লাইভ প্রতিবেদক : ছাত্র বিক্ষোভের জেরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আটক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের থানায় নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। নর্থসাউথ, ইস্টওয়েস্ট, ব্র্যাক ও আহসানুল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজির ২২ শিক্ষার্থীকে আটকের পর থানায় নিয়ে তাদের মারধর করা হয়। এতে একজনের আঙ্গুলও ভেঙে গেছে বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার ওই শিক্ষার্থীদের পুলিশের ওপর হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে করা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে নিয়ে ৭দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। অাদালত তাদের ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ঢাকার মহানগর হাকিম আবদুল্লাহ আল মাসুদ মঙ্গলবার এই আদেশ দেন।
জানা গেছে, বাড্ডা থানার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জুলহাস মিয়া রিমান্ড আবেদনে বলেন, সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা আফতাবনগর মেইন গেটের রাস্তায় যান চলাচলে বাধা দেয়। লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল দিয়ে রাস্তার গাড়ি ভাঙচুর করে। পুলিশ বাধা দিলে পুলিশের ওপর আক্রমণ করে আসামিরা। এ ঘটনার ইন্ধনদাতা এবং অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।
পুলিশ আদালতকে জানিয়েছে, আসামিরা বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) গাড়ি ভাঙচুর করেছে। তারা বাড্ডা পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন ধরাতে গেলে পুলিশ টিয়ারশেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
অন্যদিকে ভাটারা থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই হাসান মাসুদ রিমান্ড আবেদনে বলেন, আসামিরা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার অ্যাপোলো হাসপাতাল ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় লোহার রড, লোহার পাইপ ও ইট দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে। আসামিরা বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ঘটনাস্থলের আশপাশের দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসার দরজা, জানালা ভাঙচুর করে। পলাতক আসামিরা জঙ্গি গোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য। তাদের গ্রেপ্তারের জন্য আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন।
এদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী এ কে এম মুহিউদ্দিন ফারুক আদালতকে বলেন, পুলিশ নিরপরাধ ছাত্রছাত্রীদের ধরে নিয়ে ভয়াবহ নির্যাতন চালিয়েছে। ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিদওয়ান আহমেদের আইনজীবী কবির হোসেন আদালতকে বলেন, পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে থানায় ফেলে মারধর করেছে। এতে তার হাতের একটি আঙুল ভেঙে গেছে। তৃতীয় পক্ষের যারা ষড়যন্ত্র করেছে তাদের পুলিশ গ্রেপ্তার না করে নিরীহ ছাত্রদের ধরে এনেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এ ছাড়া আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আদালতকে জানান, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রেফতার হওয়া ছাত্রদের পরীক্ষা চলছে। ৯ আগস্ট তাদের পরীক্ষা আছে। জামিন না পেলে তাদের শিক্ষা জীবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই তাদের জামিন প্রয়োজন।
অন্যদিকে গ্রেফতার ছাত্র মাসাদ মরতুজা বিন আহাদ, ফয়েজ আহম্মেদ আদনান এবং আজিজুল হাকিমের আইনজীবীরা আদালতকে জানান, পুলিশ থানায় নিয়ে ওই ছাত্রদের বেধড়ক পিটিয়েছে। তবে পুলিশ আদালতকে প্রতিবেদন দিয়ে দাবি করছে, গ্রেফতার করার সময় ধস্তাধস্তির কারণে তারা সামান্য আহত হন। তাদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
বাড্ডার মামলায় গ্রেপ্তার ১৪ ছাত্র হলেন, রিসালাতুল ফেরদৌস, রেদোয়ান আহমেদ, রাশেদুল ইসলাম, বায়েজিদ, মুশফিকুর রহমান, ইফতেখার আহম্মেদ, রেজা রিফাত আখলাক, এএইচএম খালিদ রেজা, তারিকুল ইসলাম, নূর মোহাম্মাদ, সীমান্ত সরকার, ইকতিদার হোসেন, জাহিদুল হক ও হাসান। আর ভাটারা থানার মামলায় গ্রেপ্তার ছাত্ররা হলেন, আজিজুল করিম, মাসাদ মরতুজা বিন আহাদ, ফয়েজ আহম্মেদ আদনান, সাবের আহম্মেদ, মেহেদী হাসান, শিহাব শাহরিয়ার, সাখাওয়াত হোসেন ও আমিনুল এহসান।
উল্লেখ্য, ২৯ জুলাই রাজধানীতে বাসচপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের পর থেকেই নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে শ্রমিকদের পক্ষে সাফাই গাওয়া ও হেসে হেসে কথা বলায় নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের ওপরও ক্ষিপ্ত হন শিক্ষার্থীর। তাই তারা নৌমন্ত্রীর পদত্যাগসহ নানা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। এরই মাঝে রাজধানীর মিরপুর ও জিগাতলায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় কিছু ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নামধারী কিছু যুবক। এঘটনার পর থেকে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হামলাকারীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন জোরদার করে। এরই ধারাবাহিকতায় পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে। সোমবার আফতাবনগর ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। এসব ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে শতাধিক ছাত্রকে আটক করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এরমধ্যে বাড্ডা ও ভাটারা থানায় করা মামলায় ২২ শিক্ষার্থীকে দুই দিনে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
ঢাকা, ০৮ আগস্ট (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//সিএস
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: