Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | সোমবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৪, ১৬ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

‘রাশেদের পিতার আর্তি: রাজমিস্ত্রির কাজ কইরা সংসার চালাই’

প্রকাশিত: ৮ জুলাই ২০১৮, ০৩:০৭

লাইভ প্রতিবেদক: কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহবায়ক রাশেদের পিতা নরাই বিশ্বাস আকুতি জানিয়ে বলেন, রাজমিস্ত্রির কাজ কইরা সংসার চালাই। আমার ছেলে টিউশনি করে পড়ার খরচ চালায়। আমরা কোন রাজনীতি করিনা। পেটের ধান্ধায় থাকি সারাক্ষণ। অঝোর ধারায় কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমাদের কেউ নাই।

আমার ছেলেডারে কেমনে আনবো জেল থেকে। সবার জন্যে কাজ করলো। এখন হেই জেলে। ‘অনেক কষ্টে আমার পুলাডারে বড় করছি। এহন সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে। চাকরি পাওয়ার লাইগা সে আন্দোলন করতাছে। হের জন্য আমার পুলাডারে পুলিশ হাতকরা পরাইয়া মারতে মারতে থানায় নিয়া গেছে। পরে রিমান্ডে দিছে।’ তার কান্না দেখে আমরাও কানছি।

শনিবার কোটা সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খানের মা সালেহা বেগম অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে এসব কথা বলেন। তিনি অঝোর ধারায় কেঁদেছেন।

ঢাকায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে (ক্র্যাব) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আটককৃত মুহাম্মদ রাশেদ খানের মুক্তি ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার দাবিতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন তারা। এসময় রাশেদের পিতা, মাতা ও স্ত্রী রাবেয়া আলোসহ স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।

সালেহা বেগম বলেন, ‘আমার বাবুটার পড়ালেখার খরচ দিতে পারি না, তাই হে টিউশনি কইরা পড়ালেখা করে। একটা চাকরির লইগা আমার ছেলে ও তার বন্ধু-বান্ধবরা আন্দোলন করছে। হের জন্যে আমার পোলারে পুলিশ মারতে মারতে থানায় নিয়া রিমান্ডে দিছে।

তিনি বলেন, আমাগোরে জামায়াত-শিবির বানাইতাছে। এলাকার কিছু মানুষ আমগো মাইরা ফেলার ভয় দেখাইতেছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী তো সবার মা, তার কাছে ছেলেরা একটা দাবি জানাইছে। এটা তো খারাপ কিছু করে নাই।’ এসব বলতে বলতে সালেহা বেগম কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বার বার তার নিরপরাধ ছেলের কথাই বলেন।

রাশেদ খানের বাবা নরাই বিশ্বাস বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। রাজমিস্ত্রির কাজ কইরা সংসার চালাই। ছেলে-মেয়েদের অনেক কষ্টে পড়ালেখা করাইতেছি। অথচ আমি নাকি জামায়াত-শিবির করি এমন কথা বলা হইতাছে। ঝিনাইদহে ছাত্রলীগের নেতারা আমারে গুম করার ভয় দেখাইতেছে।’

নরাই বিশ্বাস অভিযোগ করে বলেন, গত ৩০ জুন রাশেদকে আটকের আগে ঝিনাইদহে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী তার বাড়িতে গিয়ে হত্যা ও গুম করার ভয়-ভীতি দেখান। তারা বলে, তার ছেলে (রাশেদ) কুলাঙ্গার হয়ে গেছে।

তাকে এ পথ থেকে ফিরিয়ে না আনলে পরিবারের সকাইকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়। এরপর স্থানীয় ছাত্রলীগের এক নেতা ঢাকার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বড় নেতাকে ফোন দিয়ে নরাই বিশ্বাসকে কথা বলতে বলেন। সেই নেতা তার ছেলেকে কোটা আন্দোলন থেকে ফিরিয়ে আনার পরামর্শ দেন। নতুবা তার পরিবারকে গুম করার হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেন।

তিনি আরও বলেন, ‘অনেকে আমগো মাইরা ফেলার হুমকি দিতাছে। বিষয়টি থানায় জানাইলেও পুলিশ হাইসা উড়ায় দিতাছে। উল্টা আমাগো সাবধান হইতে কয়। এসব কারণে পরিবারের সকলে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে।’ দ্রুত তার ছেলেকে নিঃশর্তে মুক্তি দিয়ে তার পরিবারের সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি সরকারের কাছে।

গ্রেফতারকৃত রাশেদ খানের স্ত্রী রাবেয়া আলো বলেন, ‘৩০ জুন দুপুর ১২টায় আমার স্বামী ফোন করে খাবার তৈরি করতে বলে। কিছুক্ষণ পর সে বাসায় ফিরলেও কয়েকজন ডিবি পুলিশের সদস্য বাসার নিচে ঘোরাফেরা করে। বিষয়টি রাশেদ জানার পরে অনেক ভয় পেয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে ১৪ নম্বরে বড় বোনের বাসায় যায়। এর কিছুক্ষণ পর সেখান থেকে তাকে টেনে-হেঁচড়ে বের করে শাহাবাগ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।’

রাবেয়া আলো সংবাদ সম্মেলনে জানান, ‘আমি খবর পেয়ে দৌড়ে এসে দেখি রাস্তায় কয়েকজন ডিবি সদস্য আমার স্বামীকে রক্তাক্ত অবস্থায় টেনে পুলিশের গাড়িতে তুলছে। তারা আমার স্বামীর কাছেও যেতে দেয়নি।

দূর থেকে আমি এমন পরিস্থিতি দেখে কান্না আর আর্তনাদ করতে থাকি। আমার স্বামীকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা জানতে চাইলেও তারা আমাকে বলেননি। এরপর আমি খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারি আমার স্বামীকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’ রাশেদের স্ত্রী বলেন, ‘শাহবাগ থানায় গিয়ে থানার ওসি ও অন্যান্য পুলিশ অফিসারের কাছে আমার স্বামীর খোঁজ জানতে চাইলে কেউ কোনো তথ্য দেয় নাই। তারা আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করে। আমাকে থানা থেকে বের করে দেয়।’

রাশেদের স্ত্রী অভিযোগ করেন, এক পর্যায়ে ওসির রুমে ঢুকে পরিচয় দিলে ওসি রেগে যান। এই মহিলা তার রুমে আসলো কীভাবে বলে আরেক পুলিশকে প্রশ্ন করেন। রাশেদকে আইসিটি আইনে মামলা দেয়া হয়েছে বলে ওসি জানান।

আলো আরও বলেন, ‘আমি পড়ালেখা করি। টিউশনি করে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছি। রাশেদকে থানা থেকে বের করে আনার মতো অর্থ আমাদের কাছে নাই। একটি মানবাধিকার সংস্থা রাশেদকে জামিনের দায়িত্ব নিয়েছে। সেই সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, তারা জানিয়েছেন, পুলিশ তাদের কোনো তথ্য দিচ্ছে না।’ আমরা কোন তথ্য চাইলে কেমন জানি আচরণ করে। মামলার কোন অগ্রগতি।

 

ঢাকা, ০৭ জুলাই (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএসসি


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ