দিনাজপুর লাইভ: দিনাজপুরের বোচাগঞ্জের পীরের আস্তানা থেকে মিলছে নানান অজানা তথ্য। ভন্ডামীর নানান বিষয়ে মুখ খুলছেন মুরিদ ও এলাকাবাসী। অন্যদিকে কথিত পীরসহ দু’জন হত্যার ঘটনায় বোচাগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। কথিত পীর নিহত ফরহাদ হোসেন চৌধুরীর মেয়ে ফাতেমা জাহান চৌধুরী এমি বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেন।
অপরদিকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এখন পর্যন্ত পীরের গুরু পীর, মোহাম্মাদিয়া দরবার শরিফের খাদেম ও একজন মুরিদকে আটক করেছে। তাদেরকে এখনো গ্রেফতার দেখানো হয়নি।
অন্যদিকে কাদেরীয়া মোহাম্মাদিয়া দরবার শরিফের ভিতরের কার্যক্রম নিয়ে বেরিয়ে আসছে অনেক অজানা তথ্য। বিতর্কিত কর্মকান্ড নিয়ে মুখ খুলছে মানুষ।
বোচাগঞ্জ থানার ওসি আরজু মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, জোড়া হত্যাকান্ডের ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে মামলা করেছেন কথিত নিহত পীরের মেয়ে ফাতেমা জাহান চৌধুরী এমি। এই মামলায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা না হলেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৩ জনকে আটক করা হয়েছে।
এদের মধ্যে রয়েছে নিহত কথিত পীরের গুরু যার মাধ্যমে পীর
বাবার খেতাব পান সেই পীর এছাহাক আলী (৫৮)। যাকে কুড়িগ্রাম পাথরডুবি ইউনিয়নের পাথরডুবি গ্রাম থেকে আটক করা হয়েছে। তিনি ওই গ্রামের মৃত পীর আজিম উদ্দিনের ছেলে।
আটক অন্য দু’জন হচ্ছেন দরবার শরিফের খাদেম সাইদুর রহমান ও মুরিদ সমর আলী। এর থেকে বিস্তারিত এখনি জানাতে রাজী হয়নি পুলিশ। তবে নিহতের পালিত মেয়ে গৃহপরিচারিকা রুপালী বেগমের স্বামী সিরাজুল ইসলামকে এখনো খুজে পায়নি পুলিশ।
রাজনীতি ছেড়ে কিভাবে পীর বাবা হয়ে উঠলেন, জানতে চাইলে মুরিদ মো. সলিম উদ্দিন ও আয়শা বেগম জানান, ফরহাদ হোসেন ছিলেন বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ)এর অনুসারি। কুড়িগ্রামের পাথরকুচি গ্রামের পীর ইছাহাক আলীর মাধ্যমে ফরহাদ হোসেন এই তরিকায় আসেন।
সম্প্রতি সময় দু’জনের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। আগে ইছাহাক আলী নিয়মিত এই দরবার শরিফে আসলেও বিরোধের পর আর আসতেন না। এরপর দৌলা গ্রামের জনৈক বাবুর বাড়ীতে আসতেন। গত ১০/১২ দিন আগে ইছাহাক আলী বাবুর বাড়ী থেকে ঘুরে গেছেন।
অপরদিকে এই ঘটনার পর লোক মুখে আলোচনা হচ্ছে দরবার শরিফের কর্মকান্ড নিয়ে। দরবার শরীফের মুরিদ ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার সিনুয়া গ্রামের মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে মো. খলিল জানান, আমরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে বিশ্বাসী না। আমাদের নামাজ ২৪ ঘন্টা চলে। সেটি দাউলি সালাত নামাজ। দরবার শরীফে বিকেল থেকে শুরু করে ভোর রাত পর্যন্ত চলে দাউলি সালাত নামাজ। বৃহস্পতিবার এবং সোমবার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। মাহফিলে মুসলমান ও হিন্দু মুরিদ অংশগ্রহণ করেন।
ঘরের ভিতরের বড় বড় ছবি কেন এবং হিন্দুরা এখানে আল্লাহর আরাধনা কিভাবে করেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, ছবিগুলো আব্দুল কাদের জিলানীর এবং আমরা তার কাদেরীয়া মোহাম্মাদীয়া তরিকায় বিশ্বাসী। হিন্দুরা আমাদের সাথে মুক্তি লাভের আশায় আরাধনা করেন। এখানে গান বাজনার মাধ্যমে আব্দুল কাদের জিলানীর মতবাদ তুলে ধরা হয়।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে বোচাগঞ্জের দৌলা গ্রামে কাদরিয়া মোহাম্মাদিয়া দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠা করেন ফরহাদ হোসেন চৌধুরী। সেই দরবার শরিফের ভিতরে গত সোমবার রাত ৯ টার দিকে ফরহাদ হোসেন চৌধুরী (৬০) ও পালিত কন্যা ও গৃহপরিচারিকা রুপালী বেগমকে (১৯) গুলি করে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
ঢাকা, ১৭ মার্চ (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এজেড
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: