Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | সোমবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৪, ১৬ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com
পুলিশের গুলিতে এক নারী নিহত

ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে যেভাবে ছিনিয়ে নিল আসামি

প্রকাশিত: ২১ নভেম্বার ২০২২, ২০:৫১

ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে যেভাবে ছিনিয়ে নিল আসামি

চট্টগ্রাম লাইভ: দেশে এসব কি হচ্ছে! এমনটি আগে ঘটলেও এখন এই সংখ্যা বাড়ছে। ঢাকায় ২ আসমী পালিয়ে যাওয়ার পর পরেই চট্রামের ঘটনাটি প্রশাসনকে বিব্রত করেছে। পুলিশ ভাবছে এখানে কি কোন ষড়যন্ত্র হচ্ছে! নাকি নাশকতার কোন আবাস দিচ্ছে। এসব হিসাব-নিকাশ করছেন পুলিশ ও গোয়েন্দারা। চট্টগ্রামে পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা করে মাদক মামলার দুই আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছেন তাঁর সহযোগীরা। এ সময় গুলিতে নাজমা আক্তার নামে এক নারী নিহত হয়েছেন।

সংশ্লিস্টরা জানান, শনিবার রাতে নগরীর কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ২১৬ জনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা এবং আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে। স্থানীয়রা জানান, নগরের চান্দগাঁও থানার মৌলভীবাজার ৯ নম্বর রেল বিট এলাকার বাসিন্দা ইয়াছিন আরাফাত। সবার কাছে তিনি তৃতীয় লিঙ্গের বিজলী রানী নামে পরিচিত। এলাকায় তৃতীয় লিঙ্গের লোকদের নিয়ে বাহিনী গড়ে চাঁদাবাজি ও মাদক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করেন বিজলী।

জানা যায় মূলত তাঁকে সামনে রেখে অপরাধ জগতের কলকাঠি নাড়েন তাঁর ভাই মোহাম্মদ হানিফ। তাঁদের বোন নাজমা আক্তার ও বাবা লোকমান হোসেনের বিরুদ্ধেও মাদক কারবারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। দুই বছর আগে হানিফকে গ্রেপ্তার করলে র‌্যাবের ওপর হামলা চালিয়ে তাঁকে ছিনিয়ে নিয়েছিলো সহযোগীরা। এর পর গত বছর অভিযানে গিয়ে একই মাদক কারবারিদের হামলার শিকার হয় পুলিশ। বিষয়টি জানা থাকার পরেও পুলিশের তেমন কোন প্রস্তুতি ছিলনা বলে অনেকেই অভিযোগ করেছেন।

আরো জানাগেছে এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার রাতে মাদক কেনাবেচার খবরে পুলিশ রেল বিট এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫ হাজার ইয়াবাসহ হানিফ ও তাঁর সহযোগী মো. দেলোয়ারকে গ্রেপ্তার করে। খবর পেয়ে বিজলীর নেতৃত্বে তাঁর বাহিনীর সদস্যরা পুলিশের পিছু নেয় এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। হামলা ঠেকাতে ব্যস্ততার ফাঁকে হ্যান্ডকাফসহ পালিয়ে যান হানিফ ও দেলোয়ার। কিন্তু তাতেও থামেননি বিজলীর লোকজন। পুলিশের পিছু নিয়ে কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়ি ঘেরাওয়ের পর হামলা করে।

ওই চক্রটি একই সময় পাশের আরাকান সড়ক অবরোধ করে তাঁরা। এ সময় ফাঁড়িতে ১৩ পুলিশ সদস্য ছিলেন। তাঁরা ফাঁকা গুলি চালিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করতে থাকেন। খবর পেয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ফোর্স গিয়ে হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় গুলিতে আহত হন হানিফের বোন নাজমা আক্তার। তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে রাত ১২টার দিকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তিনি কোমরে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ময়নাতদন্তের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকরা।

চট্রগ্রামের কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শরীফ রোকনুজ্জামান সমকালকে জানান, মাদক কেনাবেচার খবরে অভিযান চালানো হয়। ৯ নম্বর রেল বিট এলাকা থেকে ইয়াবাসহ হানিফ ও দেলোয়ারকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের ফাঁড়িতে আনার পথে বাধা দেন তৃতীয় লিঙ্গের লোকজন। সাত পুলিশ সদস্য আপ্রাণ চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু ফাঁড়িতে ঢোকার মুখে হামলা চালিয়ে আসামিদের ছিনিয়ে নেন তাঁরা। এর কিছুক্ষণ পর দলবল নিয়ে এসে ফাঁড়িতে হামলা চালানো হয়।

ওই চক্রটি ইটপাটকেল নিক্ষেপের পাশাপাশি গুলিও চালান তাঁরা। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও ফাঁকা গুলি চালায় বলে জানান তিনি। স্থানীয়দের অভিযোগ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ৯ নম্বর রেল বিট এলাকার বস্তি নিয়ন্ত্রণ করে বিজলী রানীর পরিবার। তাঁদের বাড়ি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ থানার আন্দুয়া গ্রামে। কয়েক দশক ধরে তাঁরা এখানে থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে তৃতীয় লিঙ্গের ভাই বিজলীকে সামনে রেখে মাদকের সাম্রাজ্য গড়েছেন মোহাম্মদ হানিফ ও তাঁর পরিবার।

স্থানীয় বাজার ও ভাসমান ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করেন তাঁরা। কেউ না দিতে চাইলে তৃতীয় লিঙ্গের লোকজন নিয়ে হামলা করা হয়। ফলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ তাঁদের ঘাঁটাতে চান না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক যুবক বলেন, 'এই এলাকার মানুষ বিজলীর পরিবারের কাছে জিম্মি।

আরো অভিযোগ করে সংশ্লিস্টরা জানান, তাদের ৩০-৪০ হিজড়ার দল রয়েছে। চক্রটি এদের দিয়েই মাদক ও চাঁদাবাজি করেন বিজলী।' তিনি দাবি করেন, বিজলী তৃতীয় লিঙ্গের কেউ নন। পরিবারের মাদক ব্যবসার সুরক্ষা দিতেই তিনি হিজড়া সেজে আছেন। মোহরা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজী নুরুল আমিন জানান, 'হিজড়া হওয়ায় সবাই তাঁদের কাছ থেকে দূরে দূরে থাকেন। হানিফ ও তাঁর পরিবারের মাদক কারবারের বিষয়ে বহুবার পুলিশকে জানানো হয়েছে। মাঝেমধ্যে অভিযান হয়। যাদের গ্রেপ্তার করে। আবার ছাড়া পেয়ে আগের কাজেই জড়িয়ে পড়ে।

পুলিশ জানায়, আসামি ছিনতাই, সরকারি কাজে বাধা, গুলিতে মৃত্যু ও মাদক উদ্ধারের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। শনিবার রাতে কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শরীফ রোকনুজ্জামান বাদী হয়ে চান্দগাঁও থানায় মামলা দুটি করেন। একটি মামলায় ১৪ জনের নাম ও অজ্ঞাত ২১০ জনকে আসামি করা হয়। আরেক মাদকের মামলায় ছিনিয়ে নেওয়া আসামি হানিফ ও দেলোয়ারকে আসামি করা হয়। এ ঘটনায় তৃতীয় লিঙ্গের তিনজনসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

তবে এখনও ছিনিয়ে নেওয়া আসামিদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। চান্দগাঁও থানার ওসি মঈনুর রহমান জানান, ঘটনার পর থেকেই অভিযান চলছে। ফাঁড়িতে হামলার ঘটনায় ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পালিয়ে যাওয়া দু'জনও শিগগিরই ধরা পড়বে। আমাদের বেশ কয়েকটি টিম এসব নিয়ে কাজ করছে। তাদের ব্যাপারে তথ্য তালাশ চলছে। কোন ছাড় দেয়া হবে না।

ঢাকা, ২১ নভেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএল


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ