Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শনিবার, ৪ঠা মে ২০২৪, ২১শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com
এফআইআর: শরীর তল্লাশি করে বেশকিছু গোপনীয় কাগজপত্র এবং ডকুমেন্টসের ছবি সংবলিত মোবাইল উদ্ধার

সাংবাদিক রোজিনার বিরুদ্ধে মামলায় যে শাস্তি হতে পারে!

প্রকাশিত: ১৯ মে ২০২১, ০৮:৩৫

লাইভ প্রতিবেদক: সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম। সরকারের অনুকম্পা না পেলে ফেঁসে যেতে পারেন তিনি। অত্যন্ত কুশলী ও পাকা হাতে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে মামলাটি। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞ কোন ব্যক্তি এখানে হাত দিয়েছেন। মামলার ধারা-উপ-ধারা যাচাই বাচাই করে এমনটিই জানাগেছে। রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ও অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা হয়েছে। প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে দেখা যায়, দণ্ডবিধির ৩৭৯ ও ৪১১ ধারায় এবং অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের ৩ ও ৫ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

আইন-কানুন যাচাই করে জানাগেছে দণ্ডবিধির ৩৭৯ ধারায় বলা আছে চুরির শাস্তি। এ ধারায় বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি চুরি করে, সে ব্যক্তিকে যেকোনো ধরনের কারাদণ্ড যার মেয়াদ অনধিক তিন বছর পর্যন্ত হতে পারে বা জরিমানা দণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবে। ৪১১ ধারায় বলা আছে, অসাধুভাবে চোরাই মাল গ্রহণ করা। এই ধারায় বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি কোনো মাল চোরাই বলে জেনে বা তা চোরাই মাল বলে বিশ্বাস করার কারণ থাকা সত্ত্বেও উক্ত চোরাই মাল অসাধুভাবে গ্রহণ বা রক্ষণ করে, সে ব্যক্তি যেকোনো বর্ণনার কারাদণ্ডে যার মেয়াদ অনধিক তিন বছর পর্যন্ত হতে পারে বা জরিমানা দণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে।

এদিকে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট-১৯২৩ সালে প্রণীত আইনে ৩ ও ৫ ধারায় ১৪ বছর পর্যন্ত শাস্তির বিধান রয়েছে। এই আইনের ৩.এ (১) ধারায় বলা হয়েছে- কোনো ব্যক্তি নিষিদ্ধ এলাকার বা বাংলাদেশের নিরাপত্তার স্বার্থে কোনো এলাকাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলে সরকারি কর্তৃপক্ষ অথবা সরকারের লিখিত অনুমোদন ব্যতীত অথবা সরকারি পক্ষের অনুমোদন ব্যতীত ওইসব এলাকার কোনো ছবি, স্কেচ, প্ল্যান, মডেল, নোট বা অন্য কোনো প্রকার শনাক্তরণের উপযোগী কোনো কিছু তৈরি বা অঙ্কন করতে পারবেন না।

এরকম কোনো ছবি, স্কেচ, প্ল্যান, মডেল, নোট বা প্রতিনিধিত্বকারী কোনো অনুরূপ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়ে অনুমোদন পাওয়ার আগে প্রকাশ করা যাবে না। এসব ডকুমেন্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার সাধারণভাবে বা বিশেষ নির্দেশে বিধান করতে পারবে। অথবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা বিনষ্ট করতে পারবে। যদি কোনো ব্যক্তি এই ধারার কোনো বিধান লঙ্ঘন করেন, তাহলে শাস্তি হিসেবে জেল দেয়া যাবে। এই শাস্তি তিন বছর পর্যন্ত হতে পারে অথবা জরিমানা করা যেতে পারে অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যেতে পারে।

অসহায় হয়ে পড়েন রোজিনা

 

আর এই আইনের ৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি যদি কোনো নিষিদ্ধ এলাকার কাছে গিয়ে, পরিদর্শন করে, অতিক্রম করে সান্নিধ্যে গিয়ে অথবা ভেতরে প্রবেশ করে অথবা কোনো স্কেচ, প্ল্যান, মডেল অথবা নোট তৈরি করেন, যা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শত্রুপক্ষের উপকারে আসবে বলে মনে হয়, ধারণা করা যায় অথবা নিশ্চিত হওয়া যায় অথবা যদি কোনো ব্যক্তি শত্রুপক্ষের ব্যবহারে আসতে পারেন, আসবেন বলে ধারণা করা যায় অথবা নিশ্চিত হওয়া যায়, এমন কোনো অফিসিয়াল গোপন কোড অথবা পাসওয়ার্ড, অথবা নোট অথবা অন্য কোনো দলিলপত্রাদি অথবা তথ্য আহরণ করেন, সংগ্রহ করেন, রেকর্ড করেন, প্রকাশ করেন অথবা কোনো ব্যক্তির কাছে পাচার করেন তাহলে তিনি এই আইনে অপরাধী হবেন।

একারণে ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান সংবলিত এই ধারায় অভিযোগ আনয়নের জন্য অভিযুক্ত যেকোনো একটি বিশেষ কার্য রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও স্বার্থের পরিপন্থিমূলক উদ্দেশ্যে করেছেন, তার প্রমাণ প্রয়োজন নাই। উক্ত বিশেষ কার্যটি তার বিরুদ্ধে প্রমাণিত না হওয়া সত্ত্বেও এই ধারায় তাকে শাস্তি প্রদান করা যাবে। যদি মামলার অবস্থা অথবা তার আচরণ অথবা তার জ্ঞান কার্যাবলী প্রমাণ করে যে, তার উদ্দেশ্য ছিল রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ব্যাহত অথবা নিষিদ্ধ এলাকা সম্পর্কিত কোনো বিষয়ের কোনো স্কেচ, প্ল্যান, মডেল, আর্টিকেল, নোট, দলিল বা তথ্য অথবা কোনো গোপনীয় কোড বা পাসওয়ার্ড তৈরি, আহরণ, সংগ্রহ, রেকর্ড ও প্রকাশ করে বা আইনগত অধিকার প্রাপ্ত না হয়ে পাচার করে।

এজাহারে বলা হয়েছে, গত ১৭ মে বিকাল ২টা ৫৫ মিনিটের সময় একান্ত সচিব দাপ্তরিক কাজে সচিবের একান্ত সচিবের দপ্তরে প্রবেশ করেন। সেই সময় একান্ত সচিব দাপ্তরিক কাজে সচিবের কক্ষে অবস্থান করার সুযোগে আসামি রোজিনা দাপ্তরিক গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র তার নিজ শরীরের বিভিন্ন স্থানে লুকায় এবং মোবাইলফোনের মাধ্যমে ছবি তোলার সময় সচিবের দপ্তরে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য মো. মিজানুর রহমান খান বিষয়টি দেখতে পেয়ে আসামি রোজিনাকে বাধা প্রদান করেন এবং তিনি নির্ধারিত কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে কক্ষে কি করছেন জানতে চাইলে তিনি নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দেন।

স্বাস্থ্যের জালে বন্দি রোজিনা ইসলাম

 

পরবর্তীতে অফিসের অন্য কর্মকর্তা ও স্টাফরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগম আসামির শরীর তল্লাশি করে তার নিকট থেকে বেশকিছু গোপনীয় গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র এবং ডকুমেন্টসের ছবি সংবলিত মোবাইল উদ্ধার করেন। এতেই প্রমাণিত হয় ডকুমেন্টগুলো তিনি চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। মামলার আবেদনে আরো বলা হয়, বর্তমানে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ভ্যাকসিন ক্রয় সংক্রান্ত নেগোসিয়েশন চলমান রয়েছে এবং খসড়া সমঝোতা স্মারক ও নন-ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্ট প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে। সমঝোতা স্মারক নিয়ে পক্ষদ্বয়ের মাঝে প্রতিনিয়ত পত্র এবং ই-মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ হচ্ছে, যেখানে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সন্নিবেশিত রয়েছে। উক্ত নারী যেসব নথিপত্রের ছবি তুলেছিলেন, তার মধ্যে উল্লিখিত গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ছিল।

এসব তথ্য জনসমক্ষে প্রচার হলে সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এসব নানান কারণ প্রমাণের চেষ্টা করছে পুলিশ ও বাদীপক্ষ। এখন পথ একটাই যদি বাদী ওই মামলা থেকে সড়ে দাঁড়ান।

‘আমার সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে’

এদিকে বললেন, আমি অসুস্থ। আমার সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম। মঙ্গলবার রিমান্ড শুনানি শেষে আদালত থেকে বের হওয়ার সময় তিনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এই অভিযোগ করেন। এর আগে সকাল ১১টার দিকে এজলাসে উঠানো হয় সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে।

সাধারণত এজলাসে স্বজন ও সাংবাদিকদেরকে প্রবেশ করতে দেয়া হলেও এদিন কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। আদালত শুনানি শেষে রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করেন কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এরপর পুলিশ তাকে এজলাস থেকে বের করে আনেন। এ সময় রোজিনা ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমার সঙ্গে তারা অনেক অন্যায় করেছে। আমি অসুস্থ।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট করার কারণে তারা আমার সঙ্গে এসব করছে। মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) আরিফুর রহমান সরদার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। তার আগে সোমবার রাতভর শাহবাগ থানায় আটক রেখে মঙ্গলবার সকালে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে নেয়া হয়।

প্রসঙ্গত, পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য গত সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গেলে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে সেখানে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাত সাড়ে আটটার দিকে পুলিশ তাঁকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়। রাত পৌনে ১২টার দিকে পুলিশ জানায়, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা করা হয়।

তাঁকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। আজ আদালত তাকে তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। আদালতের আদেশ অনুযায়ী পুলিশ সাংবাদিক রোজিনাকে কাশিমপুর কারাগারে নিয়ে যান। আগামী বৃহস্পতিবার তার জামিন আবেদনের শুনানির কথা রয়েছে।

ঢাকা, ১৮ মে (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএসসি


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ