জাবি লাইভ : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রলীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। ওই দিন ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা হতে পারে। তবে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের দায়ে আজীবন বহিস্কৃত ছাত্রদল সভাপতির সাবেক রুমমেট অনুপ্রবেশকারী ছাত্রলীগ সভাপতি প্রার্থী হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আরিফুল হক নামের ওই প্রার্থীর বিরুদ্ধে ঢাকা আরিচা মহাসড়কে গাড়ি আটকিয়ে চাঁদাবাজী, বান্ধবী নিয়ে ক্যান্টিনে ফাও খাওয়া, ছাত্রদলের প্রেসক্রিপশনে ছাত্রলীগের ভীতরে সংষর্ঘ সৃষ্টিসহ অন্যান্য এজেন্ডা বাস্তবায়নের মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী বর্তমানে তার ছাত্রত্বও নেই।
জানা যায়, আরিফুল ইসলাম মূলত ছাত্রদলের সমর্থক। সে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের বর্তমান সভাপতি সোহেল রানার রাজনৈতিক ছোট ভাই। ২০১০ সালে ৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়। চার তলার ছাদ থেকে ফেলে দেয়া, রুমে আটকে কুপিয়ে জখম করার মতো নৃশংস ওই ঘটনার পর তৎকালীন সরকার ও ছাত্রলীগ চরম ইমেজ সঙ্কটে পড়ে। ওই সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রদলের এজেন্ট হিসেবে আরিফ মূখ্য ভুমিকা পালন করে। সংঘর্ষের পরপরই সে বিশ্ববিদ্যালয় সংলঘ্ন ইসলামনগর এলাকায় ছাত্রদল সভাপতির ভাড়া বাসায় আশ্রয় নেয়। সেখানে একই কক্ষে দু’জন প্রায় ১ বছর অবস্থান করে।
এবিষয়ে জাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুর রহমান জনি বলেন, না সে অনুপ্রবেশকারী নয়। সে তো সহ-সভাপতি ছিলো। আর আমরা সংগঠনে কাউকে নেতা নির্বাচিত করার সময় যাচাই বাছাই করেই করি।
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনা তদন্ত স্বাপেক্ষে ৩১ আগষ্ট ২০১০ সালে ১৮ ছাত্রকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কারের তালিকায় আরিফ ছিল প্রথম। তখন ছাত্রত্ব ঠেকাতে আরিফ ভোল পাল্টে ছাত্রলীগের বিদ্রোহী (তৎকালীন ভিসিলীগ হিসেবে পরিচিত) গ্রুপে যোগ দেয়। পরে উচ্চ আদালত থেকে রিট আদেশের মাধ্যমে ছাত্রত্ব ফিরে পায় সে।
আরিফের বিরুদ্ধে ক্যান্টিনে ফাও খাওয়া ওপেন সিক্রেট। ক্যান্টিন কর্মচারিদের সাথে কথা বললে নাম প্রকাশ না করে একাধিক কর্মচারী জানান, আরিফসহ তার ৫/৬ জন রাজনৈতিক ছোটভাই নিয়মিত ফাও খায়। আরিফের বিরুদ্ধে নিজ বান্ধবীকেও ক্যান্টিনে ফাও খাওয়ানোর অভিযোগ রয়েছে। বান্ধবীকে ফাও খাওয়ানো নিয়ে ইতিপূর্বে গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে।
আরিফের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় সংলঘ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বাস আটকে চাঁদাবাজির অভিযোগ বেশ পুরনো। সর্বশেষ প্রান্তিক গেটে সে জুনিয়রদের দিয়ে ‘ঠিকানা পরিবহন’ এর একটি গাড়ি আটকে দেয়। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা উপস্থিত হলে তারা সটকে পড়ে।
তবে যাবার সময় আনসার সদস্যদের সামনে ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি শুভাশিষ কুন্ডু টনির (প্রত্নতত্ব, চতুর্থ বর্ষ) নাম বলে যায়। পরবর্তীতে আনসার সদস্যরা টনিকে দেখে আরিফের রাজনৈতিক ছোটভাইদের মিথ্যাচার ধরে ফেলে।
এ বিষয়ে প্রান্তিক গেটের এক দোকানির কাছে জানতে চাইলে সে নাম প্রকাশ না করে, ঘটনা সত্য বলে জানান।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী আরিফের ছাত্রত্ব নেই বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। নিয়ম অনুযায়ী এক বছরের স্নাতকোত্তর সর্বোচ্চ দুই বছরের মধ্যে শেষ করতে হয়। এর বাইরে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিশেষ অনুমতি দরকার হয়। আরিফ ২০১৪ সালে স্নাতকোত্তর পরীক্ষা সম্পন্ন করে মৌখিক পরীক্ষা বাকি রাখে।
নিয়ম অনুযায়ী তার সর্বশেষ ২০১৫ সালে মৌখিক পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু, ২০১৬ সাল গড়িয়ে গেলেও তার এখনও মৌখিক পরীক্ষা দেয়নি। ফলে বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নন। এখন সে বিশেষ অনুমতি নিতে চাইলেও তা নিয়মিত ছাত্রও হিসেবে গন্য হবে না।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, শুধুমাত্র ২০১০-১১ ও ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষ ( ৪০ ও ৪১ তম ব্যাচ ) থেকে পরবর্তী ব্যাচগুলোর শিক্ষার্থীরা নিয়মিত এবং বৈধ হিসেবে অধ্যায়নরত।
ছাত্রলীগের অনুপ্রবেশকারী অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে আরিফুল হক ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ‘ছাত্রদলের যে সভাপতির কথা বলা হচ্ছে তিনি ২০১০ সালে ছাত্রলীগের কর্মী ছিল। আর আমরা একই হলে থাকতাম এবং আমাদের এক ব্যাচ সিনিয়র সে। তার সঙ্গে আমার তেমন কোন সম্পর্ক ছিল না। পরবর্তীতে সে ছাত্রদলে যোগ দেয়। এতে তো কোন অনুপ্রবেশের কিছু দেখিনা।’
চাঁদাবাজি ও ফাও খাওয়ার ব্যাপারে তিনি জানান, কেউ যদি আমার ব্যাপারে এমন কোন অভিযোগ প্রমাণ করতে পারে, তাহলে আমি যে কোন শাস্তি মাথা পেতে নিতে রাজি।
এদিকে কমিটিতে পদ পেতে সম্ভাব্য প্রার্থীরা দৌঁড়ঝাপ চালিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে রয়েছেন বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি শুভাশীষ কুণ্ডু টনি, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মিঠুন কুমার কুণ্ড, সাংগঠনিক সম্পাদক মোর্শেদুর রহমান আকন্দ, সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক মিনহাজুল আবেদীন, আইন বিষয়ক সম্পাদক আবু সুফিয়ান চঞ্চল, উপ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মো. জুয়েল রানা, আ ফ ম কামালউদ্দিন হলের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হাসান ভূঁইয়া নোলক ও কর্মী আব্দুল্লা আল মামুন।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মাহমুদুর রহমান জনিকে সভাপতি রাজিব আহমেদ রাসেলকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৫ সদস্যের কমিটি গঠন ঘোষণা করে তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। পরে তারা ১৬১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন ও হল ইউনিটগুলোর কমিটিও ঘোষণা করেন।
জাবি, ০১ ডিসেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)// এআই
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: