Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com
‘তোর লাশ যাবে এই জাহাজ থেকে; কোনো ছুটি হবে না’

কফিনবন্দি হয়ে ফিরলেন নাবিক আবু রাশেদ

প্রকাশিত: ১২ জুন ২০২২, ১২:১৪

কফিনবন্দি হয়ে ফিরলেন নাবিক আবু রাশেদ

যশোর লাইভ: সব কিছুই যেন তছনছ হয়ে গেছে। এলোমেলা হয়ে গেছে রাশেদের পরিবারের গল্পটাও। শেষমেষ সকল স্বপ্ল ভেঙ্গে লাশ হয়ে ফিরলেন স্বপ্নবাজ নাবিক আবু রাশেদ। অভাব-অনটনের সংসারে এক বুক স্বপ্ন নিয়ে জাহাজে চাকরি নিয়েছিলেন আবু রাশেদ। কিন্তু মাত্র কয়েক মাসের মাথায় শনিবার ভোরে তার কফিনবন্দি মরদেহ এলো যশোরে গ্রামের বাড়িতে। মুম্বাইয়ে বাংলাদেশি জাহাজ 'এমভি জাহান মনি'তে রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে ওই নাবিকের।

একাধিক সহকর্মী ও পরিবারের অভিযোগ, জাহাজে দায়িত্বরত অবস্থায় শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের ধারাবাহিকতায় রাশেদের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর সঠিক কারণ উদ্ঘাটন করে বিচারের দাবি তুলেছেন তারা। মণিরামপুর উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের কুমারঘাটা গ্রামের কৃষক আব্দুর সবুর সরদার ও গৃহিণী পারুল বেগম দম্পতির ছেলে আবু রাশেদ। দুই সন্তানের মধ্যে রাশেদ ছিলেন ছোট।

বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ একাডেমির ৪০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন রাশেদ। গত মার্চে বাংলাদেশের পতাকাবাহী এমভি জাহান মনিতে ডেক ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন তিনি। ৩০ মে ভারতের মুম্বাই বন্দরের জলসীমায় নোঙর করা অবস্থায় বাংলাদেশি এমভি জাহান মনিতে অনবোর্ড থাকা অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সেখানকার একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়।

চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩১ মে সকালে তার মৃত্যু হয়। ১০ দিন পর শনিবার ভোররাতে লাশ বাড়িতে পৌঁছায়। শনিবার সকালে রাশেদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পারিবারিক কবরস্থানে দাফনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তার বাড়ির উঠানে টাঙানো শামিয়ানা, চেয়ারে উঠানভর্তি মানুষ। কেউ রাশেদের বাবাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন, কেউ বা রাশেদের মায়ের মাথায় পানি দিচ্ছেন।

এদিকে ছেলের মৃত্যুতে অনেকটাই বাকহীন হয়ে পড়েছেন আব্দুর সবুর সরদার। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন শামিয়ানার নিচে রাখা ছেলের কফিনের দিকে। একপর্যায়ে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন, ‘ও আল্লাহরে...। আমার আব্বু ভালো মানুষ ছিল। সবার সাথে ভালো করে কথা কত। ওর কোনো কিছুতে লোভ ছিল না। আমার আব্বুরে কী কষ্ট দিয়ে মেরেছে। মুখে সারা শরীরে কোনো দাগ ছিল না; এখন সারা শরীর মুখে দাগ।’ ছেলের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে বিলাপ থামছে না পারুল বেগমের।

ভাঙা গলায় তিনি বলেন, মৃত্যুর আগের দিন আমার সঙ্গে কথা হয়েছিল। সে অসুস্থ, তার পরও আমাকে সান্ত্বনা দিতে যেয়ে বলেছে, আমি ভালো আছি। তবে রাশেদের কথার স্বর শুনে আমি বুঝে ফেলেছিলাম ও ভালো নেই। ও আমাদের নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখত। আমাদের স্বপ্ন শেষ; ওর সব স্বপ্নও শেষ! রাশেদের বড় ভাই রাসেল পারভেজ বলেন, মাসখানেক আগে রাশেদ আমারে ফোন দিয়ে বলে, ‘ভাই আমার খুব জ্বর এসেছে। ওরা আমারে চিকিৎসা করাচ্ছে না। ছুটি চাইলে তারা বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে আমারে আরও অসুস্থ করে ফেলছে।

তুই দেখ আমারে কোনোভাবে ছুটির ব্যবস্থা করে দিতে পারিস কিনা।’ একপর্যায়ে রাশেদ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে ছুটি চাইলে বলে, ‘তোর লাশ যাবে এই জাহাজ থেকে; কোনো ছুটি হবে না।’ তিনি অভিযোগ করেন, বেশি বেশি ওভারটাইম করাত। বিভিন্ন ইনজেকশন দিত। ইনজেকশন দেওয়ার পরে রক্ত বমি করত। আমার ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনায় সঠিক তদন্ত দাবি করছি।

ওদিকে আবু রাশেদের মরদেহ যশোরের বাড়িতে আনে তার কর্মস্থল চট্টগ্রামের এসআর শিপিং লিমিটেড। কোম্পানির নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম টুটুল জানান, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় গত ৩১ মে তাকে মুম্বাইয়ের জে জে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তার দাবি, পরিবার থেকে কোম্পানির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা ঠিক নয়।

ঢাকা, ১১ জুন (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএসসি


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ