মৃদুল ব্যানার্জি: পুলিশের টেবিলে আট শতাধিক শিক্ষার্থীর তালিকা। ওই তালিকা ধরেই চলছে গোয়েন্দা নজরদারি। করছে গ্রেফতার। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে উস্কানি ও সহিংসতায় যারা জড়িত ছিল তাদের সন্ধানে মরিয়া হয়ে কাজ করছেন। অত্যন্ত গোপনীয়তা রক্ষা করে ওই কাজ চলছে বলেও জানিয়েছেন অনেক পদস্থ কর্মকর্তা। এই তালিকা তৈরী করা হয়েছে ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যম থেকে। এছাড়া উস্কানি ও গুজবের ছবি, ভয়েস, ভিডিও ও অডিও সংগ্রহ করে পুলিশ ও গোয়েন্দারা এই তালিকা তৈরী করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন স্থানে তারা সত্য মিথ্যা মিলিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উস্কে দিয়েছিল। তারা ছাত্রী ধর্ষণসহ বিভিন্ন গুজব রটিয়ে শিক্ষার্থীদের অহেতুক আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়। ফলে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মারমুখী হয়ে যায়। পুলিশ আরও জানায় ওই সুযোগে একদল স্বার্থান্বেষী মহল যোগ দেয় তাদের সঙ্গে। এসময় তারা বাস ও বিভিন্ন যানবাহনে ভাঙচুর শুরু করে দেয়।
আর তখনই পুলিশ ও হ্যালমেট বাহিনী যোগ দেয় তাদের দমনে। ফলে বেধে যায় সংঘাত ও সংঘর্ষ । পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ফেসবুসহ বিভিন্ন সামাজিক গণমাধ্যম থেকে তাদের আইডি ও ছবি শনাক্ত করে রাখে। আর ওই ছবি দেখেই উস্কানিদাতাদের গ্রেফতার করছে ধীরে ধীরে। আর একারণে শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে নানান আতঙ্ক। কে কখন গ্রেফতার হয় এনিয়েই চলছে আলোচনা-সমালোচনা। জানাগেছে এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে বিভিন্ন থানায়।
প্রসঙ্গত শহীদ রমিজ উদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের ঘটনায় গড়ে ওঠা ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনে সহিংস ঘটনা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উসকানির প্রেক্ষিতে বিভিন্ন থানায় এ পর্যন্ত ৫১টি মামলা করা হয়। এসব মামলায় প্রায় একশ (১০০) জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে দণ্ডবিধি ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা মোট ৪৩ মামলায় ৮১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে উস্কানিসহ বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে ২৯ জনকে আসামি করে দায়ের করা মোট ৮টি মামলায় ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ৮টি মামলার মধ্যে ৪টি মামলা ডিএমপি’র সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগ, একটি ডিবি পুলিশ এবং একটি থানা পুলিশ তদন্ত করছে।
পুলিশ জানিয়েছে সহিংস ঘটনা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উসকানির প্রেক্ষিতে রমনা বিভাগে মোট ১৪টি মামলা করা হয় এবং মোট ৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। যার মধ্যে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা হয় ১১টি। যেখানে গ্রেফতার করা হয় ২৩ জনকে এবং ৮৯ জনকে আসামি করে করা ৫টি মামলায় গ্রেফতার করা হয় ১৩ জনকে। ১৫টি মামলার মধ্যে ১৪ টির তদন্ত করছে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ ও ২টি মামলার তদন্তভার ডিবি পুলিশের উপর।
এদিকে লালবাগ বিভাগে একজনসহ অজ্ঞাতনামা ৬০/৬৫ জনকে আসামি করে ২টি মামলা করা হয়। মামলায় একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওয়ারী বিভাগে মামলা হয়েছে ২টি। অজ্ঞাতনামা ৩৯০/৪৯০ জনকে আসামি করে করা দুই মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে একজনকে। তাছাড়া মতিঝিল বিভাগে অজ্ঞাতনামা আসামি করে ৮টি মামলা করা হয়েছে। ৬টি মামলায় ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তেজগাঁও বিভাগে ৭ জনকে আসামি করে দুটি মামলা করা হয়েছে। যার মধ্যে ৩ জন এজাহারনামীয়সহ সন্দিগ্ধ আরও ৭/৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানাগেছে।
তাছাড়া মিরপুর বিভাগের মিরপুর মডেল থানায় বিইউবিটি ইউনিভার্সিটি ও কমার্স কলেজসহ অন্যান্য কলেজের অজ্ঞাতনামা প্রায় ৬০০ ছাত্র শিক্ষককে আসামি করে ১টি মামলা, অজ্ঞাতনামা প্রায় ৭০ জনকে আসামি করে কাফরুল থানায় ১টি মামলা এবং ৯৮ জনকে আসামি করে আরও ৪টিসহ মোট ৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশ আরও জানায় গুলশান বিভাগে অজ্ঞাতনামা ২২০০/২৪৫০ জনকে আসামি করে ৮টি মামলা এবং ৩১ জনকে আসামি করে আরও ২টি মামলাসহ মোট ৯টি মামলা করা হয়েছে। ৯টি মামলায় মোট ২৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
উত্তরা বিভাগে অজ্ঞাতনামা ১২০/১৫০ জনকে আসামি করে ৩টি মামলা এবং ১১৩ জনসহ অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে একটি মামলাসহ মোট ৪টি মামলা করা হয়েছে। মামলায় মোট ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে সংশ্লিস্টরা জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে পুলিশের ডিসি গনসংযোগ মাসুদুর রহমান ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, আমরা উস্কানীদাতাদের শনাক্ত করেই গ্রেফতার করছি। কাউকে হয়রানির কারণে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। তিনি আরও জানান, বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম থেকে তাদের আইডি ও ছবি শনাক্ত করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়া চলতে থাকবে।
ঢাকা, ১৫ আগস্ট (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমআই
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: