Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শুক্রবার, ৩রা মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com
এনটিআরসিএ’তে আতঙ্ক

১৭ বছরে গাড়িচালকের ৫০ কোটি টাকার সম্পদ

প্রকাশিত: ২১ অক্টোবার ২০২২, ০৭:১৩

গাড়িচালক জিয়াউর রহমান

লাইভ প্রতিবেদক: একজন গাড়িচালক হলেও আলিশান জীবন তার। চলা ফেরার ভঙ্গিমায় মনে হবে সে কোনো বড় অফিসের কর্মকর্তা। বলছি বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) গাড়িচালক মো. জিয়াউর রহমানের কথা। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিয়োগের সামগ্রিক কার্যকলাপ পরিচালনা করে এনটিআরসিএ। নানা অনিয়মের বেড়াজালে আটকে থাকা এই প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে ক্ষোভের সেবাপ্রত্যাশীদের শেষ নেই। মূলত পরীক্ষার্থীদের নম্বর বাড়িয়ে দেয়া ও এমপিওভুক্তির সুপারিশ করা এসব করেই চলছে এই প্রতিষ্ঠানটি। আর এভাবেই অন্তত ৫০ কোটি টাকা আয় করেন গাড়িচালক জিয়াউর রহমান। হয়ে যান কোটিপতি। গতকাল তাকে নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর এনটিআরসি’তে অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসি) এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০ হাজার ৬৬৮ জন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে। আর বর্তমানে চলমান আছে প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষক নিয়োগের কাজ। এসব শিক্ষকের নিয়োগের আগে পাড়ি দিতে হয় লম্বা পথ। মূলত এনটিআরসিএ কর্তৃক সনদের জন্য সময় লেগে যায় মাসের পর মাস।

আবার আবেদনের পরও গণহারে ফাইল রিজেক্ট হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। সর্বশেষ এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে বগুড়া জেলার একটি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পাওয়া একজন শিক্ষক বলেন, আমাদের কাগজ সব ঠিক ছিল। এরপরও আমাদের এনটিআরসিএ একাধিক সময় ঘুরানো হয়। আমাদের কাছে দুইশ’ টাকা থেকে শুরু করে কয়েক হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়। আমরা যখন এনটিআরসিএ’তে কাজের জন্য যেতাম তখন শুনতাম দুই লাখ টাকা হলে সনদ পাইয়ে দেয়া হবে। এরপর আমরা না গেলেও অনেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। এমনকি তাদের সনদ আমাদেরও আগে হয়ে যায়। এনটিআরসিএ’তে তাদের মনোনীত দালাল থাকে তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। সনদ পাইয়ে দেয় এমন দুই- তিনজনের নাম শুনতাম। এরমধ্যে জিয়াউরের নামও ছিল। তখন আমাদের কাছে জিয়াউর রহমানকে উচ্চপদস্থ কর্মচারী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হতো। আবার জানা যায়, এই গাড়িচালক এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাইয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করে দিতেন। যার জন্য প্রার্থীদের গুণতে হতো চার থেকে ছয় লাখ টাকা।

এনটিআরসিএ থেকে নিয়োগ প্রাপ্তির জন্য রীতিমতো আন্দোলন করতে হয়ছে প্রত্যাশীদের। ১৫তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ও নিয়োগ আন্দোলনের শীর্ষস্থানীয় এক নেতা বলেন, আমাদের আন্দোলন যখন তুঙ্গে। প্রায়শই মানবন্ধন করছিলাম, স্মারকলিপি দিচ্ছিলাম প্রতিষ্ঠানটিতে। এ সময় আমাদের সঙ্গে রফিক নামে একজন দেখা করতে চান। তিনি সবসময় হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করেন। তখন আমাদের আবেদন গণহারে বাতিল করছিল এনটিআরসিএ। তিনি আমাদের সঙ্গে একটি চায়ের দোকানে দেখা করেন। এরপর সনদের জন্য দেন-দরবার করেন। তিনি বলেন, এনটিআরসিএ’তে আমাদের লোক আছে সনদের জন্য তিন লাখ করে টাকা লাগবে। এরপর তিনি যাওয়ার সময় দুই লাখে করে দিতে রাজি হন। তিনি আরও বলেন, আমার একজন পরিচিত শিক্ষক তিনি টাকা দিয়ে সনদ নিয়েছেন। তার আবেদনে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির স্বাক্ষর ছিল না। এরপর সেই শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

সম্প্রতি গতকাল দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকায় ‘এক ড্রাইভারের ৫০ কোটি’- শীর্ষক সংবাদ প্রকাশিত হয়। যাতে গাড়িচালক মো. জিয়াউর রহমানের নানা অবৈধ সম্পদের উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয় তিনি গত ১৭ বছরে প্রায় ৫০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। আর এই দুর্নীতি চক্রের হোতা সিস্টেম এনালিস্ট ওয়াসি উদ্দিন নাসির পরিবারসহ কানাডায় অবস্থান করছেন। বুধবার এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকেই এনটিআরসিএ কার্যালয়ে কর্মকর্তাদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করে। আর অভিযুক্ত গাড়িচালক মো. জিয়াউর রহমান গতকাল অফিসে অনুপস্থিত ছিলেন।

জিয়াউর রহমান মূলত মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মচারীদের মাধ্যমে নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন এমন প্রার্থী জোগাড় করতেন। তার এই কাজে সহযোগিতা করতেন মাউশির সাবেক কর্মচারী নেতা বদিউজ্জামান, উচ্চমান সহকারী নজমুল হোসেন ও একটি প্রকল্পের গাড়িচালক মো. নজরুল ইসলাম। তবে এনটিআরসিএ’র সিস্টেম অ্যানালিস্ট রাসেল কানাডায় চলে গেলে তাদের এই সনদবাণিজ্যে ভাটা পড়ে।

বুধবার এনটিআরসিএ সনদে তথ্য সংশোধনের জন্য ফেনী থেকে ঢাকায় এসেছিলেন রাকিবুল হাসান। তিনি বলেন, আমার ফাইল অভ্যর্থনায় জমা দেয়ার পরই গ্রহণ করেছে। কিন্তু এর আগে একবার এসেছিলাম তখন ফাইল জমা নিতেই গড়িমশি করেছে অনেক সময়। এরপর দালালের মাধ্যমে পাঁচশ’ টাকা দিয়ে সেই ফাইল জমা দিতে হয়েছে।

আবার এখানের সেবাপ্রত্যাশী আরেক শিক্ষক বলেন, যখনই এখানে কাজে আসতাম সাথে সাথেই দালালদের উৎপাত লক্ষ করা যেত। কিন্তু আজ তাদের খুঁজে পাচ্ছি না। আমি সবুজ নামে একজনের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। ফোন দিয়েছিলাম তিনি প্রথমে রিসিভ করলেন না। এরপর থেকে তার ফোন বন্ধ।

গাড়িচালক মো. জিয়াউর রহমানের বিষয়ে একজন কর্মকর্তা বলেন, তিনি দীর্ঘদিন চেয়ারম্যান স্যারদের গাড়িচালক ছিলেন। যার ফলে সহজেই অন্যান্য স্যারদের সঙ্গে মিশতে পারতেন। আর স্বাভাবিকভাবেই স্যারদের বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা করতেন। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি বিভিন্ন সুবিধা প্রত্যাশীদের কাছে নিজেকে জাহির করতেন। কখনো তিনি লোক ঠিক করতেন আবার অনেক সময় অন্যরা ঠিক করে তার সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। তবে ইদানীং সময়ে তার প্রভাব কিছুটা কম। করোনার আগের সময়টায় তিনি অনেককেই সুবিধা পাইয়ে দেন।

গাড়িচালক মো. জিয়াউর রহমানের বিষয়ে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান মো. এনামুল কাদের খান বলেন, এই ঘটনার তদন্ত করা হবে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এখনো কোনো সিদ্ধান্তে আমরা পৌছাইনি। তবে সত্যিটা উদঘাটন যা যা প্রয়োজন তাই করা হবে।

ঢাকা, ২০ অক্টোবর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমএ


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ