Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শুক্রবার, ১৭ই মে ২০২৪, ৩রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com
চলন্ত বাসে যৌন হয়রানি

যেভাবে শরীরের ওপর হামলে পড়ে হেলপার

প্রকাশিত: ২৯ জুলাই ২০২২, ২২:৩৫

 চলন্ত বাসে যৌন হয়রানি

লাইভ প্রতিবেদক: চলন্ত বাস। যাত্রী শূণ্য। ঠিক আর সেই ছাত্রীর কানে হেডফোন। তন্দ্রায় মগ্ন সেই তরুণী। এই সুযোগে ঘটে সেই দু:খজনক ঘটনা। জানাগেছে ধানমন্ডি থেকে আজিমপুরের বাসার উদ্দেশে বিকাশ পরিবহনের বাসে ওঠেন এক ছাত্রী। রাত তখন পৌনে ৯টা। অনেক যাত্রী থাকা বাসের মাঝবরাবর সিটে বসেন তিনি। কোলাহল এড়াতে কানে হেডফোন, মোবাইলে ছাড়েন গান। দিনের ক্লান্তির রেশ শরীরে। যাত্রীরা সবাই যে যার মতো নেমে গেছে। একাই বাসে ঝিমাচ্ছেন ওই ছাত্রী। হঠাৎ টের পাননি কারও স্পর্শ। বাস চলন্ত। কারো অপরিচিত স্পর্শ যেন তন্দ্রা ভেঙ্গে যায়। দুচোখ খুলে ওই ছাত্রী। দেখতে পান তাকে ঝাপটে ধরে আছে বাসের হেলপার।

কোন কথা বার্তা ছাড়াই হুঁশ ফিরতেই চোখ মেলে পাশের সিটে দেখেন বাসচালকের হেলপারকে। যার একটি হাত নিজের হাঁটুর ওপর। মেরুদণ্ড দিয়ে ততক্ষণে হিম স্রোত বইছে! আরেকটু চোখ বুলিয়ে ভয় পেয়ে যান, পুরো বাস খালি। দরজা-জানালা ও লাইট বন্ধ। কিছু বলার আগেই হেলপার শরীরের ওপর চড়াও হয়। নানান স্থানে স্পর্শ করতে থাকে ওই মানুষ নামের হায়ানা।

ঠিক তখনই চিৎকার করে ছাত্রীটি চালককে বাস থামাতে বললেও কর্ণপাত করেনি। উল্টো গতি বাড়ায়। হেলপার হাত ও মুখ চেপে ধরে আওয়াজ স্তব্ধ করতে চায়। নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টায় চলতে থাকে ধস্তাধস্তি। একপর্যায়ে লাথি মেরে হেলপারকে সরিয়ে দিয়ে দরজা খুলে লাফ দেন ওই ছাত্রী।

এই ন্যক্কারজনক ঘটনাটি ঘটেছে গত রোববার রাতে। সেদিনের সেই ঘটনা মনে হলেই শিউরে উঠছেন ছাত্রীটি। তিনি পড়ালেখার পাশাপাশি ধানমন্ডিতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে খণ্ডকালীন চাকরি করেন। সেখান থেকে ফেরার পথেই দুঃসহ্য ঘটনার মুখোমুখি হন তিনি, যা নিজের ফেসবুকে পোস্ট দেন। পরে ভুক্তভোগীর বাবা বাদী হয়ে লালবাগ থানায় মামলা করেন।

এদিকে বিকাশ পরিবহনের বাসটির চালক মাহবুবুর রহমান ও তার সহকারী কাওসার আহম্মেদকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। চালককে বুধবার ও বৃহস্পতিবার সহকারীকে ঢাকার আশুলিয়া থেকে গ্রেপ্তার করে লালবাগ থানা পুলিশ। জব্দ করা হয়েছে বাসটি। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, অভিযুক্ত চালক ও তার সহকারীকে গ্রেপ্তারের পর ছবি ভুক্তভোগীকে দেখিয়ে আসামির বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন তাঁরা। কাওসারের বাড়ি পটুয়াখালী। ঘটনার পর সে পাঁচটি জেলায় আত্মগোপনে ঘুরেছে।

এদিকে আশুলিয়ায় তার অবস্থান শনাক্তের পর গ্রেপ্তার করা হয়। আজ শুক্রবার আদালতে হাজির করে কাওসারের রিমান্ড আবেদন করা হতে পারে। বৃহস্পতিবার মাহবুবুরকে আদালতের মাধ্যমে এক দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ বলে জানান তিনি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আসিফুজ্জামান আসিফ জানান, বৃহস্পতিবার চালক মাহবুবুরকে পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হলে বিচারক এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ওই ছাত্রী বলেন, ‘নিজেকে রক্ষা করতে না পারলে বড় অঘটনা ঘটে যেতে পারত। বাসের দরজা লাগানো থাকায় বেশি ভয় পেয়েছিলাম। কীভাবে নিজেকে রক্ষা করব ভাবছিলাম, সঙ্গে চলছিল ধস্তাধস্তি। একপর্যায়ে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি, দরজায় ছিটকিনি লাগানো নেই।’ ‘বাসের গতির কারণে দরজা আংশিক খুলে যাচ্ছিল। কোনো কিছু চিন্তা না করে আজিমপুর এলাকায় স্পিডব্রেকারে এসে বাসের গতি কিছুটা কমলে লাফ দিই। যে এলাকায় লাফ দিই, বিদ্যুৎ ছিল না। লোকজনও ছিল না রাস্তায়। পরে দৌড় দিই। কীভাবে লাফ দিয়েছিলেন, সেটি ভাবতেই এখন ভয় পাচ্ছেন।’ যোগ করেন তিনি।

লালবাগ থানার ওসি এম এম মোর্শেদ জানান, মামলার পরই আসামিদের গ্রেপ্তারে তাঁরা মাঠে নামেন। আশুলিয়া থেকে চালককে গ্রেপ্তার ও বাসটি (ঢাকা-মেট্রো-ব-১২-০৬০৫) জব্দ করা হয়। সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহের পর পর্যালোচনা করে বাসটি শনাক্ত করা হয়।

পুলিশের লালবাগ বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার কুদরত-ই-খুদা বলেন, ফেসবুকে ঘটনা জানিয়ে মেয়েটি পোস্টের মাধ্যমে সাহসের পরিচয় দিয়েছেন। এ জন্যই দ্রুত অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। অনেকেই এ ধরনের ঘটনার শিকার হয়ে চেপে যান। ফলে দোষীরা অধরা থেকে যায়।


ঢাকা, ২৮ জুলাই (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএসসি

 

 

 


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ