Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com
গড়ে তোলে ঈগল বাহিনী

টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার এখন ‘মস্তবড়’ ছিনতাইকারী যেভাবে

প্রকাশিত: ৭ মে ২০২২, ১১:৩৯

 ঈগল বাহিনী প্রধান

লাইভ প্রতিবেদক: চলাফেরায় অভিজাত। পোষাকে আষাকে তারা দেখ বেশ সুন্দর। নামী দামী বাইক পরিচালনা করা। দেখ শুনতে ফিটফাট বাবু। কথা ও আচার ব্যবহারে বুঝার উপায় নেই তিনি যে মস্তবড় ছিনতাইকারী। নেতা ঈগল বাহিনীর। পেশায় ছিলো মেধাবী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। রেজাল্টও ভাল। এক্কেবারে সিদ্ধহস্ত। পথচারি ও রিকশারোহীরাই তাদের প্রধান টার্গেট। মা-বাবা জমি বেচে ছেলেকে পড়িয়েছেন ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে তিনি চাকরি নিয়েছিলেন দেশের নামকরা টেক্সটাইল কোম্পানিতে।

তার নাম আশরাফুল ইসলাম। স্বজনরা জানে তিনি একজন পেশাদার টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। সেই মেধাবী ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল ইসলাম পুলিশের চোখে এখন ‘মস্তবড়’ ছিনতাইকারী। রাজধানীর ছিনতাই চক্রের হোতা। ‘ঈগল বাহিনী’ নামে তার রয়েছে ছিনতাইয়ের দল। রোজার আগে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় হওয়া বড় দুটি ছিনতাইয়ের ঘটনা তদন্তে নেমে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুলের অন্ধকার ভুবনের খোঁজ পায়। সম্প্রতি তিন সহযোগীসহ তাকে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

ডিবি জানতে পারে, ২০১৯ সাল থেকে প্রায় প্রতিদিনই আশরাফুলের দলের সদস্যরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পথচারী ও রিকশাযাত্রীদের কাছ থেকে টান দিয়ে ব্যাগ ছিনিয়ে নিচ্ছিল। গ্রেপ্তার হওয়া অন্য তিনজন হলো-সাইফুল ইসলাম শাওন, লেলিন শেখ ও জিল্লুর রহমান খান । তাদের মধ্যে লেলিন আশরাফুলের সঙ্গেই টেক্সটাইল মিলের পিকআপ ভ্যানের চালক ছিলেন। জিল্লুর ও শাওন রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক বলে পুলিশকে জানিয়েছে। তাদের সম্পর্ক বেশ কয়েক বছর আগে। এখন তারা এক অপরের সহযোগী-সহযাত্রী।

ডিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ছিনতাইয়ের টাকা দিয়ে আশরাফুল তার শ্বশুরকে নিয়ে মোহাম্মদপুর এলাকায় জমি ও ফ্ল্যাটের ব্যবসা করতেন। সাইফুল ছিনতাইয়ের টাকা বিনিয়োগ করে রীতিমতো গ্রামের বাড়ি বরিশালে ঠিকাদারিও করতেন। বেশ সম্পদের মালিকও হয়েছেন আশরাফুল গংরা। রয়েছে তাদের শক্তিশালী একটি ছিনতাইকারী বাহিনী। একবারেই এরা পেশাদার। তাদের প্রধান টার্গেট রিকশাআরোহী ও পথচারীদের ব্যাগ। ব্যাংকের দিকেও রয়েছে তাদের বেশ কিছু সোর্স। এরাই বলে দেয় কোন সময় কে কিভাবে টাকা নিয়ে বের হয়। তার পর ঠিক করে টার্গেট।

ইঞ্জিনিয়ার থেকে ছিনতাইকারী যেভাবে:
ডিবির গুলশান বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান বলেন, আশরাফুল চাকুরী করার সময় ৩৫ হাজার টাকা বেতন পেতেন। ২০১৯ সালে করোনা শুরুর পর চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয় বলে জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেন আশরাফুল। এরপর নিজের কর্মস্থলের পিকআপ চালক লেলিনের প্ররোচনায় তিনি এই অপকর্মে নামেন। ধীরে ধীরে টাকার লোভে পড়েন আশরাফ। তারা দামি মোটরসাইকেলে ঘুরে ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়া বা টাকা উত্তোলন করে ফেরার সময়ে লোকজনকে টার্গেট করতেন। এরপর টান দিয়ে ব্যাগ নিয়ে নিতেন। ধীরে ধীরে সাহস বেড়ে যায়। নানান কেীশল শিখে নেয় এরা। হয়ে উঠে ছিনতাই কাজে পটু।

আশরাফুল দাবি করেছেন, চাকরির চেয়ে ছিনতাই করে আয় ভালোই হতো। এতে লোভে পড়ে যান তিনি। শুরুর দিকে ব্যাংক কেন্দ্রিক টার্গেট থাকলেও ‘নেশা’ হয়ে যাওয়ায় ব্যাগ দেখলেই প্রায় প্রতিদিনই টান দিয়ে ছিনিয়ে নিতেন। এভাবেই সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন আশরাফুল গংরা। ডিবি ডিসি মশিউর আরো বলেন, আশরাফুলের তিন বছরের এক ছেলে রয়েছে। স্ত্রী-সন্তান ও অন্যান্য স্বজনরা জানেন, তিনি টেক্সটাইল কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার। কঠোর পরিশ্রম করে তিনি টাকা রোগার করছেন। কিন্তু এর আড়ালে হয়ে উঠেছিলেন ভয়ংকর ছিনতাইকারী।

আশরাফুলের বেশভুষা ভালো হওয়ায় একবার ব্যাগ টান দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে আড়ালে চলে যেতে পারলে তাকে আর কেউ সন্দেহ করত না। কথা বার্তা আচার আচরনে বুঝার উপায় নেই যে তিনি একজন পেশাদার ছিনতাইকারী। আশরাফুল আরো জানায়, করোনাকালে চাকরি হারিয়ে ছিনতাইয়ে নামেন। তবে ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত বেশি টাকার লোভে মেধাবী আশরাফুল এই অপকর্মে নেমেছিলেন। তদন্ত করে তারা দেখেছেন, আসলে করোনা কোনো বিষয় ছিল না, এতে তার চাকরিতেও প্রভাব পড়েনি। অনেক আগে থেকেই লেলিনের মাধ্যমে ছিনতাই চক্রের সঙ্গে আশরাফুলের যোগাযোগ। ডিবি পুলিশ আরো জানায়, লেলিন মূলত টেক্সটাইল কোম্পানির পিকআপ ভ্যান চালানোর ফাঁকে ফাঁকে সাইফুল ও শাওনের সঙ্গে বহু বছর ধরেই ছিনতাই করে আসছিল। বিসয়টির প্রমানও পেয়েছেন ডিবির কর্মকর্তারা।

কেন ঈগল বাহিনী নাম রাখা হলো :
আশরাফুলের দাবী যারা মোটর বাইকের পেছনে বসতো তারা ছোঁ মেরে ব্যাগ টানতো। এথেকেই নাম দেয়া হয়েছে ঈগল বাহিনী। ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, আশরাফুলের চক্রের সদস্যরা সবাই দামি মোটরসাইকেল নিয়ে ছিনতাই করে আসছিল। দলের যে সদস্য মোটরসাইকেলের পেছনে বসত, তাকে তাদের ভাষায় ‘ঈগল’ আর মোটরসাইকেল চালককে ‘পাইলট’ বলা হতো। পেছনে বসা ব্যক্তি চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে রিকশা আরোহী বা পথচারীর হাতে থাকা ব্যাগটি ছোঁ মেরে নিয়ে নিত। আশরাফুল সব সময়েই ঈগলের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন বলে জানিয়েছে ডিবিকে।

জানা যায়, এরা মূলত সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এভাবে ছিনতাই করত। তবে শুক্র ও শনিবার তারা সাধারণত 'কাজে' যেত না। রোজার আগে মিরপুরের পল্লবীতে আলাদা দুটি ঘটনায় ১১ লাখ টাকা ও চার লাখ টাকা ছিনতাই হয়। ওই দুটি ঘটনার ছায়া তদন্ত করতে গিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রযুক্তিগত তদন্তে সন্ধান মেলে এদের। এর মধ্যে ১১ লাখ টাকা ছিনতাইয়ে সরাসরি ঈগলের দায়িত্বে ছিল আশরাফুল। চার লাখ টাকা ছিনতাইয়ে ছিল সাইফুল ও শাওন। ওই টাকা সাথে সাথেই ভাগবাটোয়ারা হয়ে যেত। এদের মধ্যে একজন ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পালন করতো বলে তারা ডিবিকে জানিয়েছে।

এ ব্যাপারে টিম লিডার এডিসি এস.এম রেজাউল হক জানান, ওই চারজনকে আদালত এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। ঈদের ছুটি থাকায় তারা কারাগারে রয়েছে। শিগগিরই তাদের কারাগার থেকে এনে ছিনতাই বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তবে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চারজন দাবি করেছে, তিন বছরে তারা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় শতাধিক ছিনতাই করেছে। লেলিন, শাওন ও সাইফুলের বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের কয়েকটি মামলাও রয়েছে।

তারা জানিয়েছে তাদের কোন সদস্য ছিনতাই করতে গিয়ে ধরা পড়লে তাদের আইনজীবি রয়েছে তিনি তাদের জামিনে বের করে আনার দায়িত্ব পালন করেন। ডেখানে যা দরকার তারা তাই করেন বলেও জানিয়েছে আশরাফুল বাহিনী।

ঢাকা, ০৬ মে (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিআইটি


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ