Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শুক্রবার, ৩রা মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

ক্রমেই একা হয়ে যাচ্ছে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতারা!

প্রকাশিত: ৮ জুলাই ২০১৮, ০০:২২

মৃদুল ব্যানার্জি: ক্রমেই একা হয়ে যাচ্ছে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা কর্মীরা। তাদের আন্দোলনকে মনে মনে সমর্থন করলেও এখন কেউ মুখ খুলছেন না। অনেক সেলিব্রেটিরাও এই আন্দোলনের ব্যাপারে আগে প্রকাশ্যে কখা বললেও এখন তারা নিস্কৃয়। কেমন যেন অজানা আতঙ্কে আছেন তারা।

সংশ্লিস্টরা জানিয়েছেন সরকারের অব্যাহত বিরোধীতা ও ছাত্রলীগের মারমুখো আচরনের কারণেই সবাই হাত গুটিয়ে নিচ্ছেন। এমনকি আওয়ামী শিবিরের বুদ্ধিজীবিরাও এখন মুখ বন্ধ করে রেখেছেন। তারা একবারেই চুপসে গেছেন। এই আন্দোলনের পক্ষে থাকা শিক্ষকরাও মুখ ফেরাতে শুরু করেছেন। যদিও তারা আগে লম্বা লম্বা কথা বলতেন। কিন্তু এখন মুখে কুলূপ ও কানে তুলা দিয়েছেন।

এসব বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক আওয়ামী শিবিরের শিক্ষক ও ভিসি শুরুতে বলেছেন এক ধরনের কথা কিন্তু এখন তাদের কন্ঠে ভিন্ন সুর। বলা যেতে পারে কোটা সংস্কার আন্দোলনে গ্রেপ্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের দায় নিবে না কর্তৃপক্ষ।

সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন করে আসছেন, সেই আন্দোলন বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় বলে মনে করছেন তাঁরা। গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ বিভাগে ক্লাস-পরীক্ষা চললেও কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি।

গ্রেপ্তারকৃত শিক্ষকার্থীদের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান ক্যাম্পাসলাইভকে বলেছেন, যারা ভেতরে আছে তাদের দায়িত্ব কেন আমরা নিব। যা হবে আইনি কাঠামোর মধ্যেই হবে।

ভিসি বলেন, আইনি প্রক্রিয়ায় ১৮ বছর বয়স হলে ব্যক্তিকে তার নিজের দায়দায়িত্ব নিতে হয়। সবার জন্যই এই আইন প্রযোজ্য।’ তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের কাঁধে ভর দিয়ে যেন কোনো অশুভ শক্তি তাদের স্বার্থ উদ্ধার করতে না পারে, সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম বিনষ্ট করার কোনো অপপ্রয়াস সহ্য করা হবে না। আমি নিয়মের বাইরে যেতে চাইনা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর মাকসুদ কামাল ক্যাম্পাসলাইভকে বলেছেন, শিক্ষক সমিতির কাজ শিক্ষকদের স্বার্থ দেখা। তা ছাড়া তাঁরা শিক্ষা কার্যক্রম ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিষয়টা দেখেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানে।

ওদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, আওয়ামীপন্থী শিক্ষক সমিতিও ছাত্রদের গ্রেপ্তার, তাঁদের ওপর হামলার বিষয়গুলো এড়িয়ে যাচ্ছেন। প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী ছাত্রদের এ আন্দোলন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় বলে মন্তব্য করেছেন।

বিভিন্ন সূত্রে জানাগেছে এ পর্যন্ত ১৭ জনের গ্রেপ্তারের খবর মিলেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের শীর্ষ নেতা রাশেদ খান, ফারুক হোসেন, তরিকুল, জসিমউদ্দিন, মশিউর, আমানুল্লাহ, মাজহারুল, জাকারিয়া, রমজান ওরফে সুমন ও রবিন এবং অন্যান্য স্থান থেকে আরও ৭ জনের খবর মিলেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে তিনজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, একজন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। তাঁরা হলেন রাশেদ খান, ফারুক হোসেন ও মশিউর। নিখোঁজ ছাত্রের নাম মাহফুজ। অন্যদের পরিচয় এখনো পুলিশ নিশ্চিত করেনি।

জানাগেছে রাশেদ খান তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় গ্রেপ্তার হয়ে পুলিশি হেফাজতে আছেন। অন্যদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে গত ১০ এপ্রিল শাহবাগ থানায় দায়ের হওয়া তিনটি মামলায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বাসভবনে হামলা, পুলিশের বিশেষ শাখার সদস্যের মোটরসাইকেল ভাঙচুর।

ওয়াকিটকি কেড়ে নেওয়ার অভিযোগে ওই মামলাগুলো দায়ের করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা, পুলিশের বিশেষ শাখার একজন সহকারী উপপরিদর্শক ও শাহবাগ থানার পুলিশ। আইন অনুষদ ছাড়া গত বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব বিভাগে ক্লাস ও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। টিএসসিতে আবৃত্তি ও নাটকের কর্মশালার জন্য সদস্য সংগ্রহেও যুক্ত থাকতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের।

কোটা সংস্কারের দাবিতে গঠিত বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ ছাত্রেরই ঢাকায় থাকার কোনো জায়গা নেই। আন্দোলনে যুক্ত হলে হলছাড়া করা হবে, এমন হুমকি দিয়ে ছাত্রদের চুপ করিয়ে রাখা হয়েছে।

জানাগেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের আবাসিক ছাত্র একরামুল হককে হল থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আইন অনুষদের ছাত্ররা বলছিলেন, তাঁরা ফেসবুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন পরিবারের এই পেজ থেকে ক্লাস বর্জনের আহ্বান জানিয়েছিলেন। আইন অনুষদের ঠিক উল্টো পাশে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্রদের ওপর হামলার প্রতিবাদে তাঁরা এই কর্মসূচি নিয়েছিলেন।

দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষকরা এখন ধীরে ধীরে তাদের সমর্থন লুকিয়ে রাখার পথ খুঁজছেন। তাদের বক্তব্য আমরা সমর্থন দিলে সরকারী দলের নেতা কর্মীরা আমেরকে নানান ভাবে শাসাচ্ছে। তাই নিরিবিলি থাকার ন্যেই এসব করছি।

শারীরিক অবস্থার উন্নতি নেই আহতদের:

এদিকে গত শনিবার ছাত্রলীগের হামলায় মারাত্মক আহত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র নুরুল হকের শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি নেই। সরকারী হাসতালে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে এখন একটি বেসরকারি হাসপাতালে নুরুল হক চিকিৎসাধীন আছেন। নুরুল হকের ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, মারধরের কারণে নুরুলের মাংসপেশির ৪৮ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সংক্রমণও দেখা দিয়েছে। প্রতি দুই ঘণ্টা অন্তর নুরুল হকের জ্বর আসছে, তিনি নড়াচড়া করতে পারছেন না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নুরুল হকের খোঁজ না নিলেও ইংরেজি বিভাগ থেকে তাঁর খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে ভালো নেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তরিকুল ইসলামও। সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক তরিকুল ইসলামের ডান পা পুরোপুরি ভেঙে গেছে। অস্ত্রোপচার না করলে ওই পা ঠিক হবে না বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। গত সোমবার হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে তরিকুলের পা ভেঙে দেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এদিয়ে কোন মামলা বা অভিযোগ নেয়নি থানা কর্তৃপক্ষ।


খুলনা নারায়ণগঞ্জের মানববন্ধনে আপত্তি:

খুলনা নারায়ণগঞ্জের মানববন্ধনে আপত্তি জানিয়েছে ছাত্রলীগ। কোটা সংস্কার আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধন করতে দেয়নি পুলিশ। নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনের প্রস্তুতির সময় পুলিশ ব্যানার কেড়ে নেয়।

তারা মাইকও লাগাতে দেয়নি। এ সময় নেতাদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। বিকেলের আগে থেকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ প্রেসক্লাব এলাকা ঘিরে রাখে। পরে নেতারা নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে তাৎক্ষণিক প্রেস ব্রিফিং করেন।

এদিকে গণসংহতি আন্দোলন জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সুজনের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, জেলা সিপিবির সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, বাসদের জেলা সমন্বয়ক নিখিল দাস প্রমুখ। অংশগ্রহণকারীরা অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ও গ্রেপ্তারকৃত শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবি জানান।


খুলনায় দুপুর ১২টার দিকে পিকচার প্যালেস এলাকায় প্রগতিশীল ছাত্রজোট খুলনা জেলা শাখার সমাবেশ ও মিছিলে পুলিশ লাঠিপেটা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে কমপক্ষে ছয়জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র বলেছে, ঘটনাস্থলে আয়োজকেরা পৌঁছানোর আগেই পুলিশ পৌঁছায়। রাস্তায় দাঁড়াতে বিধিনিষেধ আছে জানিয়ে তারা সমাবেশকারীদের ব্যানার ও হ্যান্ডমাইক কেড়ে নেয়। এরপরও সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা বক্তব্য দিতে চাইলে পুলিশ লাঠিপেটা করে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।


এসব বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা সদর থানার ওসি হুমায়ুন কবির বলেন, সমাবেশকারীদের ওপর কোনো লাঠিপেটা করা হয়নি। তাঁরা সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে জনসাধারণের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করছিলেন। এ কারণে তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।


ঢাকা, ০৭ জুলাই (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএসসি


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ