Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

ইশরাকের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় ২ যুবলীগকর্মীও আসামি!

প্রকাশিত: ৮ নভেম্বার ২০২২, ০৬:৪৮

ইশরাকের বিরুদ্ধে করা মামলায় ২ যুবলীগকর্মীও আসামি!

বরিশাল লাইভ: এবার ঘটে গেল বিরল ঘটনা। নিজেদের মামলায় নিজেরাই হলেন আসামী। এনিয়ে এলাকায় নানান আলোচনা ও সমালোচনা চলছে। পেট্রল বোমা নিক্ষেপ, আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুর ও যুবলীগের ছয় নেতাকর্মীকে মারধরের অভিযোগে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনসহ ১৩১ জনের বিরুদ্ধে বরিশালের গৌরনদী থানায় মামলা হয়েছে। ওই মামলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে স্থানীয় যুবলীগের দুই কর্মীকেও আসামি করা হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ৫ নভেম্বর সকালে বিএনপির গণসমাবেশে যোগ দিতে ঢাকা থেকে গাড়িবহর নিয়ে বরিশালে আসছিলেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন।

তার গাড়িবহর গৌরনদীর মাহিলাড়া বাজার সংলগ্ন এলাকা অতিক্রমকালে আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে নানা স্লোগান দেওয়া হয়। বিষয়টি নিষেধ করায় বহরের গাড়ি থেকে নেমে রড ও লাঠিসোটা নিয়ে ইশরাক হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীরা যুবলীগ নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালান। একপর্যায়ে যুবলীগ নেতাকর্মীদেরকে লক্ষ্য করে পেট্রল বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এছাড়া আটটি মোটরসাইকেল ও মাহিলাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। হামলায় ইউনিয়ন যুবলীগের ছয় নেতাকর্মী আহত হন।

জানাগেছে তাদের মধ্যে গুরুতর আহত মাহিলাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিলাস কবিরাজকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় ওই দিন সন্ধ্যায় রাসেল রাঢ়ি নামের এক যুবক বাদী হয়ে গৌরনদী থানায় মামলা করেন। মামলায় ৭১ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা হিসেবে আরও ৫০/৬০ জন ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। মামলার এজাহারে রাসেল নিজেকে একজন পরিবহন শ্রমিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

হামলার সময় বাদী রাসেল রাঢ়ির মোটরসাইকেল ভাঙচুরের কথাও মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে স্থানীয়রা জানান, রাসেল গৌরনদী উপজেলার মাহিলারা ইউনিয়ন যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তাকে কয়েকমাস আগে যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া তিনি আগৈলঝাড়া উপজেলার ইউনিয়ন ভূমি অফিসের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। একটি মামলায় জেল খাটায় সম্প্রতি চাকরি থেকেও তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। রাসেলের মামলার এজাহারে ২১ নম্বরে ফারুক সিকদার ও ২২ নম্বরে সজিব চোকদারের নাম রয়েছে।

তারা দুজনই যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছেন। এছাড়া তাদের দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতেও অংশ নিতে দেখা গেছে। যুবলীগকর্মী ফারুক সিকদার ও সজিব চোকদার সোমবার (৭ নভেম্বর) দুপুরে অভিযোগ করে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে তারা যুক্ত আছি। মিছিল মিটিংসহ দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছি। ৪ নভেম্বর রাতেও মাহিলাড়া বাসস্ট্যান্ডে বিএনপির জ্বালাও পোড়াও রাজনীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিলেও অংশ নিয়েছি।’

তারা আরও বলেন, ‘শনিবার সকালে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন তার গাড়িবহর থামিয়ে গৌরনদীর মাহিলাড়া বাসস্ট্যান্ডে যুবলীগের নেতাকর্মীদের পিটিয়ে আহত ও অফিস ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় শনিবার সন্ধ্যায় মামলা করেন মাহিলাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি রাসেল রাঢ়ি। পরবর্তীতে জানতে পারি ওই মামলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে আমাদেরও আসামি করা হয়েছে।’ সিকদার-সজিব অভিযোগ করে বলেন, ‘মামলার বাদী রাসেল রাঢ়ির সঙ্গে আমাদের ব্যক্তিগত বিরোধ আছে।

ওই বিরোধকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় আমাদেরও আসামি করা হয়েছে। হয়রানির জন্যই আমাদের নাম দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানাই।’ গৌরনদীর মাহিলাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সিকদার মহসিন সেন্টু জাগো নিউজকে বলেন, ফারুক সিকদার ও সজিব চোকদার দুজনই যুবলীগের কর্মী। তারা দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন। বিএনপির সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্কের কথা কখনো শোনা যায়নি। এরপরও বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলায় ওই দুই জন যুবলীগকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় সমালোচনা শুরু হয়েছে। এটা সত্যিই অবাক করার মতো ঘটনা। তবে মামলার বাদী রাসেল রাঢ়ি বলেন, ‘ফারুক সিকদার ও সজিব চোকদার দুজনই বিএনপি নেতাদের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। এছাড়া সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের আসামি করা হয়েছে।’ সরকারি চাকরি করে রাজনৈতিক মামলার বাদী হতে পারেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার।

প্রয়োজনে রাজনীতির কারণে চাকরি ছেড়ে দিতে রাজি আছি।’ গৌরনদী উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ও মামলার আরেক আসামি মো. মনির হোসেন আকন বলেন, ‘বরিশালে গণসমাবেশে আসার পথে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের গাড়িবহরে হামলা করেন মহিলাড়ার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এ সময় কয়েকটি গাড়িতে হামলা ও ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। এতে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের ৯ নেতাকর্মী আহত হন।

এরপর সন্ধ্যায় উল্টো বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। ওই মামলায় দুজন যুবলীগ কর্মীকেও আসামি করা হয়েছে বলে শুনেছি। এতেই বোঝা যায় ঘটনা, কতটা সত্য। শুধু মাত্র হয়রানির জন্য মনগড়া ঘটনা সাজিয়ে মামলা করা হয়েছে। আমরা নিন্দা জানাচ্ছি। হয়রানিমূলক এ মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।’এ বিষয়ে গৌরনদী মডেল থানার ওসি মো. আফজাল হোসেন বলেন, রাসেল রাঢ়ি নামে একজন পরিবহন শ্রমিক বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলার এজাহারে বাদী তার পরিচয়ে পরিবহন শ্রমিক লিখেছেন। এছাড়া মামলা হওয়া মানে তো, কেউ আপরাধ করে ফেলেছে তা নয়। ঘটনা তদন্ত চলছে। ঘটনার সময় কারা ছিলেন তা তদন্ত রিপোর্ট পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এখন কেবল অপেক্ষার পালা।

ইশরাক হোসেন বলেন, বরিশালে গণসমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য রওনা দিয়েছিলাম। পথে মাহিলাড়া বাজার এলাকায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা অর্তকিত আমার গাড়িবহরে হামলা করে। হামলাকারীরা বহরের অন্তত আটটি গাড়ি ভাঙচুর করেছে। এতে আমাদের ১১-১২ জন নেতাকর্মী আহত হন। হামলার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইশরাক বলেন, আমরা যাতে সমাবেশে যেতে না পারি সেজন্যই এ হামলা হয়েছে। কিন্তু কোনো কিছুই আমাদের আটকে রাখতে পারেনি।

ঢাকা, ০৭ নভেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএল


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ