Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শনিবার, ১৮ই মে ২০২৪, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

অন্ত:সত্ত্বা স্ত্রী রেখে ব্যাচমেটের সঙ্গে বিসিএস ক্যাডারের যৌনতা ফাঁস!

প্রকাশিত: ২০ অক্টোবার ২০১৯, ২১:৫০

লাইভ প্রতিবেদক : অন্ত:সত্ত্বা স্ত্রীকে রেখে ব্যাচমেটের সঙ্গে বিসিএস ক্যাডারের আপত্তিকর সম্পর্ক নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ভয় দেখিয়ে ২৭তম বিসিএসের ওই নারী কর্মকর্তাকে দিনের পর দিন ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কর্মক্ষেত্রেই একটি কক্ষে প্রথমে ধর্ষণের শিকার হন ওই নারী। পরে তার স্বামীকে ঘটনাটি জানানো হবে এমন হুমকি দিয়ে একাধিকবার বিভিন্ন ফ্লাটে নিয়ে ওই নারী ব্যাচমেটের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছেন ২৭তম বিসিএস কর্মকর্তা। অভিযুক্ত কর্মকর্তার নাম জয়নাল মোল্লা। তিনি ইকোনমিক ক্যাডারের ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তা। পদবি সিনিয়র সহকারী প্রধান। বর্তমানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এইচএন আশিকুর রহমানের একান্ত সচিব (পিএস)।

অভিযোগকারী নারী কর্মকর্তা একই ব্যাচের সিনিয়র সহকারী প্রধান। বর্তমান কর্মস্থল পরিকল্পনা কমিশন। ঘটনার সময় তারা দু’জন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগে কর্মরত ছিলেন। স্ত্রী অন্ত:সত্ত্বা থাকাকালে ওই নারীর সঙ্গে আপত্তিকর সম্পর্কে জড়ায় বিসিএস ক্যাডার জয়নাল মোল্লা। একপর্যায়ে তিনি জানান, তার স্ত্রী অন্ত:সত্ত্বা থাকায় ওই নারীর সঙ্গে স্রেফ সময় কাটিয়েছেন তিনি। গভীর সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছেন। এনিয়ে বাড়াবাড়ি করলে ওই নারীর স্বামীকে বিষয়টি জানানো হবে। প্রয়োজনে অস্ত্রধারী ক্যাডার দিয়ে তাকে এবং তার স্বামীকে শিক্ষা দেয়া হবে। এরই মাঝে একটি ক্ষুদে বার্তায় আপত্তিকর কথাবার্তা ওই নারীর স্বামীর দৃষ্টিগোচর হয়। পরে ওই ঘটনা নিয়ে তাদের মাঝে পারিবারিক সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

যেভাবে ঘটনার সূত্রপাত : ভুক্তভোগী নারী কর্মকর্তা তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের প্রতিকার চেয়ে পরিকল্পনা বিভাগের সচিবের কাছে আবেদন করেন ২০১৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর। ভিকটিম তখন আইএমইডির উপপরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন। অভিযুক্ত জয়নাল মোল্লাও একই দফতরে পাশাপাশি কক্ষে কর্মরত। সচিবের কাছে তিন পৃষ্ঠার লিখিত অভিযোগের এক স্থানে বলা হয়, ‘২০১৭ সালের ৯ নভেম্বর সকাল ৯টার দিকে আমার সঙ্গে সুকৌশলে পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে তার রুমে (১১নং ব্লকের তিন তলার তৎকালীন ৩২ নম্বর রুমে) ডেকে নিয়ে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। পরবর্তী সময়ে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে তথা লোক জানাজানির ভয় দেখিয়ে নভেম্বর ২০১৭ থেকে জুন ২০১৮ পর্যন্ত আমার সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। আমিও লোকলজ্জার ভয়ে বিষয়টি কাউকে অবহিত করতে পারেনি।’

এর মধ্যে ২০১৮ সালের মার্চে জয়নাল মোল্লা ভিকটিমের মুঠোফোনে নোংরা একটি খুদে বার্তা পাঠান, যা তার স্বামী দেখে ফেলে। পরে এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ভিকটিম চিঠিতে বলেন, ‘২০১৮ সালের ২১ জুন জয়নাল মোল্লা তাকে জানায়, ‘স্ত্রীর গর্ভধারণের সময়ে আমাকে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে সময় কাটানোর জন্য এভাবে শারীরিক সম্পর্ক করেছে। এখন বিষয়টি ভুলে যেতে হবে এবং আমার (ভিকটিম) বিষয়ে তার কোনো দায়দায়িত্ব নেই। এমনকি এও বলেন, বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে অস্ত্রধারী ক্যাডার দিয়ে তাকে এবং তার স্বামী শিক্ষা দেবে।’

ভিকটিম তার চিঠির এক স্থানে লেখেন, ‘এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে জয়নাল মোল্লার ভদ্রবেশী মুখোশটা খুলে যায় এবং আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে ৯ নভেম্বর ২০১৭ থেকে ২ জুন ২০১৮ পর্যন্ত তার স্ত্রী গর্ভকালীনের শুরু থেকে ডেলিভারির পূর্বসময় পর্যন্ত সে সুকৌশলে ও ফুসলিয়ে পরিবেশ তৈরি করে আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে আমাকে ব্যবহার করেছে।’

এছাড়া চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘একজন পুরুষ সহকর্মী সুকৌশলে ফাঁদ পেতে উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে ফুসলানোমূলক কথাবার্তা বলে কোনো মহিলা সহকর্মীকে তার প্রতি আকৃষ্ট করে তোলা, সুকৌশলে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করা ও বজায় রাখা, পরবর্তী সময়ে সম্পূর্ণভাবে সম্পর্ক অস্বীকার করা ইত্যাদি অন্যায় সুবিধা গ্রহণ করা অসদাচরণের শামিল।

জয়নাল মোল্লার এই ধরনের হীন আচরণের জন্য আজ আমার পারিবারিক জীবন ধ্বংস প্রায় এবং আমি শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। এছাড়া আমার কর্মক্ষেত্রে কটূক্তি, মিথ্যা দোষারোপ, তির্যক মন্তব্য, অফিস পরিবেশে আমাকে নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাসাহাসি বিদ্রুপসহ বিভিন্ন হয়রানির শিকার হচ্ছি। ফলে কর্মপরিবেশ আমার জন্য অস্বস্তিকর ও বিষাক্ত হয়ে উঠেছে।’

তার এই অনুচিত আচরণ একজন মহিলা সহকর্মী হিসেবে আমার প্রতি অফিসিয়াল শিষ্টাচারবহির্ভূত এবং চূড়ান্তভাবে মর্যাদাহানিকর। বিষয়টি উপলব্ধি করে জয়নাল মোল্লা চাপ প্রয়োগে মিটিয়ে ফেলার জন্য ব্যাচমেটদের মধ্য থেকে বিভিন্নজনকে আমার কাছে পাঠিয়ে আমাকে হেনস্তা করে।’

সচিবের কাছে ভিকটিমের এই লিখিত অভিযোগ দেয়ার পর অভিযুক্ত সিনিয়র সহকারী প্রধান জয়নাল মোল্লাকে পরিকল্পনা কমিশন থেকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা শাখায় বদলি করা হয় গত বছর ১২ সেপ্টেম্বর। অভিযোগের বিষয়ে প্রাথমিক সত্যতা যাচাইয়ে শুনানি গ্রহণ করতে ভিকটিমকে ৮ অক্টোবর চিঠি দেয়া হয়। শুনানি করেন পরিকল্পনা বিভাগের উপসচিব ড. আছমা আক্তার জাহান ও মাজেদা ইয়াসমীন। এরপর ভিকটিম ও অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয় ৯ ডিসেম্বর।

এতে বলা হয়, ‘কর্মস্থলে অশালীন এবং অনৈতিক আচরণে লিপ্ত হওয়ায় তাদের অসদাচরণের প্রাথমিক সত্যতা তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে, যা সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০০৮ এর ২(খ) অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’ তাই বিধি মোতাবেক কেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না মর্মে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দিতে পৃথকভাবে দু’জনকে একই চিঠি দেয়া হয়।

এ বছর ৮ জানুয়ারি ভিকটিম লিখিতভাবে জবাব দেন। সেখানে চার পৃষ্ঠার লিখিত জবাবের শেষদিকে ভিকটিম বলেন, ‘তিনি কর্মস্থলে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। তাই যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের অভিযোগটি ‘যৌন হয়রানিমুক্ত শিক্ষা ও কর্মপরিবেশ তৈরিতে হাইকোর্টের প্রদত্ত নীতিমালায় প্রতিকার চান।


ঢাকা, ২০ অক্টোবর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//সিএস


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ