লাইভ প্রতিবেদক: ইডেন কলেজের ছাত্রী লুৎফুন্নাহার ওরফে লুমাকে নিরাপদ সড়ক দাবির আন্দোলনে ভিডিও ছড়িয়ে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ। ভিডিও ছড়িয়ে দেয়া ওই ছাত্রীর গায়ে গোলাপি রঙয়ের জামা ছিল। লুমারও গোলাপি জামা আছে।
ওই জামা পড়ে তিনি কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন এমনকি সাক্ষাতকারও দিয়েছেন। এনিয়ে ফেইসবুকে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনাও হয়েছে। তাই পুলিশেরও সন্দেহ হয় গোলাপি জামার সেই ছাত্রীটি লুমা হতে পারে। এমন ধারনা থেকেই লুমাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে গ্রেফতারের পর জানতে পারেন ভিডিও দিয়ে গুজব ছড়িয়ে দেয়া সেই মেয়েটি লুমা নয়।
তার দোষ, একটি গোলাপি রঙের সালোয়ার-কামিজ আছে। একই রকম সালোয়ার-কামিজ পরে কেউ একজন আওয়ামী লীগ অফিসে শিক্ষার্থী খুন ও ধর্ষণের গুজব ছড়িয়েছিলেন। তবে অজ্ঞাতনামা ওই মেয়েকে পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, ইডেন কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী লুৎফুন্নাহার সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের মঞ্চ বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক। শিক্ষার্থীদের ওই আন্দোলনে সরকারের অবস্থান ও ছাত্রলীগের হামলা নিয়ে তিনি বিভিন্ন সময় ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন।
গোলাপি রঙের সালোয়ার-কামিজ পরে শহীদ মিনারে দাঁড়িয়েছেন, টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তার সহযোদ্ধারা বলছেন, ৪ আগস্ট জিগাতলায় শিক্ষার্থীদের ওপর সরকারপন্থী সংগঠনগুলোর হামলার সময় খুন ও ধর্ষণ নিয়ে একই রকম পোশাক পরে এক নারী ভিডিও পোস্ট করেছিলেন।
এরপর থেকেই আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা লুৎফুন্নাহারকে নিয়ে ফেসবুকে গুজব ছড়াতে শুরু করেন। প্রতিটি ছবিতেই লুৎফুন্নাহারের পরনে ওই গোলাপি সালোয়ার-কামিজ।
লুৎফুন্নাহার অবশ্য আগে থেকেই আশঙ্কা করছিলেন, তাকে ফাঁসানো হবে। ৭ আগস্ট ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে তিনি বলেন, ‘এক মাসের বেশি সময় ধরে ঢাকার বাইরে আছি। অনলাইনে কখনো কোনো আজাইরা স্ট্যাটাস দিয়েছি কি না, মনে পড়ে না।...একটা যৌক্তিক আন্দোলনে সক্রিয় থাকায় কত শত মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে ফাঁসানোর ব্যর্থ চেষ্টায় তারা মত্ত। ছবি এডিট করতে হলেও যে ন্যূনতম জ্ঞানটুকু থাকা দরকার, সেটুকুও তাদের নেই।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকার-সমর্থক গোষ্ঠীগুলোর চাপে আসলে পুলিশ লুৎফুন্নাহারকে গ্রেপ্তার করে। তাকে গ্রেপ্তারে ঢাকা থেকে পুলিশের সাইবার অপরাধ বিভাগের একটি দল ও বেলকুচি থানা-পুলিশ অভিযান চালায়। সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থানার গ্রামের বাড়ি থেকে তারা লুৎফুন্নাহারকে তুলে আনে।
ঢাকায় আসার পর পুলিশ নিশ্চিত হয় ভিডিওটি লুৎফুন্নাহারের নয়। পরে তাকে রমনা থানার একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। বৃহস্পতিবার বিকেলে পুলিশ পাঁচ দিনের রিমান্ড চাইলে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।
রমনা থানায় দায়ের হওয়া মামলার এজাহারে পুলিশ বলেছে, ‘আসামির টাইমলাইনে পোস্টকৃত অশ্রাব্য স্ট্যাটাস দেখে যে কেউ নীতিভ্রষ্ট হতে পারে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।’ ওই এজাহারে আরও বলা হয়েছে, গোপন তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে লুৎফুন্নাহার অনেক সক্রিয়ভাবে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন।
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের সাইবার অপরাধ বিভাগ মামলাটির তদন্ত করছে।
সাইবার অপরাধের অতিরিক্ত উপকমিশনার নাজমুল ইসলাম বলেন, লুৎফুন্নাহার তার জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়েছেন। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় একটি বিশেষ পক্ষকে/এস্টাবলিশমেন্টকে সমালোচনা করেছেন ও অশ্রাব্য শব্দ ব্যবহার করেছেন। তার বক্তব্য গুজবের পক্ষে উসকানিমূলক ছিল।
তবে লুৎফুন্নাহারের ৪ তারিখের পোস্টে দেখা যায়, তিনি বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের ভূমিকার ব্যাপারে সমালোচনা করেছেন।
[সূত্র : প্রথমআলো]
ঢাকা, ১৭ আগস্ট (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমআই
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: