোগী দোকানের কর্মচারী সাহেদুলকে সেদিন বিশ্ববিদ্যালয়টির নবম ব্যাচের লোকপ্রশাসন বিভাগের ছাত্র খালিদ হাসান অপহরণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে নিয়ে যান।
এ ঘটনায় তার সহযোগী হিসেবে জড়িত ছিলেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অষ্টম ব্যাচের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র মঞ্জুর আহমেদ মিলন, দশম ব্যাচের ফিন্যান্স বিভাগের মোবারক হোসেন (২২), দশম ব্যাচের গণিত বিভাগের আকাশ (২২) এবং ১২তম ব্যাচের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সৌরভ (২১)।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নূর মোহাম্মদ বলেন, এক ব্যক্তিকে অপহরণ করে চাঁদা আদায়ের অভিযোগে দুজন ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে কোন দুই ছাত্র, তাদের নাম-পরিচয় পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সংশ্লিষ্টদের অভিমত, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদাসীনতায় শিক্ষার্থীরা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন। দুর্বৃত্তায়নে জড়িত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হলে এই সংখ্যা কমে আসতো বলেও অভিমত তাদের।
ঢাকা, ১৬ আগস্ট (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমআই
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: